গাজায় প্রথমবার আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করল জাতিসংঘ। এ ঘোষণার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসেও প্রথমবার একসঙ্গে দুর্ভিক্ষদশায় পড়ল এত মানুষ। গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ৫ লাখের বেশি বাসিন্দা এখন ‘বিপর্যয়কর’ ক্ষুধার মুখোমুখি হচ্ছে। ২২ মাসেরও বেশি সময় চলা সংঘাত, সাহায্য বন্ধ এবং স্থানীয় খাদ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মানবিক সংকট তীব্র হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘের সাহায্য প্রধান টম ফ্লেচার জেনেভা থেকে বলেছেন, ‘দুর্ভিক্ষ সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য। পরিকল্পিত বাধার কারণে সীমান্তে খাদ্য জমে আছে। কিন্তু বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল সরকার। জাতিসংঘের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, ‘গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই।’ আলজাজিরা, আনাদোলু এজেন্সির, মেহর নিউজ।
জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বলেছে, গাজা সিটি ও এর আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (স্থানীয় সময়) ৫৯ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে আইপিসি নিশ্চিত করেছে, গাজা সিটির জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ দুর্ভিক্ষের সীমা আইপিসি ফেজ-৫-এ পৌঁছেছে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দেইর আল-বালাহ এবং খান ইউনিস অঞ্চলও বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে তারা। সেসময় গাজার ২.৩ মিলিয়ন বাসিন্দার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশকে গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।
ভেঙে পড়েছে খাদ্যব্যবস্থা : আইপিসি অনুসারে, গাজার ৯৮ শতাংশ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত। গবাদি পশুর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং মাছ ধরাও নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রোটিনের অভাবে ভুগছে গাজার অধিকাংশ মানুষ। অন্যদিকে বাজার প্রায় খালি। বাণিজ্যিক আমদানি সীমিত এবং ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বেশির ভাগ বাসিন্দা সম্পূর্ণরূপে সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সীমান্তে বিধিনিষেধ এবং চলমান সংঘাতের কারণে ত্রাণ পাচ্ছে না বাসিন্দারা।
সবচেয়ে বিপদে শিশু : গাজায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে শিশুরা। পুষ্টিহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু আগস্টের প্রথম ২০ দিনে ১৩৩ জন মারা গেছে। যার মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সি ২৫ শিশুও রয়েছে। ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, গাজার শিশুদের যে ফর্মুলার দুধ প্রয়োজন, সেরকম ১০ হাজারের মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৫০০ শিশু তেমন দুধ পাচ্ছে। আইপিসি জানিয়েছে, জুন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশুর তীব্র অপুষ্টিতে রয়েছে, যা মে মাসের দ্বিগুণ। এর মধ্যে ৪১ হাজার শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে। এছাড়াও প্রায় ৫৫ হাজার ৫০০ অপুষ্টিতে ভোগা গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী নারীরও জরুরি পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যব্যবস্থার পতন : গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রচণ্ড চাপে রয়েছে। হাসপাতালগুলোয় রোগীর সংখ্যা বেশি। চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব, এবং নিরাপদ পানীয় জল ও স্যানিটেশনের অ্যাকসেস সীমিত। জনাকীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি অপুষ্টিতে ভোগা জনগোষ্ঠীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। দুর্ভিক্ষ সংজ্ঞায়িত করার জন্য আইপিসির মানদণ্ড অনুযায়ী কমপক্ষে ২০ শতাংশ পরিবারকে চরম খাদ্য ঘাটতির মুখোমুখি হতে হবে। পাঁচ বছরের কম বয়সি ৩০ শতাংশ শিশুকে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে হবে। প্রতিদিন প্রতি ১০ হাজার জনে দুটি মৃত্যু অনাহার বা অপুষ্টিজনিত অসুস্থতার কারণে হতে হবে।
