এনএনএ ,রয়টার্স,আলজাজিরা: বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন বাড়লেও গাজায় গণহত্যা থামছে না। প্রতিদিনই উপত্যকায় বোমা ফেলে, গুলী করে ও অভুক্ত রেখে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরায়েল। ১০ লাখ বাসিন্দার গাজা সিটিতে ব্যাপক হামলার পর দলে দলে লোকজন দক্ষিণের দিকে চলে যাচ্ছেন। খাদ্য ও পানির ব্যাপক ঘাটতির কারণে অনাহারে মৃত্যু বাড়ছে। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও তাৎক্ষণিকভাবে তারা গাজার গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে পারছে না। গাজা সিটির আল-রানতিসি ও এসটি জন হাসপাতালের আশপাশে সোমবার ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে হাসাপাতাল দুটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

আল-রানতিসি শিশু হাসপাতালটিতে সরাসরি বোমা হামলা হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, উপত্যকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হচ্ছে। এটা উপত্যকায় গণহত্যা প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার অংশ। ইসরায়েলের হামলায় গাজা গতকাল সোমবার এক দিনে আরও ৬১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২২০ জন। এতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৩৪৪ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৬ হাজার ৭৯৫ জন। গতকাল গাজা সিটির তাল আল-হাওয়া উপকণ্ঠে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে ওই এলাকায় ব্যাপক ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।

গাজার সমর্থনে ইতালিতে ব্যাপক বিক্ষোভ: গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ইতালিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, রোম ও মিলান শহরে এ বিক্ষোভ চলাকালে রেল ও গণপরিবহন সেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। অনেক স্থানে এক ঘণ্টার বেশি সময় বিলম্বিত হয় ট্রেন। বিভিন্ন এলাকায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা ‘শিশুহত্যা আত্মরক্ষা নয়’, ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

গণহত্যা বন্ধের জন্য স্বীকৃতি যথেষ্ট নয়, বলছেন বিশ্লেষক: বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে আরও পদক্ষেপ দরকার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের পরিচালক ক্রিস ডয়েল বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের তুলনায় যথেষ্ট নয়। আলজাজিরার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান সংখ্যক দেশ ফিলিস্তিনিদের জাতীয়তা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। কিন্তু এসব দেশই গণহত্যা বন্ধ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে। আর এটাই ঘটছে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের নৃশংসতা বন্ধ করার জন্য নিষেধাজ্ঞার মতো আরও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

লেবাননে হামলায় নিহত ৫: লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের বিনতে জবেইল শহরে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় তিন শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গত নভেম্বরে মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই প্রতিবেশী দেশগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা গত রোববার জানায়, এ হামলায় একটি মোটরসাইকেল এবং একটি গাড়ি লক্ষ্য করা হয়েছে এবং আরও দুজন আহত হয়েছে। লেবাননের পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরি বলেন, তিন শিশু– যাদের নাম সেলিন, হাদি ও আসিল এবং তাদের বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নিহত হয়েছেন। হামলায় শিশুদের মা আহত হন। জানায়, তবে তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল থাকলেও নিহত পাঁচজন মার্কিন নাগরিক ছিলেন না।