জিও নিউজ

জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের ভূখণ্ড নয় এবং কখনোই তা এমন স্বীকৃতি পাবে না। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মঙ্গলবার এমন বক্তব্য দিয়েছে পাকিস্তান।

জাতিসংঘে পাকিস্তান মিশনের কাউন্সেলর ও রাজনৈতিক সমন্বয়কারী গুল কায়সার সারওয়ানি ‘লিডারশিপ ফর পিস’ শীর্ষক উন্মুক্ত বিতর্কে বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই কাশ্মীর ভারতের তথাকথিত অংশ নয়। কখনোই ছিল না, ভবিষ্যতেও হবে না।

এদিকে জম্মু ও কাশ্মীর প্রসঙ্গে পাকিস্তানের মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে ভারত। জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত হরিশ পার্বথানেনি স্পষ্ট করে বলেন, জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ ভারতের অবিচ্ছেদ্য ও অখ- অংশ। এটি ছিল, আছে এবং চিরকালই ভারতের অংশ থাকবে।

বিতর্ক চলাকালে পাকিস্তানের প্রতিনিধির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পার্বথানেনি বলেন, ভারত ও ভারতের জনগণের ক্ষতি করার ব্যাপারে পাকিস্তানের এক ধরনের রোগগ্রস্ত আসক্তি রয়েছে। ভারত কেন সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রেখেছে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পার্বথানেনি পাকিস্তানকে বিশ্বের সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল বলে আখ্যা দেন।

তিনি বলেন, ৬৫ বছর আগে ভারত সদিচ্ছা ও বন্ধুত্বের মনোভাব নিয়ে সিন্ধু পানি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কিন্তু এই ছয় দশকেরও বেশি সময়ে পাকিস্তান চুক্তির চেতনাকে লঙ্ঘন করেছে ভারতের বিরুদ্ধে তিনটি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে এবং হাজার হাজার সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে।

গত চার দশকে পাকিস্তান সমর্থিত সন্ত্রাসী হামলায় দশ হাজারেরও বেশি ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এর মধ্যে এ বছরের এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে হওয়া হামলার কথা তুলে ধরেন। ওই হামলায় এক বিদেশি নাগরিকসহ ২৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হন। তিনি বলেন, এই প্রেক্ষাপটেই ভারত ঘোষণা করেছে যতক্ষণ না পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্য ও স্থায়ীভাবে সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদসহ সব ধরনের সন্ত্রাসে সমর্থন বন্ধ করছে, ততক্ষণ সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত থাকবে। জাতিসংঘে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন পার্ব থানেনি।

ভারতকে শিক্ষা দিয়েছি,

চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে সংঘটিত সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর থেকেই চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। প্রায়ই পাল্টাপাল্টি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে চিরবৈরী এ দুই দেশের নেতা ও শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে।

সংক্ষিপ্ত সেই যুদ্ধের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও দুদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার কোনও নাম নেই। উল্টো সেই যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আবারও ঝাঁঝালো বক্তব্য দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। খবর জিও নিউজের বুধবার খাইবার পাখতুনখাওয়ার হারিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, এপ্রিল-মে এর সংঘাতে মোদি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে পাকিস্তান। তার ভাষায়, ‘পাকিস্তান-ভারত সংঘাতে আমরা মোদি সরকারকে এমন এক শিক্ষা দিয়েছি, যা তারা কোনোদিন ভুলতে পারবে না’। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কা-ই-হক’ বা ‘সত্যের যুদ্ধে’ পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী জাতির দোয়া ও অটল সমর্থনের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছে। দিল্লি থেকে মুম্বাইÍ পুরো ভারতই এই পরাজয় কখনো ভুলবে না।

এসময় শেহবাজ শরিফ খাইবার পাখতুনখাওয়াকে সাহসী, দৃঢ়চেতা ও বীরদের ভূমি উল্লেখ করেন এবং সেখানকার জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের ত্যাগের কারণেই দেশে শান্তি ফিরে এসেছে।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গ টেনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাদুবিদ্যা’ নয়, বরং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই পাকিস্তান দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।

তিনি জানান, অর্থনীতি সংকটময় অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে স্থিতিশীলতার পথে রয়েছে এবং এখন এটিকে এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। জাতীয় অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘চারটি প্রদেশই যখন উন্নয়ন করবে, তখনই দেশ এগোবে’।