রয়টার্স,বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, ফ্রান্স২৪: অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত হারবার ব্রিজে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছে হাজারো মানুষ। রবিবার প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মিছিলে যোগ দিয়েছেন এই বিক্ষোভকারী। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় শান্তি ও ত্রাণ সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। কারণ গাজার মানবিক সংকট ক্রমাগতভাবে আরও খারাপ হচ্ছে। মিছিলে অংশ নেওয়া কিছু মানুষ ক্ষুধার প্রতীক হিসেবে হাড়ি-পাতিল বহন করছিল। বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজকেরা একে ‘মানবতার মিছিল’ নামে অভিহিত করেছে। মিছিলে অংশ নেওয়া ৬০ বছর বয়সী ধবধবে সাদা চুলের এক ব্যক্তি বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। যখন সারা বিশ্বের মানুষ একত্রিত হয়ে আওয়াজ তোলে,তখন মন্দ শক্তিকে পরাজিত করা যায়।’ মিছিলে বয়স্ক থেকে শুরু করে ছোট শিশুদেরসহ পরিবারের নানা বয়সী মানুষ অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ছিলেন উইকিলিকস এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। অনেকেই ছাতা নিয়ে এসেছিলেন। কেউ কেউ ফিলিস্তিনি পতাকা উড়াচ্ছিলেন এবং স্লোগান দিচ্ছিলেন “আমরা সবাই ফিলিস্তিনি”।

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ ও রাজ্যের প্রধান গত সপ্তাহে ব্রিজের ওপর মিছিল নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। এই ব্রিজ শহরের অন্যতম প্রতীক এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ রুট। তিনি বলেছিলেন, এই রুটে মিছিল জননিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং পরিবহণ ব্যাহত করতে পারে। কিন্তু রাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট শনিবার রায় দেয় যে, মিছিলটি চলতে পারবে। পুলিশ জানিয়েছে,তারা শত শত সদস্য মোতায়েন করেছে এবং মিছিলকারীদের শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

মেলবোর্নেও একই ধরনের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্রান্স এবং কানাডা ঘোষণা দিয়েছে যে তারা একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। ব্রিটেন বলেছে, যদি ইসরায়েল মানবিক সংকটের সমাধান না করে এবং যুদ্ধবিরতিতে না পৌঁছায়, তাহলে তারাও স্বীকৃতি দেবে। ইসরায়েল অবশ্য পশ্চিমা এই দেশগুলোর সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাস ইসরায়েলের ওপর হামলা চালানোর পর, ইসরায়েল পালটা আক্রমণ শুরু করে। এই হামলা গাজার অধিকাংশ অঞ্চল ধ্বংস করে দেয়। প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, গাজায় অন্তত ৬০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

যোগ দিলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ : ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভে যোগ দিলেন আলোচিত ব্যক্তিত্ব উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। রবিবার হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীর সঙ্গে সিডনির হারবার ব্রিজ অতিক্রম করেন তিনি। এই বিক্ষোভের ফলে বিশ্ববিখ্যাত এই সেতুটি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর উচ্চ-নিরাপত্তা সম্পন্ন ব্রিটিশ কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসা অ্যাসাঞ্জকে পরিবার পরিবেষ্টিত অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধানমন্ত্রী বব কারের সাথে মিছিল করতে দেখা গেছে। গাজায় অপুষ্টি ও মানবিক সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও সমালোচনা বাড়ার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডা কিছুটা শর্তসাপেক্ষে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। অস্ট্রেলিয়া গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি।