এশিয়া
মার্কিন অস্ত্র ফেরত দেবে না তালেবান
Printed Edition

৮ ফেব্রুয়ারি, সিবিএস নিউজ, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট : আফগানিস্তানের তালেবান সরকার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে আগ্রহী। তবে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ২০২১ সালে আফগান সেনাদের কাছে হস্তান্তর করা মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ফেরত দেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো যেসব সামরিক সরঞ্জাম ও যানবাহন রেখে গেছে, সেগুলো এখন তাদের সম্পত্তি।
তালেবানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল কাহার বালখি সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন কূটনৈতিক অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত। আমরা যুদ্ধের অধ্যায় বন্ধ করতে চাই এবং সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাই।’ সামরিক সরঞ্জাম ফেরত দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো আফগানিস্তান রাষ্ট্রের সম্পদ। এগুলো আফগানিস্তান রাষ্ট্রের দখলেই থাকবে।’
পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টে ন্যাটো-সমর্থিত সরকার পতনের আগে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ৭২০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম হস্তান্তর করা হয়েছিল। এতে বিমান, হামভি, যুদ্ধট্যাংক, অস্ত্র, গোলাবারুদ, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, ক্যামোফ্লেজ ইউনিফর্ম, যোগাযোগ সরঞ্জামসহ আরও অনেক সামরিক সরঞ্জাম ছিল। তবে বিগত চার বছরে এসবের অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে বা তালেবান যোদ্ধারা ব্যবহার করে ফেলেছে।
বালখি বলেন, ‘এই সম্পদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের মধ্যে কোনো চুক্তি ছিল না। মানুষ তাদের রাষ্ট্রের সম্পদের বিষয়ে চুক্তি করে না। তারা পারস্পরিক স্বার্থের ক্ষেত্র ও সুযোগ খুঁজে বের করার জন্য চুক্তি করে।’
গত মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগের দিন ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনে এক জনসমাবেশে প্রতিশ্রুতি দেন, আফগানিস্তানে ফেলে আসা কোটি কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম পুনরুদ্ধার করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা হবে।
২০২১ সালে ট্রাম্প প্রশাসনই ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের জন্য তালেবানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছিল। তবে এই প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার ব্যবস্থাপনা নিয়ে জো বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেছেন রিপাবলিকান এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট আমাদের সামরিক সরঞ্জামের একটি বিশাল অংশ শত্রুর হাতে দিয়ে দিয়েছেন।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘যদি আমরা প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার খরচ করতে থাকি, তাহলে তাদের জানিয়ে দেয়া উচিত যে যতক্ষণ না তারা আমাদের সামরিক সরঞ্জাম ফেরত দেবে, ততক্ষণ আমরা তাদের অর্থ সাহায্য বন্ধ রাখব। তাই, আমরা তাদের সামান্য কিছু টাকা দেব, কিন্তু আমরা আমাদের সামরিক সরঞ্জাম ফেরত চাই।’
তালেবান সরকারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মার্কিন সেনাদের ফেলে যাওয়া সামরিক সরঞ্জামের ঝলক দেখা যায়। গত আগস্টে তালেবানদের ক্ষমতার তিন বছর পূর্তিতে বাগরাম বিমানঘাঁটিতে আয়োজিত এক বিশাল কুচকাওয়াজে এই সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হয়।
কাবুল, কান্দাহার, হেরাত, খোস্ত ও গজনির বিভিন্ন ছবি বিশ্লেষণ করে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী ২০২১ সালের আগস্টে কাবুল পতনের আগে আফগান জাতীয় প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের কাছে হামভিসহ অন্যান্য সামরিক ও ভারী যানবাহন- যেমন রেঞ্জার ও সেনা ট্রাক হস্তান্তর করেছিল। এই হামভিগুলোর বেশির ভাগই আফগানিস্তানের দুই প্রধান শক্তিকেন্দ্র কাবুল ও কান্দাহারে দেখা গেছে। কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পেছনে অনেকগুলো হামভি ফেলে রাখা হয়েছে। কান্দাহারে বেশ কয়েকটি হামভি এখন পরিত্যক্ত মার্কিন সামরিক বিমানঘাঁটি স্পিন বোলদাক সড়কের কাছে পড়ে রয়েছে।