রয়টার্স : ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় জবাব দিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়, সেটির নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’। এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রী, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ জানান, এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা’। পাকিস্তানের ৯টি স্থানে হামলার দাবি ভারতের গতকাল বুধবার এক ব্রিফিংয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি জানান, এই অভিযানে মোট ৯টি স্থানে আঘাত হানা হয়—পাকিস্তানে ৪টি এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ৫টি। পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, সিয়ালকোটের সারজাল ও মাহমুনা জোয়ায় জইশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তইয়বা ও হিজবুল মুজাহিদিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলো ছিল। সিয়ালকোটের সারজাল ঘাঁটি, যা পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত, মার্চ ২০২৫-এ জম্মু ও কাশ্মীরে ৪ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। মাহমুনা জোয়া ঘাঁটিকে ২০১৬ সালের পাঠানকোট হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি প্রধান হিজবুল মুজাহিদিন ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একইসঙ্গে মুম্বাই হামলার (২০০৮) পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত মুরিদকে’র ‘মারকাজ তাইবা’ ঘাঁটিও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতশাসিত কাশ্মীরে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে ৪০ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করে জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম)। ওই হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছিল।

বিমানের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা : কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে ভারত। গতকাল বুধবার গভীর রাতে পরিচালিত এই হামলার জবাবে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। তবে ভূপাতিত বিমানে সংখ্যা নিয়ে দুদেশের দাবিতে ফারাক রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জম্মু ও কাশ্মীরের চারজন স্থানীয় সরকার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে তিনটি যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানে নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি গুড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানানোর কয়েকঘণ্টা পর এই তথ্য পাওয়া গেল। এর আগে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানান, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারতের দিক থেকে এই দাবির পক্ষে বা বিপক্ষে বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানকে জড়িত থাকার জন্য দায়ী করেছে ভারত সরকার। সেই প্রেক্ষাপটেই এই হামলা শুরু হয়।

এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে সিঁদুর অভিযান। সিঁদুর হচ্ছে বিবাহিত সনাতনী নারীদের একরকম অনুষঙ্গ। লাল রঙের গুঁড়ো সিঁথিতে ব্যবহার করা হয়। কাশ্মীরের সন্ত্রাসী হামলায় একাধিক পুরুষকে হত্যা করায় অনেক নারী স্বামীহারা হয়েছেন। সম্ভবত এই ঘটনা এবং সনাতন দেবী কালীর শাস্তির প্রতি ইঙ্গিত করতে অভিযানের নাম সিঁদুর রাখা হয়েছে।