বিবিসি, সিজিটিএন,রয়টার্স : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চীনের বিজয় উদযাপনে প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজিত হয়েছে সামরিক কুচকাওয়াজ। গতকাল বুধবার আয়োজিত ৮০তম এই কুচকাওয়াজকে বিশ্বের সামনে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এবারের প্যারেডে অন্তর্ভুক্ত ছিল অত্যাধুনিক লেজার অস্ত্র, পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, দূরনিয়ন্ত্রিত ডুবোজাহাজ (ড্রোনের মতো সাবমেরিন), অস্ত্রসজ্জিত নেকড়ে রোবট এবং চীনা সেনার বিশাল বহর।
তিয়েনআমেন স্কয়ারে সমবেত ৫০ হাজারের বেশি মানুষের উদ্দেশ্যে শি বলেন, মানবজাতি আজ জটিল এক সমীকরণের মুখোমুখি হয়েছে। তাদের সামনে বিকল্প রয়েছে যুদ্ধ বা শান্তি এবং আলোচনা বা সংঘাতের মধ্যে থেকে বাছাই করার। আমরা হয় সবাই জয়ী হতে পারি অথবা সবাইকে দমিয়ে একচ্ছত্র মালিক হতে পারি। তবে চীনারা ইতিহাসের সঠিক পক্ষে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে শি উপস্থিত হন আধুনিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা নেতা মাও সে তুংয়ের আদলে পোশাক পরিহিত অবস্থায়। মঞ্চে তার পাশে ঘনিষ্ঠ মিত্রের মতো ছিলেন পশ্চিমা বিশ্বে সমালোচিত দুই নেতা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন। এর আগে ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোসহ ২৫টির বেশি দেশের আমন্ত্রিত নেতার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন শি।
বক্তব্য শেষে ছাদখোলা লিমুজিনে চড়ে সেনাবহর ও অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সরাসরি পর্যবেক্ষণে নামেন চীনা প্রেসিডেন্ট। আয়োজনের এক পর্যায়ে বিশাল ব্যানার নিয়ে আকাশে উড়ে বেড়ায় সামরিক হেলিকপ্টার। এছাড়া, আকাশ প্রতিরক্ষা প্রদর্শনে নির্দিষ্ট ফরমেশন মেনে ৭০ মিনিটের মহড়া দেয় চীনা বিমানবাহিনী।
এদিকে, বেইজিং-মস্কো-পিয়ংইয়ংয়ের সখ্যতা দেখে চটেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অনুষ্ঠান যখন শুরু হতে যাচ্ছে, তখন নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি চীনা প্রেসিডেন্টকে উল্লেখ করে বলেন, আপনারা যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা করবেন, তখন কষ্ট করে পুতিন আর কিমকে আমার উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে দেবেন। তবে মনে রাখবেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়েই জাপানি বাহিনীকে পরাজিত করেছিল চীন।
চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হলেও কার্যকরী সক্ষমতায় এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র: গতকাল বুধবারের সামরিক কুচকাওয়াজে স্পষ্ট হয়েছে, চীন দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফেলছে এবং বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তোলার মতো সম্পদও তাদের রয়েছে। তবে কার্যকরী সক্ষমতা ও যুদ্ধ পরিচালনার কৌশলে এখনো যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সামরিক রূপান্তর কর্মসূচির সহকারী অধ্যাপক মাইকেল রাস্কা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে এমন একটি সংস্কৃতি রয়েছে, যেখানে মাটিতে অবস্থানরত ইউনিটগুলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও নতুনত্ব আনার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। অন্যদিকে চীনে সবকিছুই শীর্ষ থেকে নির্দেশনার ওপর নির্ভরশীল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনার কাছে আধুনিক প্ল্যাটফর্ম ও দৃষ্টিনন্দন অস্ত্র থাকতে পারে, কিন্তু শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশ না এলে সেগুলো কোনোভাবেই কাজে লাগবে না। রাস্কার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা যুদ্ধে কার্যকর কারণ তাদের কৌশল মূলত ‘নিচ থেকে ওপরে যেখানে পরিস্থিতির পরিবর্তন অনুযায়ী ইউনিটগুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর ফলে তারা যেকোনো যুদ্ধে বেশি চটপটে ও উদ্ভাবনী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। চীন সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন, ‘কার্যকরী পর্যায়ে অনেক সময় দেখা যায় তারা যতটা দক্ষতার দাবি করে, বাস্তবে ততটা নয়।’ তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, গত মাসে ফিলিপাইনের কোস্টগার্ডকে ঠেকাতে গিয়ে চীনা দুটি জাহাজ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল।