রয়টার্স : পাকিস্তানে চলতি সপ্তাহে দুটো ‘আত্মঘাতী হামলার’ জন্য আফগানিস্তানকে দায়ী করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক ক্রমেই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠার মধ্যেই এমন অভিযোগ উত্থাপন করে ইসলামাবাদ। বক্তব্য প্রদানকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি বলেন, মঙ্গলবার রাজধানীতে আদালতের সামনে এবং তার আগের দিন একটি সামরিক স্কুলে হওয়া হামলায় আফগানরা জড়িত। এটি আমাদের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। তিনি অভিযোগ করেন, তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানে হামলা চালানো ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের সহায়তা করছে। এদিকে, ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসা তালেবান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের পাল্টা অভিযোগ, আইএসআইএস-খোরাসান জঙ্গিদের সমর্থন দিচ্ছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আইএসআইএস-কে-এর বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে আমরা বহুবার পাকিস্তানি নাগরিককে হত্যা, আটক বা গ্রেফতার করেছি। তবে তার মানে এই নয় যে পুরো পাকিস্তানি জাতি এবং তাদের সরকার এজন্য দায়ী। ইসলামাবাদের একটি নিম্ন আদালতের বাইরে পুলিশ টহল দলের কাছাকাছি এক আত্মঘাতী হামলাকারী বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ১২ জন নিহত ও ২৭ জন আহত হয়। এর আগের দিন সোমবার আফগান সীমান্ত-সংলগ্ন দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে এক সন্ত্রাসী বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে একটি সামরিক স্কুলের প্রধান ফটকে ধাক্কা দেয়। এতে তিন জন নিহত হয়। ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা স্কুলে ঢুকে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি সামরিক কাঠামোর অধীনে হলেও এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও পড়ে। জঙ্গিদের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে এবং শেষ পর্যন্ত সব হামলাকারী নিহত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক তীব্র হয়ে উঠেছে। গত মাসে দুই দেশের সীমান্তে সংঘর্ষে বহু সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এদিকে পাকিস্তান একই সময়ে ভারতের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে রয়েছে। গত মে মাসে দুই দেশের মধ্যে চার দিনের এক যুদ্ধও হয়। ইসলামাবাদ দাবি করে, আফগানিস্তানে অবস্থানরত পাকিস্তানি তালেবান ও অন্যান্য জঙ্গিদের ভারত সমর্থন দিচ্ছে যা নয়াদিল্লি অস্বীকার করেছে।
দুই দেশ দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীল হলেও ভূরাজনীতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। নিরাপত্তার জন্য দেশটিকে কৌশলগতভাবে জরুরি মনে করে পাকিস্তান ও ভারত উভয়ই। ২০০৭ সাল থেকে পাকিস্তানি তালেবান বা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে। তাদের লক্ষ্য সরকারকে উৎখাত করে নিজেদের ব্যাখ্যানুযায়ী ইসলামি শাসন কায়েম করা।