মিডল ইস্ট মানিটর, এএফপি, আনাদোলু , রয়টার্স: দীর্ঘমেয়াদি ইসরাইলী অবরোধের মধ্যে গাজা উপত্যকায় নতুন করে ইসরাইলী হামলায় গত শনিবার ভোর থেকে অন্তত ৪৪ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন শিশু রয়েছে। এই অবরোধ এবং হামলা গাজায় চলমান মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ অঞ্চলে একটি অস্থায়ী তাবুতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের ওপর ইসরাইলী বিমান হামলায় চারজন নিহত ও আরও অনেকে আহত হন।
এর আগে শনিবার সকালে গাজা সিটির সাবরা এলাকায় একটি তাবুতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল, যাতে তালিব পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হন বলে জানায় ফিলিস্তিনী বার্তা সংস্থা ওয়াফা। নিহতদের মধ্যে তিন শিশু, তাদের মা এবং সৎ বাবা ছিলেন বলে জানান নিহতদের এক স্বজন ও শিশুদের নানা ওমর আবু আল-কাস। তাঁরা ঘুমিয়ে ছিলেন, কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই ইসরাইলী বিমান থেকে বোমা হামলা চালানো হয়। তাঁরা কোনো অন্যায় করেননি।" একইসাথে গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ড্রোন হামলায় ছয়জন এবং শেখ রাদওয়ান এলাকায় জাকুত পরিবারের একটি অ্যাপার্টমেন্টে বিমান হামলায় আরও একজন নিহত হন।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলী হামলায় একদিনে আরও ২৩ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। এর মধ্য দিয়ে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা ৫২ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী হামলায় আরও ২৩ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। যার ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলী আগ্রাসনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ হাজার ৮১০ জনে পৌঁছেছে বলে শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী হামলায় ১২৪ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে আহতের সংখ্যা বেড়ে বেড়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৩ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। এদিন তারা ১২০০ মানুষকে হত্যা করে প্রায় ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। হামাসের হামলার প্রতিশোধে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলী সেনাবাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ৫২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনী। আহত হয়েছেন এক লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। তবে বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে দখলদার ইসরাইল। দ্বিতীয় দফার এ আগ্রাসনে ২৭০০ ফিলিস্তিনীকে হত্যা করা হয়। এছাড়া আহত হয়েছেন সাত হাজারেরও বেশি।
এদিকে ইসরাইলী অবরোধ ও দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ত্রাণ প্রবেশে বাধার কারণে গাজা উপত্যকার ৬৫ হাজারের বেশি শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। গত শুক্রবার ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটির সরকার এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট মনিটর। গাজা উপত্যকার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলী দখলদারিত্ব এমন দুর্ভিক্ষ তৈরি করছে যা বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে। আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে ক্রসিং বন্ধ করেছে। পাশাপাশি ৩৯ হাজার ট্রাক ত্রাণ, জ্বালানি এবং ওষুধ বহনকারী প্রবেশে বাধা দিয়ে ২৪ লাখেরও বেশি বেসামরিক নাগরিকের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার সমস্ত বেকারি ৪০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে, যার ফলে বাসিন্দারা রুটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টি তীব্রতর হচ্ছে, বিশেষ করে শিশু, অসুস্থ এবং বয়স্কদের মধ্যে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের ফলে অপুষ্টি ও খাদ্য সংকটের কারণে ৬৫ হাজারের বেশি শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, চলমান গণহত্যার মধ্যে মানবিক ও স্বাস্থ্য বিপর্যয়কে আরও খারাপ করে তুলেছে ইসরাইলের ৭০ দিনের জন্য ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ার নির্মম সিদ্ধান্ত।