এক্সে,অ্যাক্সিওস,আল জাজিরা: গাজায় ইসরাইলের দখলদারিত্ব পুরোপুরি শেষ না হলে হামাস অস্ত্র সমর্পণ করবে না। এছাড়া গাজায় বিদেশি প্রশাসনের কর্তৃত্ব মেনে নেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির শীর্ষ নেতা মুসা আবু মারজুক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা সব মধ্যস্থতাকারীকে বলেছি হামাস দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। যদি সেই দখলদারিত্ব শেষ হয়, তাহলে ফিলিস্তিনিরাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে হামাসের কাছে কোনো অস্ত্র থাকবে না। কারণ সেগুলো ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করব। গাজায় দখলদারিত্ব না থাকলে আমাদের অস্ত্রেরও কোনো প্রয়োজন হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফা প্রস্তাব প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে সমর্থন জানিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে রাজি হয়েছে ইহুদিবাদীরা। অন্যদিকে হামাসও শেষমেশ এতে রাজি হওয়ায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইলি (জীবিত ও মৃত) সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যাকর হবে। আর এরপরই হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। গাজায় গঠিত হবে একটি অন্তর্র্বতী সরকার বা প্রশাসন। আর এ প্রশাসনের প্রধান হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই। গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউজে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে তৈরি এ অন্তর্র্বতী সরকারের নাম হবে ‘দ্য বোর্ড অব পিস’ বা শান্তি প্রশাসন। যেটির প্রধানের দায়িত্বে থাকবেন তিনি ট্রাম্প জানান, আরব ও ইসরাইলিদের অনুরোধেই তিনি এ দায়িত্ব নিচ্ছেন।
এদিকে ঘোষিত ২০ দফার ৯ দফাতেও অন্তর্র্বতী প্রশাসনের প্রধান হিসেবে ট্রাম্প থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গাজা একটি প্রযুক্তিনির্ভর, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী শাসনের অধীনে পরিচালিত হবে। গাজার জনগণের দৈনন্দিন জনসেবা ও পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে তারা। এ কমিটিতে যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এর তদারকি ও নজরদারি করবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক অস্থায়ী প্রতিষ্ঠান ‘পিস বোর্ড’, যার নেতৃত্ব ও সভাপতিত্ব করবেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন এ অন্তর্র্বতী সরকারে অন্য বৈশ্বিক নেতারাও থাকবেন। যার মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নাম রয়েছে। ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ব্রিটিশ সেনাদের ইরাকে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন টনি ব্লেয়ার। এ কারণে তাকে ইরাকের কসাই হিসেবেও অনেকে অভিহিত করে থাকেন।
এদিকে গাজার নতুন অন্তর্র্বতী সরকার কাজ করবে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। এছাড়া তারা ফিলিস্তিনিদের মধ্য থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের বাঁছাই করে পরবর্তীতে গাজায় ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্বাধীন একটি সরকার গঠন করবেন। সঙ্গে গাজায় একটি সুশঙ্খল পুলিশ বাহিনী গঠন করে তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ সরকারের দায়িত্ব থাকবে গাজা ও হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণ করা।
স্বাগত জানাল জাতিসংঘ ও পাকিস্তান: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার আলোকে জীবিত ও মৃত সকল ইসরাইলি জিম্মি মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। হামাসের এই প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মহাসচিব ‘হামাসের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এতে উৎসাহিত হয়েছেন’। ডুজারিক বলেন, ‘মহাসচিব সব পক্ষকে গাজায় চলমান সংঘাত শেষ করার সুযোগটি গ্রহণ করার আহ্বান জানান এবং কাতার ও মিশরকে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, মহাসচিব তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সকল বন্দির তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন মুক্তি, এবং অবাধ মানবিক সহায়তার নিশ্চয়তা। ‘জাতিসংঘ এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে সকল প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে, যাতে আরও বেশি দুর্ভোগ রোধ করা যায়।’ এর আগে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার আলোকে জীবিত ও মৃত সকল ইসরাইলি জিম্মি মুক্তি দিতে সম্মত হয় হামাস। একইসঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও প্রশাসনিক হস্তান্তর নিয়ে আলোচনায় বসার আগ্রহও জানিয়েছে তারা। হামাসের পক্ষ থেকে ইতিবাচক জবাব জবাব আসার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরাইল এখন ‘সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্ত করার জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে প্রস্তুত।’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ও তার দলের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতায় কাজ চালিয়ে যাব, যাতে যুদ্ধের সমাপ্তি ইসরাইলের নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে হয় যা ট্রাম্পের যুদ্ধ শেষ করার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
এদিকে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি হামাসের ইতিবাচক সাড়াকে ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক পোস্টে লিখেছেন, এখনই যুদ্ধবিরতি হতে হবে, ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে হবে এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে মানবিক সহায়তা প্রবাহে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়। ইসরাইলকে অবশ্যই তার হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
এর আগের দিনই দার জানান, গাজায় যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে ট্রাম্পের তৈরি ২০-দফা পরিকল্পনা গত মাসে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের পাশাপাশি আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রস্তাবিত খসড়ার সঙ্গে এক নয়। মার্কিন ও ইসরাইলি নেতাদের ঘোষিত নতুন প্রস্তাবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অনুরোধে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম । প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশোধিত প্রস্তাবে ইসরাইলের সেনা প্রত্যাহারকে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এবং ইসরাইলকে একটি বাফার জোনে ধাপে ধাপে থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না ‘সন্ত্রাসী হুমকি’ পুরোপুরি নির্মূল হয়।