এনডিটিভি : ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার নেপথ্যে ভারতের নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের যড়যন্ত্র রয়েছে বলে মন্তব্য করে গ্রেপ্তার হয়েছেন দেশটির একজন বিধায়ক। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম থেকে ওই বিধায়ককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আসামের বিরোধী দল অল ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (এআইইউডিএফ) বিধায়ক আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ও গত মঙ্গলবার পেহেলগামে হামলার ঘটনাটিকে ‘‘সরকারের ষড়যন্ত্র’’ বলে দাবি করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ওই মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে যাওয়ার পর আসাম পুলিশ তদন্তে নামে। পরে আসামের এই বিধায়কের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে আসাম পুলিশ বলেছে, রাজ্যের ধিংয়ের বিধায়ক আমিনুল ইসলামের বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক মন্তব্যের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার এই মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় বিরূপ পরিস্থিতি তৈরির শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে তাকে আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, এআইইউডিএফ বিধায়ক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিশ্ব শর্মা বলেন, ‘‘আমরা সন্ত্রাসী হামলার পর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে যারা পাকিস্তানকে রক্ষার চেষ্টা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিধায়ক আমিনুল ইসলামের বিবৃতি ও ভিডিও খুঁজে পাওয়া গেছে। তাকে পাকিস্তানের সমর্থক বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারণে আমরা তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছি।
গ্রেপ্তারকৃত বিধায়ক আমিনুল ইসলামের রাজনৈতিক দল এআইইউডিএফের প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল বলেছেন, তার দল সরকারের পাশে আছে। তিনি বলেন, এটি আমাদের বক্তব্য নয়। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা সর্বদা সরকারের পাশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছি। সন্ত্রাসীদের কোনও ধর্ম নেই এবং যারা সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিয়েছেন তারা ইসলামের বিরুদ্ধে। তারা ইসলাম ও মুসলমানদের অপমান করছেন। আমিনুল ইসলামের বক্তব্য আমাদের বক্তব্য নয়।
এই হামলার ঘটনায় ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জড়িত উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভারতীয় নাগরিক সায়ক ঘোষ চৌধুরী। বুধবার কাশ্মীরে নিজের আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি। পোস্টে সায়ক ঘোষ বলেন ‘পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত করা হবে কি হবে না, আমার কাছে তুচ্ছ বিষয়।
আমি সাধারণভাবে বিশ্বাস করি না, অমিত শাহ-অজিত দোভালদের সাহায্য ছাড়া কোনো অস্ত্র বা অস্ত্র চালানোর লোক কাশ্মীরে ঢুকতে পারে। আগে তবুও অনেক জায়গা ছিল যেখান দিয়ে জঙ্গী ঢোকার সুযোগ ছিল। এখন প্রযুক্তির উন্নতির পরে সেই সব জায়গা অতি সহজেই নজরদারি করা যায়। আর আমি কার্গিল যুদ্ধের পরে কাশ্মীরে গেছি। আমি কোনোদিন শুনিনি, পর্যটকদের জঙ্গীরা হত্যা করে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমাকে মিলিটারি কমান্ডার বুঝিয়েছিলেন, জঙ্গীরাও পর্যটকদের আক্রমণ করে না। কাশ্মীর বেঁচে থাকে ট্যুরিজম এর ওপরে। ওদের টার্গেট আমরা। মানে কাশ্মীরের জঙ্গী আক্রমণের চরম পর্যায়তেও পর্যটকদের ওপরে আক্রমণের ঘটনা দেখিনি। আর পেহেলগাঁও-গুলমার্গ-শোনমার্গ মিলিটারি কভার এ মুড়ে রাখা হত। জঙ্গীরা কোন ধর্ম সেটা জিজ্ঞাসা করে হত্যা করছিল’, সেটাতেই বোঝা যায় যে প্ল্যানিং অনেক ওপর থেকে এসেছে।
যদি পাকিস্তান দায়ী থাকে (বালোচিস্তানের বদলা), তাহলে পাকিস্তান থেকে লোকদের ঢুকতে দিয়েছে যে মোদি সরকার, তাদের দায় নিতে হবে বই কি !‘নরেন্দ্র মোদি জঙ্গি হামলা বন্ধ করে দিয়েছেন’-এই দাবিটা তাহলে মিথ্যা ছিল?’ ভারতীয় এই নাগরিকের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে জয়েন্তা হালদার নামের এক ব্যক্তি লেখেন, ‘কেউ ভুলে যাবেন না, ভারত এখনো ব্রিটেনের ডোমিনিয়ান স্টেইট, আম বাগানের মাচায় মালিক নয় পাহারাদার বসানো হয়েছে।’
ভারতীয় নাগরিকের পোস্টকে সমর্থন জানিয়ে ব্যানার্জি তাপস লেখেন, ‘একশ ভাগ সহমত। আমার কথাটা বলে দিলেন।’ নেলেভো লেখেন, ‘জঙ্গি পাশের দেশ থেকে টপকে ঢুকেছে এটাই বা শিওর হচ্ছেন কী করে? প্রতিটা দেশেই স্লিপার সেল মজুত থাকে সেই দেশের বাসিন্দার ছদ্মবেশে। এখন উন্নত টেকনোলজির যুগে কেউ পাশের দেশ থেকে আসার রিস্ক নেয় না।
মাসুম লাসকার লেখেন, ‘এটা কিছুই না দেশের মধ্যে গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর চেষ্টা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে কিছু উগ্র থথথ খেপে ওঠে আর সুবিধাবাদী নেতা গুলো যাতে গদিতে থাকে।’ এবি মান্নান নামের আরেক ব্যক্তি লেখেন, কাশ্মীর হামলা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। এবং এটা বর্তমান ভারত সরকারের যে ব্যর্থতা সেটা ঢাকার জন্য একটা অপচেষ্টা মাত্র। প্রসঙ্গত, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করলেও তা তারা আংশিকভাবেই শাসন করে।
জম্মু-কাশ্মীরের ‘বৈসরান’ এলাকাটিকে স্থানীয়রা ভালোবেসে বলেন ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’। এলাকাটি পেহেলগাম থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার ওপরে অবস্থিত একটি মনোরম উপত্যকা। বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে এই এলাকা ভরে ওঠে দেশি-বিদেশি পর্যটকে।