ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযান জোরদার করেছে ইসরাইলী সেনারা। উপত্যকাটিতে সারাদিনে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় শিশু ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৭৮ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩২ জনই খাদ্য সহায়তাপ্রার্থী। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অনেকে। গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনীকে দক্ষিণে জোরপূর্বক সরিয়ে দিতে অভিযান জোরদার করেছে ইসরাইল। রোববার ভোর থেকে সারা গাজা উপত্যকায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে ৩২ জন খাদ্য সংগ্রহে বের হয়েছিলেন। আল-জাজিরা,

ফিলিস্তিনী সিভিল ডিফেন্স জানায়, রোববার ইসরাইলী গোলাবর্ষণে আল-কুদস হাসপাতালের কাছে তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। রিমাল এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও তিনজন আহত হন।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা অভিযোগ করেন, আবাসিক এলাকায় ইসরাইলী সেনারা ‘বিস্ফোরক রোবট’ ব্যবহার করছে এবং জোরপূর্বক মানুষ সরিয়ে দিচ্ছে।

তিনি জানান, গত তিন সপ্তাহে অন্তত ৮০টি বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এটিকে তিনি ‘ভূমি পোড়াও নীতি’ আখ্যা দেন।

আল-থাওয়াবতা বলেন, ধ্বংস ও দুর্ভিক্ষ সত্ত্বেও গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলের ১০ লাখেরও বেশি মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার নীতি মানতে অস্বীকার করছে।

আগস্টের শুরু থেকে গাজা সিটিতে নিরবচ্ছিন্ন গোলাবর্ষণ চালাচ্ছে ইসরাইলী সেনারা। গত শুক্রবার তারা শহরটিকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ ঘোষণা করে এবং নতুন আক্রমণ শুরুর কথা জানায়।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ রোববার জানান, নিরবচ্ছিন্ন গোলাবর্ষণ ও বুলডোজার দিয়ে আবাসিক এলাকা ধ্বংস করে গাজা সিটিকে ‘ধ্বংসস্তূপের মাঠে’ পরিণত করছে ইসরাইল।

তিনি বলেন, ‘সেখানে তেমন কোনো যুদ্ধ নেই, শুধু ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। মানুষ পালাতেও পারছে না, কারণ কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই। ’

রোববার ইসরাইলী হামলায় আরও এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আল-কুদস আল-ইয়াওম টিভির সাংবাদিক ইসলাম আবেদকে গাজা সিটিতে হত্যা করা হয়।

গাজার গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২৪৭ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অন্য হিসাবে এই সংখ্যা ২৭০ জনেরও বেশি। সোমবার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরাইলী হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হন, এর মধ্যে পাঁচজন ছিলেন সাংবাদিক।

নিজেদের ছোঁড়া গুলীতে প্রাণ গেল ইসরাইলী সেনার

টাইমস অব ইসরাইল : নিজেদের ছোঁড়া গুলিতে এবার প্রাণ গেল এক রিজার্ভ ইসরাইলী সেনার। দুর্ঘটনাবশত এক আইডিএফ সদস্যের গুলিতে নিহত হন তিনি।

গত শনিবার দক্ষিণ গাজায় এই ঘটনা হয়। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরাইলী গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল।

নিহত ইসরাইলী সেনার নাম অ্যারিয়েল লুবলিনার। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সার্জেন্ট ফার্স্ট ক্লাস হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১০ বছর আগে ব্রাজিল ছেড়ে ইসরাইলে পাড়ি জমান অ্যারিয়েল লুবলিনার। এ নিয়ে গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর নিহত ইসরাইলী সেনার সংখ্যা দাঁড়ালো ৯০০ জনে। আর আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে কয়েক হাজার।

ইসরাইলী অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখে ফের নৌ অভিযান শুরু

ইসরাইলী অবরোধ ভাঙতে স্পেনের বার্সেলোনা থেকে রোববার নৌ অভিযান ‘ফামিলিয়া’ যাত্রা শুরু করেছে। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হলো ‘গাজার ওপর ইসরাইলের অবৈধ অবরোধ ভাঙা’।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় প্রায় বিকেল ৩:৩০টায় নৌকাগুলো বন্দরের বাইরে ছাড়তে শুরু করে। নৌকাযাত্রার সময় সেখানে হাজারো কর্মী, সমর্থক এবং শুভাকাক্সক্ষী উপস্থিত ছিলেন।

নৌ অভিযানের আগে সুইডিশ কর্মী ও পরিবেশবাদী গ্রেটা থুনবার্গ ইসরাইলের ফিলিস্তিন নিধন নীতি তীব্র সমালোচনা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ইসরাইল স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিন জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করছে। তারা গাজা অঞ্চলে দখল করার পরিকল্পনা করছে। রাজনৈতিক ও সরকারি কর্তারা আন্তর্জাতিক আইন পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।’

বার্সেলোনায় থাকা ফিলিস্তিনী কর্মী সাইফ আবুকেশেক বলেন, ‘ফিলিস্তিনীদের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য একটি সরকার খাবারের অভাব সৃষ্টি করছে। প্রতিদিন শিশু, পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

নৌ অভিযানটি শুরু হয়েছে এমন সময় যখন জাতিসংঘ গাজায় ক্ষুধার্ত পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে। ইসরাইল গাজা শহর দখল এবং প্রায় এক মিলিয়ন ফিলিস্তিনীকে জোরপূর্বক স্থানান্তর করার পরিকল্পনা জোরদার করছে।

‘আমরা আবার ফিরে আসব’

গ্লোবাল সুমুদ নৌ অভিযান একটি স্বাধীন উদ্যোগ, কোনও সরকার বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। অভিযানে ৪৪টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন এবং গ্রীস, ইতালি ও টিউনিসিয়ার অন্যান্য বন্দর থেকে আরও নৌকা যুক্ত হবে।

অভিযানটি মধ্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে গাজার বন্দরে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। অভিযানে অংশ নেবেন বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা, ইউরোপীয় সংসদ সদস্য এবং জনসাধারণের পরিচিত ব্যক্তিত্ব।

পর্তুগিজ বামপন্থি সংসদ সদস্য মারিয়ানা মর্টাগুয়া বলেন, ‘এই অভিযান আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বৈধ।’

এর আগে জুনে ১২ জন সক্রিয়কর্মীকে মাডলিন নৌকায় গাজায় যাওয়ার চেষ্টা করা হলে ইসরাইলের নৌসেনারা আটক করে এবং বহিষ্কার করে। জুলাই মাসে আরও ২১ জনকে হান্দালা নৌকায় আটক করা হয়।

নৌ অভিযানটির অন্যতম উদ্যোক্তা ইয়াসেমিন আকর বলেছেন, ‘আমরা পূর্বে মাদলিন ও হান্দালা নৌকায় গিয়েছিলাম, তবে ইসরাইল তা আটক করেছে। তবে আমরা ঘোষণা করেছি, আমরা আবার ফিরে আসব।’

দোহা ইনস্টিটিউটের মোহাম্মদ এলমাসরি আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘এই নৌ অভিযান একটি প্রতীকী প্রতিরোধ, যা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করবে। যদিও শেষ পর্যন্ত ইসরাইল নৌকাগুলো আটক বা ফিরিয়ে দিতে পারে, তবে ক্ষুধা দূর করতে সরকারগুলোকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।’