আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪১১ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, শুধু কুনার প্রদেশেই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানে ভূমিকম্পে অন্তত ৩ হাজার ১২৪ জন আহত হয়েছেন এবং ধসে গেছে ৫ হাজার ৪০০টিরও বেশি ঘরবাড়ি। ৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পের পর এখনো নিখোঁজদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। দুর্গম পার্বত্য এলাকায় রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়া ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উদ্ধারকর্মী ও সহায়তাকারীরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি।
আফগানিস্তানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়ে থাকে, বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা অঞ্চলে, যেখানে ইউরেশীয় ও ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থল।
জাতিসংঘের সতর্কতা: জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়ক ইন্দ্রিকা রাটওয়াটে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ব্যাপক ভূমিধস ও পাথর খসে পড়ায় দুর্গত এলাকায় প্রবেশ করা খুবই কঠিন হয়ে গেছে। সবার জন্যই প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে পড়েছে।
ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৬
আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশ। গতকাল রোববার মধ্যরাতের একটু আগে। নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন মতিউল্লাহ শাহাব। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় তার। জেগে দেখেন ঘরবাড়ি কাঁপছে। বুঝে যান, ভূমিকম্প হচ্ছে। আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলজুড়ে আঘাত হানা ওই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৬।
মতিউল্লাহ শাহাবের বাড়ি কুনার প্রদেশের আসাদাবাদ গ্রামে। গ্রামটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে ১৬ কিলোমিটার বা প্রায় ১০ মাইল দূরে। তার পরিবারের ২৩ জন সদস্য। ওই রাতে সবাই যার যার শোবার ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। ভয় পেয়েছিলেন, হয়তো দেয়াল ভেঙে তাদের ওপর পড়তে পারে। পরে পুরো রাত তাদের বাগানে কাটে। শাহাব বলেন, ‘আমরা সবাই ভয় পেয়েছিলাম।’ ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের কুনার ও নানগারহার প্রদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বহু দূরে রাজধানী কাবুল থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। প্রতিবেশী পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও ভূকম্পন হয়েছে।
বিবিসিকে তিনি বলেন, অনেকের লাশ দেখেছি আমি। ১৭ বার পরাঘাত অনুভব করেছি।’ গ্রামবাসীকে কবর খুঁড়তে সহায়তা করেছেন শাহাব। বলেন, ‘আমি যে গ্রামটিতে গেছি, সেটা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।’ স্থানীয় একজন তাঁকে বলেছেন, ভূমিকম্পে তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তানের প্রাণ গেছে। গ্রামবাসীর করুণ অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে শাহাব বলেন, ‘সবার মুখে, শরীরে ধুলোবালি লেগে রয়েছে। কারও মুখে কথা নেই। সবাই যেন রোবট হয়ে গেছেন। এ বিষয়ে (ভূমিকম্প) কেউ কিছু বলছেন না।’
অনেক জায়গায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তালেবান প্রশাসনের উদ্ধারকাজ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অনেক পার্বত্য এলাকায় হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। অনেক জায়গায় এখনো উদ্ধারকারী দলের পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এমন অনেক জায়গা থেকে খবর আসছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা পড়ে আছেন। তাঁদের দ্রুত সহায়তা দরকার।