আনাদুলো, রয়টার্স, টাইমস অব ইন্ডিয়া : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলী হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও সাড়ে তিন শতাধিক মানুষ। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫৩ হাজার ৩৩০ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরাইলী হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুর্কি বার্তাসংস্থা।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী আক্রমণে আরও ৩৬০ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৪ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরইল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরইল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরাইলী বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১৯৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৮ হাজার ৯৯৩ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ইসরইলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, ইসরইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের অধিকাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরইল।

গাজায় দখলদার ইসরইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে ডাচ সরকারের কঠোর অবস্থানের দাবিতে নেদারল্যান্ডসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এক লাখ মানুষ। গত রোববার হেগ শহরে অভূতপূর্ব এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রায় এক লাখ বিক্ষোভকারী এই মিছিলে যোগ দিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই লাল পোশাক পরে গাজায় ইসরইলের অবরোধের বিরুদ্ধে ‘রেড লাইন’ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন।

এই মিছিলটি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সামনেও গিয়েছে। এই আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেছিল। ওই মামলায় গত বছর দক্ষিণ গাজা শহর রাফায় সামরিক আক্রমণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তবে ইহুদিবাদী ইসরইল গণহত্যার অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আদালতে তারা যুক্তি দিয়েছে যে গাজায় তাদের অভিযান আত্মরক্ষার জন্য এবং ৭ অক্টোবর ইসরইলে আক্রমণকারী হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে।

এ নিয়ে বিক্ষোভ আয়োজক সংস্থা অক্সফাম নোভিব জানিয়েছে, ডাচ সরকার গাজায় ইসরইলের সংঘটিত যুদ্ধাপরাধকে উপেক্ষা করেছে। চলতি মাসের শুরুতে ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি চান ইইউ ইসরইলের সাথে তাদের সহযোগিতা চুক্তি পুনর্বিবেচনা করুক। কিন্তু ডাচ সরকার এখনো পর্যন্ত ইসরইলের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করা থেকে বিরত রয়েছে এবং সরকারি জোটের বৃহত্তম দলের নেতা গির্ট ওয়াইল্ডার্স বারবার ইসরইলের প্রতি অটল সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।