আনাদোলু এজেন্সি,,আল জাজিরা : ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চলমান থাকলেও ত্রাণ প্রবেশে দেওয়া হচ্ছে বাধা। এতে করে গাজায় তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে এবং এর ফলে ক্ষুধা ও দুর্ভোগে কাতর হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। মূলত সীমিত সীমান্ত খোলা থাকায় ত্রাণ সরবরাহে বড় বাধা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক এই সংস্থাটি এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থাগুলো। তবে ইসরায়েলের অব্যাহত বিধিনিষেধের ফলে সহায়তা সরবরাহে বড় বাধা তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। গত মঙ্গলবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মুখপাত্র আবির ইতেফা বলেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গত মাসে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু সীমিতভাবে সীমান্ত খোলা থাকার কারণে ত্রাণের পরিমাণ এখনো অত্যন্ত কম। ইতেফা বলেন, “আমাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার দরকার। দ্রুতগতিতে ত্রাণ সরানো জরুরি। আমরা সময়ের সঙ্গে দৌড়াচ্ছি। শীত চলে আসছে, অথচ মানুষ এখনো ক্ষুধায় ভুগছেন।” ডব্লিউএফপি জানায়, তারা গাজাজুড়ে ৪৪টি স্থানে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে।
তবে সংস্থাটি জানায়, যে পরিমাণ খাদ্য গাজায় প্রবেশ করছে তা যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে উত্তর গাজায় পৌঁছানো এখনো কঠিন। গত আগস্টেই বৈশ্বিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি শনাক্ত করেছিল। ইতেফা বলেন, “উত্তর গাজার প্রবেশপথ এখনো বন্ধ। ফলে আমাদের ত্রাণ কাফেলাগুলোকে দক্ষিণ দিকের দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় ঘুরে যেতে হচ্ছে। কার্যকর ত্রাণ বিতরণের জন্য সীমান্ত পারাপারের সব পয়েন্ট খোলা দরকার, বিশেষ করে উত্তর দিকেরগুলো।” এদিকে যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি সেনারা ‘ইয়েলো লাইন’-এ পিছু হটার পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজার বাড়িতে ফিরে গেছেন। কিন্তু অধিকাংশই ফিরে দেখেছেন, তাদের ঘরবাড়ি ও আশপাশের এলাকা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অনেকে এখনো তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়ে বসবাস করছেন। এছাড়া যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী আরও ত্রাণ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। শীতের কঠিন সময় ঘনিয়ে আসায় তাদের উদ্বেগও বেড়েছে অনেকটা। গাজার সরকারি তথ্য অফিস জানিয়েছে, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ গড়ে দিনে ১৪৫টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। যদিও যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী দৈনিক ৬০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা।
এরই মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা চালানো অব্যাহত রেখেছে। মঙ্গলবার গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার হামলায় একজন নিহত ও একজন আহত হন। উত্তর গাজার জাবালিয়ায়ও সেনাদের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৪০ জন নিহত ও ৬০৭ জন আহত হয়েছেন।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলা ও সেটেলারদের সহিংসতা বাড়ছে: দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ সেটেলারদের হামলা বেড়েছে। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এসব এলাকায় ব্যাপক হামলা, ভূমি দখল, অগ্নিসংযোগ ও ফসল লুটের ঘটনা ঘটছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে নাবলুসের দক্ষিণে ওয়াদি ইয়াসুফ এলাকায় ইসরায়েলি সেটেলারদের বড় একটি দল সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফিলিস্তিনিদের কৃষিজমিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে যেতে বাধা দেওয়া হয়। গত সপ্তাহেও একই এলাকায় সেটেলাররা ইয়াসুফ ও ইসকাকা গ্রামের জমির ওপর নির্মিত অবৈধ কফার তাপুয়াহ বসতি থেকে একটি সড়ক নির্মাণ করে এবং ফিলিস্তিনিদের কৃষিজমি বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করে। হেবরনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি বাহিনী ৩৫ বছর বয়সী আহমেদ রুবহি আল-আত্রাশের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। দুদিন আগে শহরের উত্তর প্রবেশমুখে এক ইহুদি সেটেলারদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়।
জেরুসালেমের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বেইত আনান শহরে নিজেদের জমিতে জলপাই সংগ্রহ করার সময় দুই ফিলিস্তিনি ভাইয়ের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনারা। তাদের একজন আধান জামহুর জানান, সেনারা তাদের আটক করে, গাড়ি ও জলপাই ফসল বাজেয়াপ্ত করে এবং পরে কাছের সামরিক শিবির থেকে ছেড়ে দেয়। রামাল্লাহর উত্তর-পশ্চিমে, আত্তারা শহরের আশপাশের ফিলিস্তিনি জমিতে হামলা চালিয়ে জলপাই চুরি করেছে ইসরায়েলি সেটেলাররা। ওয়াফার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ বসতির দখলদাররা পূর্বাঞ্চলের মাঠ থেকে জলপাই কেটে নিয়ে যায়, অন্যদিকে কিছু সেটেলার ফিলিস্তিনিদের জমিতে গবাদিপশু চরায় ও একটি কূপের পানি চুরি করে নেয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জলপাই সংগ্রহ মৌসুমে ইসরায়েলি সেটেলার ও সেনাবাহিনীর সহিংসতা ও ভূমি দখল বাড়ছে। প্রতিবছর এই মৌসুমে ফিলিস্তিনি কৃষকদের জমিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয় এবং হামলার ঘটনা বেড়ে যায়।