পিটিভি ওয়ার্ল্ডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া: ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটি এরইমধ্যে প্রতিশোধমূলক পাল্টপাল্টি বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া দুই দেশই সীমান্তে বাড়াচ্ছে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি।

এমনই এক উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থার মধ্যে বিস্ফোরক এক মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের রেলওয়েমন্ত্রী হানিফ আব্বাসী। তিনি বলেছেন, ভারতকে ঘায়েল করতে তার দেশ পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম শাহীন ও গজনবীর মতো ক্ষেপণাস্ত্রসহ ১৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত করে রেখেছে। হানিফ আব্বাসী আরও বলেছেন, ‘শাহীন ও গজনবী ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আমরা আমাদের ঘাঁটিতে প্রস্তুত করে রেখেছি, সেগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে হিন্দুস্তানের জন্য। ১৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র কেবলমাত্র নমুনা হিসেবে রাখা হয়নি, আপনাদের কোনো ধারণাই হবে না যে পাকিস্তানের কোথায় কোথায় সেগুলো মোতায়েন করা হয়েছে।’ ভারত থেকে পাকিস্তানি দূতাবাসের সামরিক কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের মাধ্যমে দেশটির বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানি রেলমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেছেন। হানিফ আব্বাসী বলেন, ‘এসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, এসব শাহীন, এসব ঘোরিৃআমি আবারও বলছি এগুলো শোকেসে রাখা হয়নি, এগুলো তোমাদের দিকেই তাক করে রাখা হয়েছে, আর কারো দিকে নয়।’ হুঁশিয়ারি দিয়ে হানিফ আব্বাসী আরও বলেন, যদি ভারত ইন্দুস চুক্তি ভঙ্গ করে পাকিস্তানের নদীগুলোতে পানির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে পাকিস্তান ‘পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের’ জন্য প্রস্তুতি নেবে।

এদিকে কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার পর সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিল করেছে ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, পাকিস্তান যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে।

ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপের সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আলাপকালে শেহবাজ শরিফ আরও জানান, পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

পেহেলগাম হামলার প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সরাসরি বা পরোক্ষ সম্পর্ক নেই। বরং গত দুই দশকে সন্ত্রাসবাদের বড় শিকার হয়েছে পাকিস্তান, প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ এবং দেশটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।

পেহেলগাম ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য প্রস্তুতির কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ। একইসঙ্গে, উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি বজায় রাখতে পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান এই অঞ্চলজুড়ে শান্তি চায় এবং ইরান যদি এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে চায়, তবে পাকিস্তান তা স্বাগত জানাবে। কাশ্মির প্রসঙ্গে শেহবাজ শরিফ বলেন, পাকিস্তান সবসময় কাশ্মীরি জনগণের ন্যায্য আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবির পাশে থাকবে এবং জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাবের ভিত্তিতে তাদের সমর্থন দিয়ে যাবে। উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে বিদ্রোহ চলছে। বহু কাশ্মীরি মুসলিম এই আন্দোলনকে সমর্থন করেন এবং তারা চান অঞ্চলটি হয় পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হোক বা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক। ভারত এ আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করলেও, পাকিস্তান একে বৈধ স্বাধীনতাকামী সংগ্রাম হিসেবে দেখে।