রয়টার্স, ব্লুমবার্গ : যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শুল্ক অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছে চীন। গতকাল সোমবার অন্য দেশগুলোকে সতর্ক করেছে যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এমন কোনও অর্থনৈতিক চুক্তি না করে যা চীনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যেই চীন এই কঠোর বার্তা দিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা এ খবর জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনের ক্ষতির বিনিময়ে কোনও পক্ষ যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে, তাহলে চীন তার বিরুদ্ধে দৃঢ় ও পারস্পরিকভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।

এই বিবৃতিটি ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্ক ছাড় বা ছাড়পত্র পেতে ইচ্ছুক দেশগুলোকে চীনের সাথে বাণিজ্য সীমিত করতে চাপ দিচ্ছে। এমনকি আর্থিক জরিমানাও আরোপ করতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল অনেক দেশের ওপর ঘোষিত ব্যাপক শুল্ক ব্যবস্থা থেকে চীন ব্যতীত বাকি সবাইকে সাময়িক ছাড় দিয়েছেন। তবে চীনা পণ্যে শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। এর জবাবে চীনও ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। গত সপ্তাহে চীন জানায়, তাদের শুল্কহার আর বাড়ানো হবে না।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘সমতা’র অজুহাতে সব বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে এবং তাদেরকে তথাকথিত ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আলোচনায় বাধ্য করছে।

চীন জানায়, তারা তাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় এবং সক্ষম এবং সব পক্ষের সঙ্গে সংহতি জোরদার করতে আগ্রহী।

চীনভিত্তিক নীতিগত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্লেনামের পার্টনার বো ঝেংইউয়ান বলেছেন, যেসব দেশের বিনিয়োগ, শিল্প অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং ভোক্তা নির্ভরতা চীনের ওপর বেশি, তারা যুক্তরাষ্ট্রের দাবির পক্ষে যাবে বলে মনে হয় না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ এই ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে।

চীনের কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে এই সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক আহ্বান করছে বেইজি। সেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্যদের শাসিয়ে বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে’ বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ তুলবে।

এর আগে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার জানান যে, প্রায় ৫০টি দেশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

এরপর একাধিক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। যেমন : জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনায় সয়াবিন ও চাল আমদানি বাড়ানোর বিষয় বিবেচনা করছে। ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে খাদ্য ও পণ্য আমদানি বাড়িয়ে অন্য দেশগুলো থেকে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।

ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্ব বাণিজ্যকে বিঘ্নিত করতে পারে এমন আশঙ্কায় বিশ্ববাজারকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, এতে বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি দেশ সফর করেছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এই যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্ক যুদ্ধের মাঝখানে পড়ে গেছে। এই অঞ্চলের জন্য পরিস্থিতি জটিল, কারণ তাদের চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সাথেই বিপুল বাণিজ্য রয়েছে।

চীনের শুল্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে আসিয়ান অঞ্চল চীনের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ছিল, মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা চীনের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৬ শতাংশ।

মার্কিন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আসিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ছিল ৪৭৬.৮ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রকে এই অঞ্চলের চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত করে।

ভিয়েতনামী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করেই শি জিনপিং বলেন, শুল্ক যুদ্ধ কিংবা বাণিজ্যযুদ্ধে কারোই জয় হয় না।