দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন , সামা টিভি, এনডিটিভি, জিও নিউজ , দ্য হিন্দু, এএফপি : ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হয়েছে। এ সময় পরিষদের সদস্যদেশের প্রতিনিধিরা উত্তেজনা কমাতে ও সংলাপে বসতে দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানান। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ সভার পর কোনো বিবৃতি প্রকাশ করেনি। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের নিজেদের লক্ষ্যগুলোর বেশির ভাগই পূর্ণ হয়েছে। সভায় পরিষদের স্থায়ী ৫টি দেশ ও অস্থায়ী ১০ দেশের সব প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস পেহেলগামে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, হামলাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। ভারত ও পাকিস্তানকে সামরিক সংঘর্ষ এড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভুল করবেন না। সামরিক সংঘর্ষ কোনো সমাধান নয় এবং আমি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দুই দেশের সরকারকেই সহায়তায় প্রস্তুত আছি।’ পাকিস্তানের অনুরোধে নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি ভিত্তিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি করেছে। বৈঠকে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখারের বক্তব্য শোনা হয়।

এক সংবাদ সম্মেলনে ইফতিখার বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা যে ধরনের মনোযোগ ও সম্পৃক্ততা দেখিয়েছেন, তার জন্য পাকিস্তান কৃতজ্ঞ। তিনি কাশ্মীর ইস্যুকে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ৭০ বছর ধরে চলমান একটি দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ভারতের সাম্প্রতিক একতরফা পদক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইফতিখার। বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে কথা বলেছে পাকিস্তান। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সব সময় তার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় প্রস্তুত আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাশ্মীর ইস্যুর সমাধানের ওপর জোর দেন ইফতিখার। বলেন, ‘কাশ্মীরি জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এ বিরোধের সমাধান করা সম্ভব নয়।’ জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার বলেছেন, পহেলগাঁও হামলার পর প্রতিপক্ষ ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো ইসলামাবাদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) একটি ইন-ক্যামেরা বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করে তিনি বলেন, কাশ্মীর বিরোধ আজও অমীমাংসিত, যা পঁচাত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, কাশ্মীর ইস্যুই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মূল বিরোধ এবং এটি অবশ্যই কাশ্মীরিদের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে। কাশ্মীরিদের সম্পৃক্ততা ছাড়া এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব নয়। রাষ্ট্রদূত ইফতিখার আরও বলেন, এই মূল সমস্যার সমাধান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি কখনোই আসবে না। ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর (আইআইওজেকে)-এ মানবাধিকার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে নিরীহ সাধারণ মানুষ এখনও দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন ভারতীয় বাহিনীর হাতে।

পহেলগাঁও হামলা নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন, পাকিস্তান একাধিকবার বলেছে এবং আবারও বলছে যে এই ঘটনায় আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা স্বাধীন, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দেন, সন্ত্রাসবিরোধী বৈশ্বিক লড়াইয়ে পাকিস্তান সম্মুখসারির রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করেছে এবং ৯০,০০০-এর বেশি প্রাণ উৎসর্গ করেছে। রাষ্ট্রদূত ইফতিখার পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, পাকিস্তানের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।

ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি জানান, এই বিষয়টিও নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় টেকসই শান্তির জন্য নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন অপরিহার্য। পাকিস্তান সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংলাপই শান্তির একমাত্র টেকসই পথ।

রাষ্ট্রদূত নিরাপত্তা পরিষদকে বৈঠক আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা। বৈঠকের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব খালেদ খিয়ারি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশ্যে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। পরে রাষ্ট্রদূত ইফতিখার কাশ্মীর ও পানি ইস্যুতে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগেই জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ভারত ও পাকিস্তানকে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কাশ্মীরে সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।