গাজা দুর্ভিক্ষ আমাদের সবার জন্য লজ্জার-মানবাধিকার পর্যবেক্ষক : গাজা ও ইসরাইলে কাজ করা মানবাধিকার পর্যবেক্ষক ম্যাডেলেইন ম্যাকগিভারন বলেছেন, গাজায় যা ঘটছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। শুক্রবার বিবিসি রেডিও-৫-এ তিনি বলেন, ‘গাজায় যা ঘটছে তা আমাদের সবার জন্য লজ্জা, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে নিয়ে যাবে।’ দুর্ভিক্ষের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও। শুক্রবার তিনি বলেছেন, ‘গাজাকে বর্ণনা করার মতো শব্দ শেষ হয়ে গেলেও আজ একটি নতুন শব্দ যোগ হলো দুর্ভিক্ষ। এটি কোনো রহস্য নয়, এটি একটি মানুষের তৈরি বিপর্যয়, এক নৈতিক অভিযোগ এবং মানবতার ব্যর্থতা।’ এর আগেও গাজায় মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র উদ্বেগ জানিয়েছিল জাতিসংঘের পাঁচটি শীর্ষ সংস্থা। ২০২৩ সালের অক্টোবরে তারা এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল ইউএনডিপি (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি), ইউএনএফপিএ (জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিল), ইউনিসেফ (শিশু তহবিল), ডব্লিউএফপি (বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি) এবং ডব্লিউএইচও (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)।
রোগ বিস্তারের আশঙ্কা : ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, আগামী এক মাসে গাজায় রোগের প্রকোপ আরও বাড়বে। তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ, পানিবাহিত ডায়রিয়া ও রক্তক্ষরণজনিত ডায়রিয়া, হাম ও পোলিও দেখা দেবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মানবিক সহায়তা কিছুটা বাড়লেও তা ভিড়, গুদামে হামলা, জ্বালানি সংকট এবং অব্যাহত হামলার কারণে সীমিত থাকবে। স্থলপথ ও আকাশপথে আনা সাহায্য ‘চাহিদার তুলনায় মারাত্মকভাবে অপর্যাপ্ত’ থাকবে।
গাজায় ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনী: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে হামলা বাড়িয়েছে ইসরাইল। গত একদিনে আরও অন্তত ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ সময়ে আহত হয়েছেন আরও ২৫১ জন। এর মধ্যে গাজা সিটিতেই ৩৭ জন নিহত হয়েছেন, যেখানে ইসরাইল ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনা করছে। গত শুক্রবার রাতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া আলজাজিরার এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ইসরাইলী কোয়াডকপ্টার শেখ রাদওয়ানের একটি স্কুল ভবনের উপর উড়ছে, যেখানে আশপাশের বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন হয়ে দেখছেন। এর পর কোয়াডকপ্টারটি লক্ষ্যবস্তুতে একটি বিস্ফোরক ফেললে অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ওই স্কুলে অনেক ফিলিস্তিনি তাদের অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিল। আল-আহলি হাসপাতালের একটি চিকিৎসা সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরাইলী বাহিনীর হাতে আরও একজন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনাহারে ও অপুষ্টিতে নতুন করে দুজন মারা গেছেন, যার মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে। এর ফলে দুর্ভিক্ষ-সম্পর্কিত মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২৭৩ হয়েছে, যার মধ্যে ১১২ জন শিশু।
মন্ত্রণালয় বলেছে, অনেকেই এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে বা রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। তারা আরও উল্লেখ করেছে, ইসরাইলী বোমা হামলা ও সরঞ্জামের অভাবে উদ্ধারকারী দলগুলো তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি ভেঙে তাদের সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করার পর থেকে ১০ হাজার ৭১৭ জন ফিলিস্তিনী নিহত এবং ৪৫ হাজার ৩২৪ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে, ইসরাইলী বাহিনী মানবিক সহায়তা নিতে আসা বেসামরিক নাগরিকদের ওপরও হামলা অব্যাহত রেখেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এমন হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ১৩৩ জন আহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের মতে, ২৭ মে থেকে মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ২ হাজার ৬০ ফিলিস্তিনী নিহত এবং ১৫ হাজার ১৯৭ জন আহত হয়েছেন। এর আগে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, হামাস যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরাইলের শর্তে সম্মত না হলে গাজার বৃহত্তম শহরটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের গণহত্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬২ হাজার ২৬৩ জন নিহত এবং এক লাখ ৫৭ হাজার ৩৬৫ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরাইলে এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়েছিল।
