আল-জাজিরা, রয়টার্স : দখলদার ইসরাইলের হামলায় গাজায় প্রতিদিনই নারী ও শিশুদের মৃত্যু হচ্ছে। যারমধ্যে গত শনিবার নামা শাওয়ান নামে এক নারীর দুই সন্তান ইসরাইলী বিমান হামলায় প্রাণ হারান। তারা খান ইউনিসের ইউরোপীয়ান হাসপাতালের কাছে রুটির খোঁজে গিয়েছিল।

দখলদারদের হামলায় মৃত্যু হওয়ার পর তার সন্তানদের মরদেহ উদ্ধার সম্ভব হয়নি। নিজের সন্তানদের হারানোর পর নতুন চিন্তায় পড়েছেন এ নারী। তার আশঙ্কা লাশ উদ্ধার করা না গেলে রাস্তার কুকুর এগুলো খুবলে খাবে। এখন তার একমাত্র চাওয়া সন্তানদের কবরস্থ করবেন।

ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে ওঠে আসে এ নারীর করুণ আর্তনাদ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা সানাদ ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে নারীটি কেঁদে কেঁদে বলছেন, “আমার সন্তানদের আমাকে এনে দিন। আমি তাদের কবর দিতে চাই। তারা নিরপরাধ শিশু। তাদের লাশ নয়ত কুকুর খুবলে খাবে। তারা মারা গেছে কিন্তু আমি ধৈর্য্য ধরে আছি। কিন্তু আমি আমার সন্তানদের কবর দিতে চাই। আমাকে আমার সন্তানদের এনে দিন।”

দখলদার ইসরাইল গাজার নারী ও শিশুদের হত্যা করলেও কখনো এটি তারা প্রকাশ করে না। ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজায় হামলার যেসব বিবৃতি প্রকাশ করে; সেগুলোতে বলা হয় হামাসের অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু নিরীহ নারী ও শিশুরা যে তাদের বর্বরতায় প্রাণ হারিয়েছে সেটি স্বীকার করে না।

দখলদারদের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যারমধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

নেতানিয়াহুকে পণবন্দীদের স্বজনদের জিজ্ঞাসা

গাজা যুদ্ধ ও হামাসের হাতে থাকা পণবন্দীদের কেন্দ্র করে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জনমত দিনকে দিন জোরালো হচ্ছে। পণবন্দীদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, গাজায় সেনা অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধি করায় পণবন্দীদের মুক্তির সম্ভাবনা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

গত শনিবার তেল আবিব, শার হানেগেভ জাংশন, কিরিয়াত গাত এবং জেরুসালেমের রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন জিম্মি ও নিখোঁজ পরিবার পরিষদের সদস্যরা। নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ করে বলেন, তাদের স্বজনদের মুক্তির বদলে যুদ্ধ নিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার।

এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, আবার আলোচনা শুরুর জন্য আপনাদের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি। সব পণবন্দী ঘরে ফেরার আগ পর্যন্ত আলোচনা থামাবেন না।

বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন জিম্মি মাতান ঝানগাউকারের মা এইনাভ ঝানগাউকার। তিনি দ্বিধাহীনভাবে বলেন, বলুন দেখি প্রধানমন্ত্রী, আপনি রাতে ঘুমান কীভাবে আর সকালে ঘুম থেকে ওঠেনই বা কীভাবে? ৫৮ জন পণবন্দীকে ত্যাগ করে আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে পারেন?

পণবন্দীদের স্বজনরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন, যখন মেজর জেনারেল ডেভিড জিনিকে ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয়। ইসরাইলী চ্যানেল টুয়েলভের খবরে জানানো হয়, একাধিক সামরিক বৈঠকে বন্দীবিনিময় চুক্তির বিরোধিতা করেছেন জিনি। তার মতে, গাজা যুদ্ধ একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া।

এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক বিবৃতিতে বিক্ষোভকারীরা বলেন, জিনি যদি সত্যিই এমন কথা বলে থাকেন, তাহলে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ভীতিকর। যুদ্ধের পক্ষে এবং পণবন্দীদের নিয়ে যার মাথাব্যথা নেই, এমন এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া পুরো ইসরাইল জাতির প্রতি অন্যায়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার জর্ডান প্রতিনিধি হামদা সালহুত বলেন, জিনি সামরিক চাপ ও যুদ্ধের মাত্রা বৃদ্ধির পক্ষে থাকার কারণেই তাকে মনোনীত করেছেন নেতানিয়াহু।

জিম্মিদের স্বজনদের আশঙ্কা, হামলা অব্যাহত থাকলে বেঁচে থাকা জিম্মিরাও প্রাণ হারাবেন। এদিকে, ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থি সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নেতানিয়াহু, যার বড় অংশই যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে।