ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর সোমবার দিনভর গোলাবর্ষণে ফিলিস্তিনের গাজার উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৬০ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩৮৮ জন। গত সোমবার সন্ধ্যার পর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবারের পর ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৪ হাজার ৯২৭ জনে। এদের পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৭ জন ফিলিস্তিনি। ২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা। বিবিসি, আল-জাজিরা।

হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত আড়াই মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৪৯ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১৪ হাজার ৫৭৪ জন।

এদিকে ত্রাণ নিতে গিয়ে আবারো গোলাগুলির মধ্যে পড়েছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা। গত সোমবার ইসরাইল ও মার্কিন সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন, জিএইচএফ পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তাদের উপর আবারও গুলি চালানো হয় বলে ফিলিস্তিনিরা বলছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এবারই প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরাও তাদের উপর গুলি চালিয়েছে। দক্ষিণ রাফাহর তাল আল-সুলতান এলাকায় জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে এই ঘটনা ঘটে।

এসময় ইসরাইলি সেনারাও তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ত্রাণ সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত ওই এলাকায় ছয়জন নিহত এবং ৯৯ জন আহত হয়েছেন। প্রতিবেদনগুলো খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। আর জিএইচএফ বলছে, তাল আল-সুলতান কেন্দ্রটি গত সোমবার খোলাই হয়নি এবং ত্রাণ বিতরণ করার জন্য খোলা অন্য দুটি সাইটেও কোনো ঘটনা ঘটেনি। গাজার হামাসবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়ার কয়েকদিন পরই এমন ঘটনা ঘটলো। ২৬ মে, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই, তাদের খোলা চারটি ত্রাণ কেন্দ্রের কোনো একটির কাছে এমন প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটেছে।

ইসরাইলের একটি সামরিক অঞ্চলের ভেতর দিয়ে রাফাহর তাল আল-সুলতান এলাকার একটি কেন্দ্রে যাওয়ার পথে অনেক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আগের ঘটনাগুলোতে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিল, ইসরাইলি বাহিনী মানুষের ভীড়ের ওপর গুলি চালিয়েছিল। যদিও সহায়তা কেন্দ্রে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। তাদের দাবি, সৈন্যরা ‘সন্দেহভাজনদের’ উপর গুলি চালিয়েছিল যারা সতর্কতামূলক গুলি উপেক্ষা করে তাদের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। গত সোমবারের ওই ঘটনায়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা লোকজন জানিয়েছেন, ইসরাইলি বাহিনীর পাশাপাশি ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরাও তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে।

তারা বলেছে যে, বন্দুকধারীদের ইসরাইলি বাহিনীর মিত্র বলেই মনে হচ্ছিল, যেন তারা এক সঙ্গে অভিযান চালিয়ে আবার ইসরাইলি সামরিক অঞ্চলেই ফিরে গিয়েছিল। হিশাম সাঈদ নামের ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলছিলেন, প্রথমে, আমরা ভেবেছিলাম তারা হয়তো ফিলিস্তিনি যুবক, যারা এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করছে, কিন্তু হঠাৎ করেই তারা আমাদের দিকে গুলি চালাতে শুরু করে।এমনকি যারা সাহায্যের বক্স নিতে পেরেছিল তাদেরকে লক্ষ্য করেও গুলি করা হয়েছিল। আমরা এখনও জানি না যে কারা এই আক্রমণকারীরা। তারা আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। এমনকি বিশৃঙ্খলার সময় আমাদের কাছ থেকে চুরিও করেছে কেউ কেউ।

মার্কিন বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের মাধ্যমেই কাজ করে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের সাহায্যের প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে জাতিসংঘকে এড়িয়ে যেতে চায় তারা। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদানকারী গোষ্ঠীগুলো নতুন এই ব্যবস্থার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি নিরপেক্ষতা এবং স্বাধীনতার মানবিক নীতির লঙ্ঘন। তারা এও সতর্ক করেছে যে, প্রায় তিন মাস ধরে চলা ইসরাইলি অবরোধে, যা তিন সপ্তাহ ধরে আংশিক শিথিল করা হয়েছে, গাজার ২১ লাখ মানুষ ভয়াবহ ক্ষুধার মুখোমুখি হচ্ছে।