ইসরাইলে সম্মিলিত আক্রমণ চালালো ইয়েমেনি বাহিনী : ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী। একইসঙ্গে অধিকৃত জাফা এবং আশকেলিয়নে দুটি ড্রোন হামলাও চালানো হয়েছে। ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। বিবৃতিতে ইয়াহিয়া সারি দাবি করেন, এই অভিযানে 'ফিলিস্তিন ২' ধরনের একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা ইসরাইলী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে এবং সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। সারি বলেন, ‘ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী জোর দিয়ে বলেছে যে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শত্রুদের মধ্যে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, যার ফলে লাখ লাখ ইসরাইলী আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে এবং বিমানবন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই অভিযান নির্যাতিত ফিলিস্তিনী জনগণ এবং তাদের যোদ্ধাদের (হামাস) সমর্থনে এবং ইহুদিবাদী সরকারের গাজায় গণহত্যা ও খাদ্য সামগ্রী অবরোধের প্রতিক্রিয়ায় চালানো হয়েছে।’ মুখপাত্র আরও বলেন, ‘ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর ড্রোন ইউনিট জাফা এবং আশকেলনের অধিকৃত এলাকায় ইহুদিবাদী সরকারের অবস্থান লক্ষ্য করে দুটি ড্রোন ব্যবহার করে আরও দুটি অভিযান পরিচালনা করেছে, যা ইসরাইলের সামরিক এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত করেছে বলে জানিয়েছে বাহিনী।’ তিনি বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া এবং গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত ইয়েমেন আপনাদের পাশে থাকবে।’
ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে লাখো ইসরাইলী : ইসরাইলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী। এর ফলে লাখ লাখ ইসরাইলীকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আরবি নেটওয়ার্কের মতে, ইসরাইলী গণমাধ্যম গত শুক্রবার অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর দিয়েছে। প্রতিবেদনটিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী শাসকগোষ্ঠীর দিকে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইসরাইলী গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দেশটির কেন্দ্রস্থলের বিশাল এলাকায় সাইরেন শোনা গেছে। ইসরাইলী টিভি চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, পূর্ব তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। ইসরাইলী সূত্র আরও জানিয়েছে, ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবরে হাজার হাজার নাগরিককে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
হুঁশিয়ারি ইরানের যুদ্ধ ১২ দিনের বদলে ১৫ দিন চললে ইসরাইলকে চরম ভুগতে হতো : ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, দেশটির কাছে এমন এক সামরিক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে যা এখনো ব্যবহার করা হয়নি। তিনি শত্রুদের উদ্দেশে সতর্ক করে বলেন, ‘ভুল হিসাব কষবেন না, কিংবা এমন কোনো নির্বুদ্ধিতার কাজ করবেন না যার জবাব দিতে হবে ইরানকে।’ গত শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, জুন মাসে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত যুদ্ধে ইরানের উন্নত সরঞ্জাম, বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়নি। তিনি বলেন, গত এক বছরে ইরান নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে, যেগুলো চালনাযোগ্য ওয়ারহেডে সজ্জিত। এই ওয়ারহেডগুলো আকাশে প্রবেশের পর গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে এবং নির্দিষ্ট কক্ষপথ অনুসরণ করতে হয় না। ফলে এগুলো বহুতল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যেমন মার্কিন তৈরি টিএইচএএড ও প্যাট্রিয়ট, এড়িয়ে যেতে সক্ষম।
নাসিরজাদে জানান, যদিও ১২ দিনের যুদ্ধে এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি, তবুও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্লান্ত করে তোলে। ‘যদি যুদ্ধ ১২ দিনের বদলে ১৫ দিন চলত, শেষ তিন দিনে প্রায় কোনো ক্ষেপণাস্ত্রই শত্রুর পক্ষে প্রতিহত করা সম্ভব হতো না’ তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত্ব হলে তা শত্রুপক্ষের জন্য ভয়াবহ হতো এবং তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শুরুতে যেমন ছিল তেমন থাকত না। ‘এ কারণেই তারা যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানিয়েছিল,’ মন্তব্য করেন ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
গত ১৩ জুন ইসরাইল ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও আবাসিক স্থাপনায় আঘাত হেনে আগ্রাসন শুরু করে। পরবর্তীতে ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র নাতাঞ্জ, ফর্ডো ও ইসফাহানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর জবাবে ইরানি সেনারা তাৎক্ষণিক পাল্টা আঘাত হানে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পসের এয়ারোস্পেস বাহিনী ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩’ এর অংশ হিসেবে ইসরাইলী দখলকৃত অঞ্চলের বিভিন্ন শহরে ২২ দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ইরানি সেনারা কাতারের আল-উদেইদ ঘাঁটিতে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এটি পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে ২৪ জুন কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতিতে যুদ্ধের ইতি ঘটে।