আল-জাজিরা : তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম এই তথ্য জানিয়েছেন।
সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আসিয়ানের দুই প্রতিবেশীর মধ্যে গতকাল সোমবার পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের বাসভবনে শান্তি আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
আসিয়ানের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এবং থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই উপস্থিত ছিলেন।
গত মে মাসের শেষ দিকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে কম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হন। এই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। গত বৃহস্পতিবার আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে তা সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতে রূপ নেয়।
গভীর কূটনৈতিক সংকটের মধ্যে উভয় পক্ষ সীমান্তে সেনাসংখ্যা বাড়ায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি থাইল্যান্ডের নাজুক জোট সরকারকে প্রায় পতনের মুখে ঠেলে দেয়।
এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম জানিয়েছেন, সীমান্ত সংঘাত নিরসনে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া অবিলম্বে ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। সোমবার (২৮ জুলাই) মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় আনোয়ারের সরকারি বাসভবনে থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানের মধ্যে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
বৈঠকের পর আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি ও ফলাফল দেখতে পাচ্ছি, যা কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড উভয়ের জন্য কল্যাণকর।
আনোয়ার আরও বলেছেন, সংঘাত নিরসনে উভয় দেশের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনা নেতৃত্ব। আলোচনায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোঁজাই তাদের লক্ষ্য।
এ পর্যন্ত চলমান এই সীমান্ত সংঘাতে ৩৫ জন নিহত ও দুই লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রাষ্ট্রদূতরাও উপস্থিত ছিলেন বলে আনোয়ারের দফতর জানিয়েছে। এর আগে এক্স-এ এক পোস্টে হুন মানে জানান, থাইল্যান্ডের সঙ্গে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যেই এই আলোচনা। তবে বৈঠকের আগে ব্যাংককে সাংবাদিকদের থাই প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম বলেছিলেন, কম্বোডিয়া যে আন্তরিকভাবে আলোচনায় আসছে, আমরা তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। আলোচনায় তাদের আচরণই আমাদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলবে। তবে শান্তি আলোচনার মাঝেও সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন আল জাজিরার সাংবাদিক টনি চেং। তিনি থাইল্যান্ডের সীমান্ত প্রদেশ সুরিন থেকে বলেছেন, আলোচনা শুরুর পরও আমরা গোলাবর্ষণের শব্দ শুনেছি। থাই সীমান্তে বড় ধরনের সেনা মোতায়েনও চলছে। গতকাল সোমবার সোমবার ভোরে কম্বোডিয়ার ওদ্দার মিনচেই প্রদেশের সামরং অঞ্চলে গুলিবিনিময় শুরু হয় বলে জানিয়েছেন থাই সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রিচা সুকসুয়ানন। আগের দিন রবিবার সিসাকেত প্রদেশে কম্বোডিয়ার রকেট হামলায় এক ব্যক্তি নিহত ও একজন আহত হন।
থাই সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়া বিরোধপূর্ণ একটি মন্দিরে স্নাইপার মোতায়েন করেছে এবং সীমান্তজুড়ে রকেট হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা পাল্টা অভিযোগে বলেছেন, থাইল্যান্ড অনেক সেনা মোতায়েন করেছে এবং ভারী অস্ত্র দিয়ে কম্বোডিয়ার অভ্যন্তরে গোলাবর্ষণ চালাচ্ছে। তার দাবি, সোমবার ভোরে থাই সেনাবাহিনী প্রাচীন তা মুয়েন থম ও তা কুয়াই মন্দিরের আশপাশে হামলা চালায়। এগুলো কম্বোডিয়ার দাবি করা এলাকা হলেও থাইল্যান্ড তা মানে না।
তিনি আরও বলেন, থাই সামরিক বাহিনী আকাশপথে ধোঁয়াবোমা ফেলেছে এবং ভারী অস্ত্র দিয়ে আমাদের সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তবে কম্বোডিয়ার সেনারা সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রবিবার বলেছিলেন, আমাদের কর্মকর্তারা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। তারা শান্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছেন।