আল-জাজিরা : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরাইলের নৃশংস হামলা থামছেই না। যুদ্ধবিরতি ভেঙেও চলছে হামলা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর গাজায় ইসরাইলী হামলায় এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৬৩ জন নিহত হয়েছেন। গত শনিবার দেওয়া এক নতুন বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। এর ফলে ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন হামলার ধারায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৫৬৩ জনে। উদ্ধারকারীদের মতে, নিহতদের মধ্যে শত শত শিশু রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট ৫০,৯৩৩ জন নিহত এবং ১১৬,০৪৫ জন আহত হয়েছেন।

গত শনিবার ইসরাইলী বাহিনীর গাজার তুফাহ এলাকায় এক হামলায় কমপক্ষে একজন নিহত হন এবং দুই শিশু আহত হয়। উত্তরের বেইত লাহিয়ার আল-আতাতরা এলাকায় আরও দুই ফিলিস্তিনী নিহত হন, এবং খান ইউনুসের দক্ষিণে কিজান আন-নাজ্জার এলাকায় একটি ড্রোন হামলায় আরেকজন নিহত হন। খান ইউনুসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায়, যেটিকে ইসরাইল তথাকথিত “নিরাপদ এলাকা” হিসেবে ঘোষণা করেছিল, সেখানে শরণার্থীদের তাবুতে বিমান হামলায় আরও হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

২৩ দিনে ২২৪ বার হামলা: গাজায় বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরাইলের হামলা অব্যাহত রয়েছে, আর প্রতিদিনই বাড়ছে নারী ও শিশুদের হতাহতের সংখ্যা। সম্প্রতি চালানো ইসরাইলী বাহিনীর ৩৬টি হামলা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব হামলার অধিকাংশই নারী ও শিশুদের টার্গেট করে করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় আবাসিক ভবন ও শরণার্থী তাঁবুগুলোতে কমপক্ষে ২২৪টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, “গাজাজুড়ে চালানো সামরিক অভিযান পরিস্থিতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যেখানে কেউই আর নিরাপদ নয়।”

শামদাসানি জানান, গাজার সাধারণ মানুষকে ক্রমাগত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় নিহতদের একটি বড় অংশই শিশু ও নারী। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন দেইর আল বালাহ শহরে ৬ এপ্রিলের একটি হামলার ঘটনা, যেখানে আবু ইসা পরিবারের এক শিশু, চার নারী এবং একটি চার বছর বয়সী ছেলে নিহত হয়েছে।

শামদাসানি জানান, ইসরাইলী সেনাবাহিনীর নির্দেশে বহু বেসামরিক মানুষ খান ইউনিসের আল মাওয়াসি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সেই এলাকাতেও হামলা থেমে নেই। ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে অন্তত ২৩টি হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৩১ মার্চ ইসরাইল গাজার প্রাণকেন্দ্র রাফাহতে বড় পরিসরের স্থল অভিযান শুরু করেছে। এই ধরনের জোরপূর্বক বাস্তচ্যুতি চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল বলে জাতিসংঘ তা নিন্দা জানাচ্ছে।