এনডিটিভি : টানা কয়েকদিন ধরে ইরান ও ইসরাইলের হামলা ও পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। গত শুক্রবার ভোরে তেহরানসহ ইরানের বেশ কিছু স্থানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরাইল বিমান হামলা চালায়।
পরে তীব্র শক্তি নিয়ে ইসরাইলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরানও। দফায় দফায় এই হামলা ও পাল্টা হামলার মধ্যেই শঙ্কা বাড়ছে ইসরাইলের পারমাণবিক হামলার। তবে তেমন কিছু হলে, অর্থাৎ ইসরাইল ইরানে পারমাণবিক হামলা করলে পাকিস্তানও পরমাণু বোমা ব্যবহার করবে বলে দাবি করেছেন ইরানের একজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা।
পাকিস্তান এ বিষয়ে ইরানকে আশ্বস্ত করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর মধ্যেই বিধ্বংসী তথ্য সামনে এনেছেন ইরানের এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। তিনি দাবি করেছেন, ইসরাইল যদি ইরানের ওপর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে পাকিস্তান ইসরাইলের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলা চালাবে।
এই মন্তব্য করেছেন জেনারেল মহসেন রেজায়ি। তিনি ইরানের এলিট বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এবং দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য।
ইরানি টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল মহসেন রেজায়ি বলেন, “পাকিস্তান আমাদের আশ্বস্ত করেছে, যদি ইসরাইল পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে, তাহলে তারা ইসরাইলের ওপর পারমাণবিক হামলা চালাবে।”
এই বক্তব্য তিনি দিয়েছেন এমন এক সময়ে, যখন ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত দুই দেশের প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছেন। জেনারেল রেজায়ি আরও দাবি করেন, “পাকিস্তান ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের ডাক দিয়েছে। তেহরান এখনও অনেক গোপন শক্তি প্রকাশ করেনি।”
তবে পাকিস্তান এখন পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। কিন্তু দেশটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। বিশ্বের মাত্র ৯টি দেশের কাছে বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র আছে এবং ইসরাইল ও পাকিস্তান উভয়ই সেই তালিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সংস্থা আইসিএএন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে ইরানকে দেওয়া পাকিস্তানের এই আশ্বাসকে সরাসরি সামরিক প্রতিশ্রুতি না বলে কূটনৈতিক সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এই সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশ এতে কৌশলগতভাবে জড়িত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে একটি চুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তিনি ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করে, তাহলে মার্কিন সেনাবাহিনী এমন শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে যা ইতিহাসে আগে কখনও দেখা যায়নি।”
এদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এক অনলাইন পোস্টে বলেন, “ইসরাইলের পারমাণবিক ক্ষমতা নিয়ে পশ্চিমাদের চিন্তা করা উচিত। কারণ এই সংঘাত শুধু একটি অঞ্চল নয়, পুরো বিশ্বকে বিপদে ফেলতে পারে। ইসরাইল একটি বেপরোয়া রাষ্ট্র, যাকে সমর্থন করে পশ্চিমা দুনিয়া ভয়াবহ ভুল করছে।”
ইসরাইলের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বকে সতর্ক থাকার আহ্বান পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বিশ্ব সম্প্রদায়কে ইসরাইলের অনিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ক্ষমতা বৈশ্বিক শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ খবর জানিয়েছে পাকিস্তানের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল।
এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রকাশিত এক জোরালো বিবৃতিতে খাজা আসিফ বলেন, ইসরাইলই একমাত্র রাষ্ট্র, যা আন্তর্জাতিক পরমাণু নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর বাইরে থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং এখনও পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-তে স্বাক্ষর করেনি।
‘ইসরাইল এনপিটির সদস্য নয়, এমনকি কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গেও যুক্ত নয় যা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে,’ বলেন তিনি।
খাজা আসিফ ইসরাইলের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘দায়িত্বহীন ও অনিয়ন্ত্রিত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পরিচালিত হয়, এবং দেশটি আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি ও অস্ত্র বিস্তার রোধ নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে চলে।
পাশ্চাত্য দেশগুলোর প্রতি সমালোচনা জানিয়ে আসিফ বলেন, ইসরাইলের প্রতি অন্ধ সমর্থন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে।
‘ইসরাইল যে সংঘাত সৃষ্টি করছে, তা গোটা অঞ্চল এবং এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষপাতমূলক সমর্থন এক বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে,’ সতর্ক করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়কে এখনই ইসরাইলের কর্মকাণ্ড নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এদিকে, এর আগে একটি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ দাবি করেন, ২০১৯ সালে ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দন বর্তমানকে ফিরিয়ে দেওয়া ছিল ‘আত্মসমর্পণ’ , যা পাকিস্তানের জাতীয় মর্যাদার জন্য ছিল লজ্জাজনক।
তিনি বলেন, আমরা এক শত্রু পাইলটকে আটক করেছিলাম, কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখনও আমরা লজ্জিত ছিলাম, এখনও লজ্জিত।
তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়াকে এ সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী করেন।
আসিফ আরও অভিযোগ করেন, বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) সহ পাকিস্তানে সক্রিয় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ভারতের প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে এবং নয়াদিল্লির পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।