আনাদোলু এজেন্সি,দ্য ডন, আল জাজিরা,আনাদোলু এজেন্সি : ইসরায়েলি বাহিনীর গত দুই বছরের অভিযানে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ৯০ শতাংশ ভবন হয় পুরোপুরি, না হয় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত-ক্ষতিগ্রস্ত এসব ভবনের ধ্বংসাবশেষ বা জঞ্জাল এখন বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে গাজাবাসীদের মধ্যে। গাজার বৃহত্তম শহর গাজা সিটির পৌরসভা মুখপাত্র আসিম আল নাবিহ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বলেন, “আমাদের প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, গাজা উপত্যকায় বর্তমানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কমপক্ষে আড়াই লাখ টন জঞ্জাল। এর পরিমাণ আরও বেশিও হতে পারে।” “এসব জঞ্জাল এবং এগুলো থেকে উঠে আসা ধুলো-বালি স্বাস্থ্যের জন্য রীতিমতো হুমকি। এগুলো পরিষ্কার করা এখন আমাদের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদি শিগগিরই এগুলো দূর করা না যায়, তাহলে স্বাস্থ্য বিপর্যয় দেখা দেবে গাজায়।” নাবিহ জানান, গাজা সিটির পৌরসভা কিংবা আঞ্চলিক প্রশাসনের পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ জঞ্জাল অপসারণ করা এখন অসম্ভব, কারণ গাজার আঞ্চলিক প্রশাসনের কাছে জঞ্জাল সরানোর উপযোগি যেসব যন্ত্রপাতি, ক্রেন ছিল সেগুরোর বেশিরভাগই ইসরায়েলি বাহিনী ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।

অল্প যে কিছু যন্ত্রপাতি এখনও সচল আছে, সেগুলো দিয়ে হয়তো জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজ শুরু করা যেতো, কিন্তু সেখানেও বাধা আছে। গাজার কিছু এলাকায় এখনও রয়ে গেছে ইসরায়েলি সেনারা। ‘ইয়েলো লাইন’ নামে পরিচিত সেসব এলাকায় গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষেধ। গাজার প্রধান এবং একমাত্র ল্যান্ডফিল বা ডাম্পিং জোন জুহর আল দিক ইসরায়েলি বাহিনীর ইয়েলো লাইনভুক্ত অঞ্চলে পড়ে গেছে। গাজার পানি ও পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আসিম আল নাবিহ জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর বোমায় গাজাজুড়ে ছড়িয়ে থকা পানি ও পয়োঃনিষ্কাশন সংক্রান্ত ৭ লাখ মিটারের পাইপলাইন নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়েছে। “আমাদের এখন জরুরি ভিত্তিকে ভারী যন্ত্রপাতি, জ্বালানি, পাইপলাইন প্রয়োজন। জুহর আল দিকের ল্যান্ডফিলও ইয়েরো লাইনের বাইরে রাখা দরকার। যদি শিগগির পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বিভিন্ন রোগের মহামারি শুরু হবে গাজায়” আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন নাবিহ। এদেিক নাজুক যুদ্ধবিরতির মধ্যেই দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর আরও এক মৃত জিম্মির দেহাবশেষ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে হামাস। গত সোমবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, রেড ক্রস কফিনটি গ্রহণ করেছে এবং সেটি গাজায় অবস্থানরত ইসরায়েলি সেনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, হামাস প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা সবমিলিয়ে ২৮ জন মৃত জিম্মির দেহ ফেরত দেবে। সোমবার পর্যন্ত ১৬ জনের দেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে ১৩ অক্টোবর ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ দেহ হস্তান্তরের পর কিছু জিম্মির পরিবার ইসরায়েলি সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে, হামাস যদি অবশিষ্ট দেহাবশেষগুলো খুঁজে না পায় বা হস্তান্তরে ব্যর্থ হয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি স্থগিত করা উচিত।

হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম জানায়, ‘হামাস খুব ভালোভাবেই জানে প্রত্যেক মৃত জিম্মির দেহ কোথায় রাখা হয়েছে।’ সংগঠনটি ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন হামাস তার সব প্রতিশ্রুতি পূরণ না করা পর্যন্ত চুক্তির পরবর্তী ধাপে না এগোনো হয়। গত শনিবার হামাসের আলোচক খালিল আল-হাইয়া বলেন, ‘ইসরায়েলি হামলায় গাজার ভূ-প্রকৃতি পরিবর্তিত হওয়ায় মৃতদেহগুলো খুঁজে পেতে নানা চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। দেহগুলো যারা কবর দিয়েছিল, তাদের কেউ যুদ্ধে নিহত হয়েছেন, আবার কেউ কবরের স্থান ভুলে গেছেন।’ আল-হাইয়ার এই মন্তব্যের পরদিনই ইসরায়েল গাজায় দেহ খোঁজার কাজে সহায়তার জন্য একটি মিসরীয় কারিগরি দলকে প্রবেশের অনুমতি দেয়। অনুসন্ধান কাজে খননযন্ত্র ও ট্রাক ব্যবহার করা হচ্ছে। এদিকে, যুদ্ধবিরতি চললেও সোমবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের কাছে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে নাসের হাসপাতাল।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় মোট আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আরও ১৩ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের যুদ্ধে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৮ হাজার ৫২৭ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৫ জন আহত হয়েছেন।

শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সেনা পাঠানোর পথে পাকিস্তান : ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সেনা পাঠানোর বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নিতে পারে পাকিস্তান। দেশটির সরকারি ও সামরিক সূত্র জানাচ্ছে, সেনা পাঠানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের দিকেই এগোচ্ছে ইসলামাবাদ। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় শান্তি ও পুনর্গঠনের জন্য গঠিত ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্সে (আইএসএফ) পাকিস্তান সেনা পাঠাবে কি না, সে বিষয়ে ইসলামাবাদ শিগগিরই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এবং সেনা নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা “চূড়ান্ত পর্যায়ে” পৌঁছেছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র জানায়, পাকিস্তান গাজা মিশনে অংশ নেওয়ার দিকেই ঝুঁকছে বলে অভ্যন্তরীণ আলোচনার ধরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে গঠিত গাজা শান্তিচুক্তির অন্যতম মূল দিক হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সেনা নিয়ে গঠিত এই আন্তর্জাতিক বাহিনী। বাহিনীর দায়িত্বের মধ্যে গাজার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা, হামাসকে নিরস্ত্র করা, সীমান্ত পারাপার নিয়ন্ত্রণ করা এবং একটি অন্তর্র্বতীকালীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে মানবিক ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো বিষয়গুলো থাকবে।