এপি, রয়টার্স : গাজায় অন্তর্বর্তীকালীন শান্তিচুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। তারা উলটো সব জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ সমাপ্তিতে সামগ্রিক একটি চুক্তির দাবি জানিয়েছে। এরসঙ্গে, ইসরাইলে বন্দি থাকা ফিলিস্তিনীদের মুক্তি চেয়েছে তারা।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বার্তায় হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা খলিল আল-হায়া বলেছেন, এখন থেকে তারা আর কোনও অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তিতে সম্মত হবে না। হামাস বরং এখনই সামগ্রিক আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, গাজার পুনর্গঠন এবং ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সব বন্দি বিনিময়। বিশ্লেষকদের ধারণা, হামাসের এসব দাবি ইসরাইলের পক্ষ থেকে মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হতে পারে। আল-হায়া বলেছেন, ফিলিস্তিনীদের অনাহারে রেখে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এসব আংশিক চুক্তিতে দিয়ে ইসরাইলী সরকার তাদের আসল উদ্দেশ্য আড়ালে রাখে। কিন্তু স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজের জিম্মিদেরও বলি দিতেও পিছপা হবে না তারা। আমরা তাদের এই খেলার অংশ হব না। এদিকে, হামাসের দাবির সমালোচনা করে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট বলেছেন, হামাসের কথাবার্তায় এটা স্পষ্ট যে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের কোনও আগ্রহ নেই। তারা কেবল অনিঃশেষ নৃশংসতা জিইয়ে রাখতে আগ্রহী। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের শর্ত এখনও একই আছে- জিম্মিদের ছেড়ে না দিলে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। প্রায় ১৫ মাস যুদ্ধ চলার পর গত জানুয়ারিতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে এক সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে দুমাস যেতে না যেতেই তা ভেঙে পড়ে। এরপর থেকেই তা পুনরায় কার্যকর করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা। তবে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে সে চেষ্টায় তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি। ফিলিস্তিনী ও মিসরীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর এবং ইসরাইলী জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে গত সোমবার কায়রোতে আয়োজিত বৈঠক তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। ইসরাইল ৪৫ দিনের জন্য গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের যুক্তি ছিল, এই বিরতিতে অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্তির সুযোগ তৈরি হবে এবং পরবর্তীতে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে পরোক্ষ আলোচনা শুরু করা যাবে। অবশ্য, ইতোমধ্যেই ইসরাইলের অস্ত্রসমর্পণের শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। তাদের দাবি, কেবল যুদ্ধ সমাপ্তির একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তির অংশ হিসেবেই বাকি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত হিসেবে ৩৮ জন বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছেলি হামাস। তাদের দাবি ছিল যুদ্ধ অবসানের বিষয়ে আলোচনা কিন্তু ইসরাইল প্রস্তাব করে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধি। এ নিয়ে বাদানুবাদ থেকে গত একমাস ধরে গাজায় আবার হামলা শুরু করেছে তেল আবিব। তাদের দাবি, বাকি ৫৯ জিম্মি এবং গাজা নিরস্ত্রীকৃত হলেই তারা কেবল ক্ষান্ত দেবে। ইসরাইলের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে হামাস বলে আসছে, কেবল সামগ্রিক যুদ্ধ সমাপ্তির নিশ্চয়তা পেলেই তারা জিম্মি মুক্তি ও অস্ত্রত্যাগের শর্ত মেনে নেবে।