ইসরাইলী হামলায় নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার একদিন পরই আরও দুই পণবন্দীর লাশ হস্তান্তর করেছে হামাস। ইসরাইলী সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) জানানো হয়, আমিরাম কুপার এবং সাহার বারুচ নামের দুই জিম্মির লাশ ফেরত দেওয়া হয়েছে। দ্য টাইমস অব ইসরাইল, রয়টার্স।

চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, জীবিত ও লাশ জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইল ধাপে ধাপে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনী বন্দি ও আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দিয়েছে। সামরিক অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধ এবং গাজায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ২৮ জন মৃত জিম্মির লাশ ফেরত দেবে এবং বিনিময়ে ৩৬০ জন ফিলিস্তিনী যোদ্ধার লাশ পাবে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হামাস ১৫ জনের লাশ হস্তান্তর করেছে। ইসরাইলের অভিযোগ, খুবই ধীরগতিতে লাশ হস্তান্তরের কাজ করছে হামাস। তবে সাফাই গেয়ে হামাস বলছে, ধ্বংসস্তূপে লাশ শনাক্ত ও উদ্ধারে সময় লাগছে।

কিছু বন্দির পরিবারের সদস্যরা লাশ ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা চান, প্রিয়জনদের যথাযথ দাফনের সুযোগ অন্তত মিলুক। গাজায় নিখোঁজ হাজারো ফিলিস্তিনী ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হয়।

জেরুজালেমের প্রবেশপথ অবরোধ করে ২ লাখ ইহুদির বিক্ষোভ

বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগের পরিকল্পনার প্রতিবাদে ইসরাইলের রাজধানী জেরুজালেমে ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশটির কট্টর রক্ষণশীল (আল্ট্রা অর্থোডক্স) ইহুদিরা। গত বৃহস্পতিবার প্রায় দুই লাখ হারেদি ইহুদি শহরের প্রধান প্রবেশপথ অবরোধ করে এই বিক্ষোভে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা ঐতিহ্যবাহী কালো পোশাক ও টুপি পরে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিলে অংশ নেয়। এ সময় তারা গান গেয়ে আর হাতে তালি দিয়ে স্লোগানে স্লোগানে বলেন, তারা জেলে যাবে তবুও সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে না। ধর্মগ্রন্থ তোরা অধ্যয়ন করাই তাদের প্রধান কাজ। বিক্ষোভে বিভিন্ন প্রতিবাদ লেখা ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। তাতে লেখা ছিল, ‘তোরা-র (ধর্মগ্রন্থ) পক্ষে জনগণ’ ও ‘ইয়েশিভা (ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান) বন্ধ মানে ইহুদিবাদের মৃত্যু’। বিক্ষোভের সময় কিছু স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এতে শহরের বিভিন্ন অংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

নেতানিয়াহু সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার প্রায় দুই লাখ পুরুষ বিক্ষোভে যোগ দেন। ২০১৪ সালের পর প্রথমবার হারেদি সম্প্রদায়ের সব শাখা ‘মার্চ অব দ্য মিলিয়ন’ নামে এ বিক্ষোভে অংশ নেয়। ইসরাইলে প্রায় ১৩ লক্ষ কট্টর রক্ষণশীল ইহুদি রয়েছে যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ। এরা সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিরোধিতা করছে কারণ তাদের বিশ্বাস, মাদরাসায় পূর্ণকালীন পড়াশোনা করাই তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, যারা পূর্ণ সময় ধর্মীয় পাঠে নিয়োজিত থাকবে তারা সেনাবাহিনীতে যোগদান থেকে অব্যাহতি পাবে। তবে গত বছর (২০২৪) অন্য সব নাগরিকের মতো কট্টর রক্ষণশীল যুবকদেরও সেনাবাহিনী অংশ নিতে হবে বলে রায় দেয় ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্ট।কিন্তু এই রায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জোট সরকারের জন্য বড় সংকট তৈরি করে। এই আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে গত জুলাই মাসে কট্টর রক্ষণশীল দল ইউনাইটেড তোরা জুডাইজম (ইউটিজে) জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট ইসরাইলের ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে।

ইসরাইলী বাহিনীকে প্রতিহতের নির্দেশ লেবানিজ প্রেসিডেন্টের

দক্ষিণ লেবাননে অভিযান চালিয়ে গত বুধবার গভীর রাতে এক পৌর কর্মীকে হত্যা করেছে ইসরাইলী সেনারা। এ ঘটনার পর সেনাবাহিনীকে যেকোনো ইসরাইলী আগ্রাসন প্রতিহতে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন।

জানিয়েছে, ড্রোন ও সাঁজোয়া যানসহ ইসরাইলী বাহিনী ব্লিদায় প্রবেশ করে এবং পৌরসভা ভবনে অভিযান চালায়। সেখানে ঘুমিয়ে থাকা ইব্রাহিম সালামেহকে গুলী করে হত্যা করা হয়। ইসরাইলী সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ধ্বংসের’ লক্ষ্যে অভিযান চালিয়েছে। তবে ওই ভবনটি হিজবুল্লাহ ব্যবহার করছিল এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি ইসরাইলী সেনারা। সেনাবাহিনীর দাবি, ভবনের ভেতরে এক ‘সন্দেহভাজনের’ মুখোমুখি হলে তাৎক্ষণিক হুমকি শনাক্ত করে গুলী চালানো হয়। তবে সালামেহ লক্ষ্যবস্তু ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। ইসরাইলের অভিযান নিয়ে লেবাননে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গত গত নবেম্বরে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু প্রায়ই ইসরাইলী সেনারা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে লেবাননে হামলা চালায়।

গত রাতের ঘটনার পর লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন সেনাবাহিনীর কমান্ডারকে দক্ষিণ সীমান্তে যেকোনো ইসরাইলী অনুপ্রবেশ প্রতিহত করার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম ইসরাইলের হামলায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসরাইলের হামলা লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নগ্ন লঙ্ঘন। ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে ব্লিদা ও আশপাশের শহরগুলোতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে ইসরাইলী আগ্রাসন ও রাষ্ট্রের নাগরিক সুরক্ষায় ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানান। মেহের নিউজ, এনএনএ।