DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

এশিয়া

ইসরাইলের ৩ পণবন্দীকে মুক্তি দিল হামাস

ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনের গাজায় পণবন্দী থাকা তিন জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।

Printed Edition

৮ ফেব্রুয়ারি, আল জাজিরা : ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনের গাজায় পণবন্দী থাকা তিন জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। গতকাল শনিবার ইসরাইলের কারাগারগুলোয় বন্দী থাকা ১৮৩ জন ফিলিস্তিনীর বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর এল-বালাহতে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। গতকাল শনিবার মুক্তি পেতে যাওয়া ফিলিস্তিনীদের সবাই পুরুষ। তাদের বয়স ২০ থেকে ৬১ বছরের মধ্যে। হামাসের পক্ষ থেকে যে তিনজনের নাম জানানো হয়েছে, তারা সবাই বেসামরিক ব্যক্তি। তারা হলেন ৫২ বছর বয়সী এলি শারাবি, ৫৬ বছর বয়সী ওহাদ বেন আমি এবং ওর লেভি। রেভির বয়স ৩৪ বছর।

ইতোপূর্বে এই তিনজনের নামের তালিকা পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীর দফতর। এই তিনজনের পরিবার ও স্বজনদের তাদের মুক্তির কথা জানানো হয়েছে। পণবন্দী মুক্তি উপলক্ষে এরই মধ্যে গাজার মধ্যাঞ্চল-দেইর এল-বালাহ এলাকায় পৌঁছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির যানবাহনের একটি বহর। এদিকে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলে ফিরে আসা বন্দীদের অভ্যর্থনার জন্য ইসরাইলী বিমান বাহিনী তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ইসরাইলী গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গাজার বেড়ার কাছে একটি সামরিক স্থাপনায় প্রাথমিক তল্লাশির পর হেলিকপ্টারগুলো তিন জিম্মিকে মধ্য ইসরাইলের হাসপাতালে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত ১৯ জানুয়ারি ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরাইলের পক্ষ থেকেও ৩৮৩ জন ফিলিস্তিনী বন্দীকে মুক্ত করা হয়েছে। এদিকে মুক্তি পেতে চলা বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনী বন্দীর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে ইসরাইলী বাহিনী। ফিলিস্তিনী বন্দীদের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমের শহর ও গ্রামে এই অভিযান চালানো হয়েছে।

গাজার ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে আছে ১২ হাজার লাশ: গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান বলেছেন, গাজায় প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশের ওপর ইসরাইলী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তার দাবি, উপত্যকার ধ্বংসস্তূপের নীচে ১২ হাজারেরও বেশি লাশ আটকা পড়ে আছে।

গাজা শহরের ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে সালামা মারুফ বলেন, গাজায় ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশের অনুমতি না দেয়ায় লাশ উদ্ধারে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইসরাইল সরকারের বিধিনিষেধের কারণে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস গাজায় ইসরাইলী যুদ্ধে নিহত ইসরাইলী বন্দীদের লাশও ফেরত দিতে পারবে না।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনী জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলী সরকারের গণহত্যার ১৫ মাসের যুদ্ধে কমপক্ষে ৪৭,৫৮৩ জন নিহত এবং ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩৩ জন আহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই শিশু এবং নারী। ১৫ জানুয়ারি ইসরাইলী সরকার হামাসের "নির্মূল" বা বন্দীদের মুক্তিসহ তাদের কোনও যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হতে বাধ্য হয়।

আগের দিন ফিলিস্তিন সরকারি মিডিয়া অফিস সতর্ক করে দিয়েছিল যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত "ন্যূনতম" পরিমাণ সাহায্য সরবরাহের অনুমতি না দিয়ে ইসরাইল উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতি "গুরুতরভাবে" খারাপ করছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, "গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করা সাহায্যের পরিমাণ এখনও ন্যূনতম প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম।" অফিসটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতাকারীদের চুক্তির মানবিক প্রোটোকল বাস্তবায়নের জন্য ইসরাইলের উপর চাপ প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছে।

এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক ট্র্যাজেডির বিষয়ে নীরব না থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ফিলিস্তিনীদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা ব্যর্থ করার জন্য "গাজার পুনর্গঠনের উপর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান ত্বরান্বিত করার" আহ্বান জানিয়েছে তারা।

গাজায় আরও ৫৭২ জন নিহত: গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ইসরাইলের যুদ্ধে নিহত ও আহতের সংখ্যা সম্পর্কে তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় মোট ২৬ জন নিহত হয়েছেন। নতুন করে চারজন নিহত, ২২ জন মৃতদেহ উদ্ধার এবং পাঁচজন আহত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এতে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলী হামলায় নিহতের মোট সংখ্যার সাথে আরও ৫৭২ জন নিহত যোগ হয়েছেন। যা বিচার বিভাগীয় কমিটি কর্তৃক প্রতিবেদন এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফাইল পর্যালোচনা করে যাচাই করার পর প্রমাণিত হয়েছে। ফলে ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলী হামলায় নিহতের নিশ্চিত সংখ্যা কমপক্ষে ৪৮ হাজার ১৮১ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩৮ জন। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে কয়েক হাজার মানুষ চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ৬১ হাজার ৭০৯ জন বলে জানিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষকে এখন মৃত বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।