আল-জাজিরা , এএফপি, এক্সে : পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার নতুন করে যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তৃতীয় দফার এ আলোচনা শুরু হলেও দুই দেশের মধ্যে আবারও সীমান্তে গোলাগুলির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়গুলোই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার বিরোধের মূল ক্ষেত্র। ইসলামাবাদের অভিযোগ, পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি)-এর মতো গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছে আফগানিস্তান। টিটিপির বিরুদ্ধে পাকিস্তানে বিভিন্ন হামলা চালানোর অভিযোগ আছে। আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার অবশ্য ওই সব গোষ্ঠীকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ গত বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে তৃতীয় দফার আলোচনা শুরু হলেও, গতকাল শুক্রবার বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী আবার স্পিন বোল্ডাক এলাকায় গুলি ছুড়েছে। এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এক্সে পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক পোস্টে বলা হয়, চামান সীমান্তে আজকের ঘটনার বিষয়ে আফগান পক্ষের দাবিগুলো আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। আফগানিস্তানই আগে গুলি চালিয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ বজায় রেখে তাৎক্ষণিকভাবে জবাব দিয়েছে। স্পিন বোল্ডাক শহরটির অবস্থান আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহার প্রদেশে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জাবিউল্লাহ মুজাহিদ লিখেছেন, আলোচক দলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এবং বেসামরিক লোকজনের হতাহতের আশঙ্কা এড়াতে আফগান সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে পাকিস্তান অভিযোগটি অস্বীকার করেছে। তারা পাল্টা আফগানিস্তানকে দোষারোপ করেছে। এক্সে পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক পোস্টে বলা হয়, ‘চামান সীমান্তে আজকের ঘটনার বিষয়ে আফগান পক্ষের দাবিগুলো আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। আফগানিস্তানই আগে গুলি চালিয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ বজায় রেখে তাৎক্ষণিক জবাব দিয়েছে।’ আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের উপমুখপাত্র হামদুল্লাহ ফিতরাত বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা জানি না, পাকিস্তানি বাহিনী কেন গুলি চালিয়েছে।’

কান্দাহারের তথ্য বিভাগের প্রধান আলি মোহাম্মদ হাকমাল বলেন, গোলাগুলির ঘটনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা কে বলেন, এটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। পাকিস্তান নিশ্চিত করেছে যে সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করা সংক্রান্ত আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। উভয় দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে সহযোগিতা না করার অভিযোগ তোলে। আবার উভয় পক্ষ সতর্ক করেছিল, আলোচনা ব্যর্থ হলে সংঘর্ষ আবার শুরু হতে পারে। দেওয়া এক পোস্টে জাবিউল্লাহ মুজাহিদ লিখেছেন, আলোচক দলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এবং বেসামরিক লোকজনের হতাহতের আশঙ্কা এড়াতে আফগান সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ অক্টোবর শুরু হওয়া সংঘর্ষে আফগানিস্তান সীমান্তে এ পর্যন্ত ৫০ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কাবুলে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন। ওই বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে আফগানিস্তান। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বলেছে, সংঘর্ষে তাদের ২৩ সেনা নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন, তবে বেসামরিক লোকজনের হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য তারা উল্লেখ করেনি।

স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই আফগান নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। গত বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের বৈঠক চলাকালেই এই সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। এদিনের বৈঠকটি গত ১৯ অক্টোবর কাতারে স্বাক্ষরিত অস্ত্রবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। ওই সময়ের সংঘর্ষে উভয় দেশের সেনাসদস্য ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলেন।

এদিকে, দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সীমান্ত নিরাপত্তা। পাকিস্তান অভিযোগ করে আসছে, আফগানিস্তান তালেবান (টিটিপি)সহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। তবে আফগান তালেবান সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আজকের সীমান্ত ঘটনার বিষয়ে আফগান পক্ষের দাবি সত্য নয়। প্রথমে আফগান দিক থেকেই গুলি চালানো হয়, যার জবাবে আমাদের বাহিনী সংযতভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।