আরটিভি নিউস, এএফপি, বেলেম রয়টার্স : কপ৩০ সম্মেলনে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোসহ উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিছু বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে কয়েকটি দেশ। জলবায়ু সংকট নিরসনে ধনী দেশগুলোর আর্থিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিও আলোচনায় তোলার কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে গত বুধবার সমঝোতার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টার কথা ছিল আয়োজক দেশ ব্রাজিলের।
ওই পদক্ষেপগুলো আগের বিভিন্ন সম্মেলনে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছিল। ব্রাজিলের বেলেম শহরে কপ সম্মেলন শুরুর দিন গত সোমবার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। তবে এ নিয়ে আয়োজক দেশ ব্রাজিল অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ করবে এবং সমঝোতার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য মধ্যস্থতা করবেÍএমন প্রতিশ্রুতির পর মূল আলোচনা পেছানো হয়েছিল। গত বুধবারের আলোচনার জন্য চারটি বিষয় বিবেচনায় রয়েছে। সেগুলো হলো বাণিজ্য, স্বচ্ছতা, জলবায়ু-সংক্রান্ত অর্থায়নের দায়বদ্ধতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এমন গ্যাস নিঃসরণ কমানো। শেষের দুটি বিষয় বেশি সংবেদনশীল। কারণ, ধনী দেশগুলো আর্থিক সহায়তা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয়। আর জলবায়ু পরিবর্তনে জীবাশ্ম জ্বালানির দায় নিয়ে আলোচনা চায় না তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো।
সম্মেলনের ফাঁকে দুই দিন ধরে বিষয় দুটি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পর গতকাল দেখার পালা ছিল ব্রাজিল আদৌ সফল হয়েছে কি না। আর্থিক সহায়তা ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে মধ্যবর্তী কোনো অবস্থান খুঁজে পেয়েছে কি না। আয়োজক হিসেবে ব্রাজিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষমতা নেই। তবে সমঝোতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তারা।
কপ সম্মেলনে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে অবশ্যই জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) চুক্তিতে সই করা ১৯৭ দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মতি লাগবে। ব্রাজিলের সঙ্গে দেশগুলোর অনানুষ্ঠানিক আলোচনা সম্পর্কে জানাশোনা আছে এমন একজন পর্যবেক্ষক এএফপিকে জানিয়েছেন, কিছু দেশ আলোচনায় অংশ না নিলেও তা ‘গঠনমূলক’ হয়েছে।
আলোচনায় জোর ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রের: আর্থিক দায়বদ্ধতা ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো নিয়ে সবচেয়ে জোর দিচ্ছে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জোট (এওএসআইএস)। বেলেমে কপ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো যেন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিরাপদ মাত্রায় ধরে রাখার ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করেÍএমনটাই দাবি এই জোটের। এতে সম্মতি জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী তাপমাত্রা বৃদ্ধি সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখাটা সম্ভব হবে না। কারণ, এই লক্ষ্য ধরে রাখার জন্য যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে পারেনি দেশগুলো। সম্মেলনে অংশ নেওয়া একজন কূটনীতিক বলেন, ব্রাজিল শেষ পর্যন্ত বিষয়টি মোকাবিলার সাহস দেখিয়েছে।
তবে এ জন্য ব্রাজিলকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। পর্যবেক্ষকেরা জানিয়েছেন, তেল উৎপাদনকারী ২২টি আরব দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো নিয়ে আলোচনা শুরুর জন্য ব্রাজিলের সমালোচনা করেছে। এ ছাড়া আর্থিক দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনার জন্য ধনী দেশগুলোও আপত্তি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, এই বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেই, তবে তারা সমঝোতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সম্মেলনস্থলে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ: এদিকে কপ৩০-এর সম্মেলনস্থলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারীরা। এ সময় স্থানীয় আদিবাসী ও অ-আদিবাসী বিক্ষোভকারীদের একটি দল সম্মেলনস্থলেও হামলা চালায়। তখন কয়েক ডজন নারী-পুরুষ দৌড়ে সম্মেলনস্থলের মেটাল ডিটেক্টর ভেদ করে ব্লু জোনে ঢুকে পড়েন। তখন জাতিসংঘের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের থামাতে ছুটে যান। তাঁদের ধরে ফেলেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তারক্ষীদের ধাক্কা দেন, চিৎকার করতে থাকেন। বিক্ষোভে একজন অ-আদিবাসী পুরুষ একটি ব্যানার ধরে ছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘আমাদের বন বিক্রির জন্য নয়’। অন্যদের পরনের টি-শার্টে লেখা ছিল ‘জুন্তোস’। স্প্যানিশ এই শব্দের বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘একসঙ্গে’। বিক্ষোভকারীরা সেখানে ব্যানার নাড়াতে থাকেন। জোর করে সরিয়ে দেওয়ার আগপর্যন্ত সম্মেলনস্থলে নানা স্লোগান দেন তাঁরা। এ বিষয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু-বিষয়ক মুখপাত্র জানান, এ ঘটনায় দুজন নিরাপত্তারক্ষী সামান্য আহত হয়েছেন। সম্মেলনস্থলের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে এই অনুপ্রবেশের জন্য কে বা কারা জড়িত, সেটা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেন, ব্রাজিল আর জাতিসংঘের নিরাপত্তারক্ষীরা সব ধরনের প্রটোকল মেনে সম্মেলনস্থলকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে সম্মেলনস্থল পুরোপুরি সুরক্ষিত আছে।