রয়টার্স : কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ভারত। আর এতে উদ্বেগ বাড়ছে পাকিস্তানে। পাকিস্তানি এক কৃষক হোমলা ঠাকুরের প্রায় ৫ একর জমি দক্ষিণ-পূর্ব সিন্ধু প্রদেশের লতিফাবাদ এলাকায়। এখানে সিন্ধু নদী তিব্বত থেকে উৎপত্তি হয়ে ভারত অতিক্রম করে আরব সাগরে পতিত হয়। এই হোমলা ঠাকুর বলেন, গ্রীষ্মকালে এমনিতেই নদীর পানি অনেক কমে গেছে। তার ওপর আর ভারত উজানে পানি সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ৪০ বছর বয়সী ঠাকুর বলেন, যদি তারা পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে সবকিছু থর মরুভূমিতে পরিণত হবে। আমরা না খেয়ে মরবো।’ ঠাকুরের আশঙ্কার প্রতিধ্বনি মেলে আরও ১৫ জনেরও বেশি পাকিস্তানি কৃষক ও বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের কথায়, বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায়। ভারত ১৯৬০ সালের বিশ্বব্যাংক-নিয়ন্ত্রিত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। এই চুক্তিটির মাধ্যমে সিন্ধু নদীর পানি পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে। অথচ ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই স্থগিতাদেশ চলবে যতক্ষণ না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেওয়া পুরোপুরি ও অপরিবর্তনীয়ভাবে প্রত্যাহার করে। ভারত বলেছে, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলা চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যাকারী তিন জঙ্গির মধ্যে দুইজন পাকিস্তানের।

ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, ‘পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত পানি বন্ধ বা সরানোর যেকোনও প্রচেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য হবে। চুক্তিটির মাধ্যমে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ সিন্ধু ও তার উপনদীগুলোর পানি ভাগ করে নেয়।

উভয় দেশের সরকারি কর্মকর্তারা এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত তাৎক্ষণিকভাবে পানি প্রবাহ বন্ধ করতে পারবে না। কারণ চুক্তি অনুসারে তারা শুধু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করতে পারে, বড় কোনও জলাধার বা বাঁধ নয়। তবে কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। কারণ ভারতের জলসম্পদমন্ত্রী চন্দ্রকান্ত রঘুনাথ পাটিল বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করবো, সিন্ধু নদীর এক ফোঁটা পানিও যেন পাকিস্তানে না পৌঁছায়।’ সংবেদনশীল বিষয় হওয়ায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত কয়েক মাসের মধ্যে খাল ব্যবহার করে নিজস্ব কৃষিকাজের জন্য পানি সরিয়ে নিতে শুরু করতে পারে এবং পাশাপাশি ৪ থেকে ৭ বছরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় জল কমিশনের সাবেক প্রধান কুশভিন্দর ভোরা জানিয়েছেন, তাৎক্ষণিকভাবে ভারত নদীগুলোর বিভিন্ন স্থানে পানির প্রবাহ সম্পর্কিত তথ্য ভাগাভাগি করা বন্ধ করবে, বন্যা সতর্কতা স্থগিত করবে এবং সিন্ধুর স্থায়ী কমিশনের বার্ষিক সভাগুলো এড়িয়ে চলবে। পাকিস্তানের কাছে তখন আর তথ্য থাকবে না যে পানি কখন আসছে, কতটা আসছে। আর তথ্য ছাড়া তারা পরিকল্পনা করতে পারবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এটি শুধু কৃষিকাজেই নয়, পানি ঘাটতি বিদ্যুৎ উৎপাদনেও আঘাত হানবে এবং সম্ভবত অর্থনীতিকেও বিপর্যস্ত করবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। যুক্তরাজ্যের পরামর্শক সংস্থা অক্সফোর্ড পলিসি ম্যানেজমেন্টের অর্থনীতিবিদ ও টিম লিড ভাকার আহমেদ বলেছেন, পাকিস্তান ভারতের চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকিকে অবমূল্যায়ন করেছে। তিনি বলেন, ‘ভারতের তাৎক্ষণিক কোনো অবকাঠামো নেই পানিপ্রবাহ থামানোর জন্য, বিশেষ করে বন্যার সময়, তাই এই সময়টি পাকিস্তানের জন্য পানিখাতে অকার্যকারিতা ও অপচয় মোকাবিলার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার চুক্তিটি পুনরায় আলোচনা করার চেষ্টা করছে এবং দুই দেশ হেগের স্থায়ী সালিশি আদালতে কিশনগঙ্গা ও রাটলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পানির সংরক্ষণ ক্ষেত্রের আকার নিয়ে কিছু বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা চালাচ্ছে।