এশিয়া
চীনের নতুন আবিষ্কার
৬০ হাজার বছর জ্বালানি সরবরাহে সক্ষম
সীমাহীন এক জ্বালানির উৎসের সন্ধান পেয়েছে চীন। এই জ্বালানি দিয়ে দেশটি ৬০ হাজার বছর চলতে পারবে-এমনই দাবি করেছেন বেইজিংয়ের ভূবিজ্ঞানীরা। তারা জানায়, ইনার মঙ্গোলিয়ায় বায়ান ওবো খনিজ কমপ্লেক্সে বিপুল
Printed Edition

১ মার্চ, ডেইলি মেইল : সীমাহীন এক জ্বালানির উৎসের সন্ধান পেয়েছে চীন। এই জ্বালানি দিয়ে দেশটি ৬০ হাজার বছর চলতে পারবে-এমনই দাবি করেছেন বেইজিংয়ের ভূবিজ্ঞানীরা। তারা জানায়, ইনার মঙ্গোলিয়ায় বায়ান ওবো খনিজ কমপ্লেক্সে বিপুল পরিমাণ থোরিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে। এটি এতটা বেশি যে, তা দিয়ে চীনের প্রতিটি বাড়ির চিরদিনের জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব।
থোরিয়াম হলো হালকা মাত্রার একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ। এটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি ওই খনি থেকে সম্পূর্ণ থোরিয়াম উত্তোলন করা যায়, তাহলে তার পরিমাণ হবে প্রায় ১০ লাখ টন। দ্য সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মজুদ যদি পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়, তাহলে বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতার অবসান ঘটতে পারে।
গবেষকদের মতে, ইনার মঙ্গোলিয়ার একটি লোহার আকরিকের খনি থেকে পাঁচ বছরে যে বর্জ্য পাওয়া যাবে, তাতে থাকা থোরিয়াম দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার বছরের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব। এই গবেষণা এমন সময়ে সামনে এলো, যখন চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র নতুন পারমাণবিক জ্বালানির সন্ধানে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের ২৩৩টি থোরিয়াম সমৃদ্ধ অঞ্চলের সন্ধান মিলেছে। যদি এ তথ্য সঠিক হয়, তাহলে দেশটিতে যে পরিমাণ থোরিয়াম জমা রয়েছে, তা আগের হিসাবকে অনেকটাই ছাড়িয়ে যাবে। প্রচলিত পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম-২৩২-এর তুলনায় থোরিয়ামের পরিমাণ ৫০০ গুণ বেশি। ফলে চীনের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিয়ে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। পারমাণবিক চুল্লি তেজস্ক্রিয় পদার্থকে ফিশন (বিগলন) নামে এক প্রক্রিয়ায় শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এই প্রক্রিয়ায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ ভেঙে স্থিতিশীল পদার্থে পরিণত হয় এবং বিপুল পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন করে। এরপর এই তাপশক্তি স্টিম টারবাইন চালানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
থোরিয়াম নিজে থেকে ফিশনযোগ্য নয়। এর অর্থ হলো, ফিশন প্রক্রিয়ায় সরাসরি এটি ব্যবহার করা যায় না। তবে এটি ফিশন বিক্রিয়ার ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। কারণ, থোরিয়াম 'উর্বর' পদার্থÍঅর্থাৎ, যখন এটি নিউট্রনের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন ইউরেনিয়াম-২৩৩-তে রূপান্তরিত হতে পারে। মল্টেন-সল্ট রিঅ্যাকটর নামক প্রযুক্তিতে থোরিয়াম লিথিয়াম ফ্লোরাইডের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে প্রায় ১৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়। এরপর এটি নিউট্রনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে, যা ফিশন বিক্রিয়াকে তরান্বিত করে। এই প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত থোরিয়াম ধীরে ধীরে জ্বালানিতে রূপ নেয় এবং শক্তি উৎপন্ন করে। এই প্রক্রিয়ায় পারমাণবিক চুল্লি কার্যত অসীম শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি চীনের জ্বালানি চাহিদার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে পারে।