আল-জাজিরা : ইসরাইলের কারাগারে আট মাস বন্দী থাকা মাহমুদ আবু ফউল মুক্তি পাওয়ার পর মায়ের গলা শুনতে পেয়েছেন। কিন্তু এই ফিলিস্তিনী তরুণ মায়ের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না।

মাহমুদের বয়স ২৮ বছর, বাড়ি গাজার উত্তরাঞ্চলে। গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে কামাল আদওয়ান হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল ইসরাইলী বাহিনী। এর পর থেকে তিনি ইসরাইলের বন্দিশালায় ছিলেন। কারারক্ষীরা তাকে এতাই নির্যাতন ও নিষ্ঠুরভাবে মারধর করেছেন যে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।

গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীন এ সপ্তাহে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনী বন্দী ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের অনেকের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

মাহমুদ ২০১৫ সালে ইসরাইলের বোমা হামলায় পা হারান। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, বন্দী থাকার সময় তাকে অবিরাম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। রাখা হয় ইসরাইলের কুখ্যাত সদে তেইমান কারাগারে। আরও অনেক বন্দী এ কারাগারে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীন এ সপ্তাহে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনী বন্দী ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের অনেকের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

মাহমুদ বলেছেন, তাকে ওই কারাগারে প্রচ- নির্যাতন ও মারধর করা হতো। এমন একদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে মাহমুদ বলেন, কারারক্ষীরা সেদিন তার মাথায় এত জোরে আঘাত করেন যে তিনি অচেতন হয়ে পড়েছিলেন।

মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমি বারবার আমাকে চিকিৎসা করাতে বলছিলাম। কিন্তু তারা শুধু আমার চোখে একধরনের ড্রপ দিয়েছেন, যেটি কোনো কাজই করেনি। আমার চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়ছিল, ময়লা বের হচ্ছিল ও ব্যথা করছিল। কিন্তু তারা গুরুত্ব দেননি।’

চিকিৎসা পেতে মাহমুদ অনশনের চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তার দাবি আমলেই নেয়নি।

অবশেষে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মাহমুদকে নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি পরিবারের দেখা পেতে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেখানে তার মা আসেন।

মাহমুদ বলেন, ‘তার (মায়ের) গলা শুনেই আমি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। আমি তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না, তবে শুধু গলার আওয়াজ শুনতে পাওয়াটাও আমার কাছে পুরো পৃথিবী পাওয়ার সমান।’

আমি বারবার আমাকে চিকিৎসা করাতে বলছিলাম। কিন্তু তারা শুধু আমার চোখে একধরনের ড্রপ দিয়েছেন, যেটি কোনো কাজই করেনি। আমার চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়ছিল, ময়লা বের হচ্ছিল ও ব্যথা করছিল, কিন্তু তারা গুরুত্ব দেননি।

মাহমুদ এখন গাজায় বাড়ির ধ্বংসাবশেষের কাছে একটি তাবুতে বসবাস করছেন। এখনো তার চোখের চিকিৎসা হয়নি। চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে তিনি সাহায্য কামনা করেছেন। ইসরাইলী কারাগারে বন্দীদের পদ্ধতিগতভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের প্রমাণ ক্রমে বাড়ছে। মাহমুদ যেসব নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন, সেগুলো ওই সব প্রমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ইসরাইলের কারাগার থেকে এ সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনীদের অনেককে দুর্বল ও অসুস্থ মনে হয়েছে বা তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। একজনের ওজন তার বন্দী হওয়ার আগের ওজনের অর্ধেক হয়ে গেছে।

প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বন্দী থাকা ১০০ সাবেক ফিলিস্তিনী বন্দীর সাক্ষ্য নথিবদ্ধ করেছে। তারা দেখেছে, শুধু সদে তেইমানের মতো কুখ্যাত বন্দিশালাতেই নয়; বরং ইসরাইলের সব কারাগারে পদ্ধতিগতভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়। মাহমুদ এখন গাজায় বাড়ির ধ্বংসাবশেষের কাছে একটি তাবুতে বসবাস করছেন। এখনো তার চোখের চিকিৎসা হয়নি। চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে তিনি সাহায্য কামনা করেছেন।

ফিলিস্তিনী বন্দীদের বিচারক, আইনজীবী অথবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয় না। তাদের সব অধিকার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। ইসরাইল অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনীর মরদেহ ফিরিয়ে দিয়েছে, যাঁরা বন্দী থাকার সময় মারা গেছেন।

গাজার হাসপাতাল সূত্র আল–জাজিরাকে বলেছে, কয়েকটি মরদেহে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং এমন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা দেখে মনে হচ্ছে খুব সম্ভবত তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ বলেন, ‘তাদের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না, তারা যখন বাধা দিয়েছেন, তখন তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।’

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৫ জন ফিলিস্তিনী বন্দী ইসরাইলী কারাগারে মারা গেছেন।

তাদের (বন্দী ফিলিস্তিনীদের) মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। তারা যখন বাধা দিয়েছেন, তখন ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।

ইসরাইলের মানবাধিকার সংস্থা বেইতসালেম গত বছর দেশটির কারাগার ব্যবস্থাকে ‘নির্যাতন শিবিরের জাল’ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যেখানে বন্দীরা পদ্ধতিগতভাবে শারীরিক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হন। কারাগারগুলোয় বন্দীদের যথেষ্ট খাবার ও চিকিৎসা দেওয়া হয় না এবং তারা যৌন নিপীড়নের শিকার হন।

ইসরাইলের কারাগার থেকে এ সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনীদের অনেককে দুর্বল ও অসুস্থ মনে হয়েছে বা শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। একজনের ওজন তার বন্দী হওয়ার আগের ওজনের অর্ধেক হয়ে গেছে। পাবলিক কমিটি এগেইনস্ট টর্চার ইন ইসরাইল (পিসিএটিআই) বলেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে বন্দী নির্যাতনের শতাধিক ঘটনার প্রতিবেদন দেওয়া হলেও ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ শুধু দুটি ঘটনা আইনের আওতায় এনেছে। তবে দুই মামলার কোনোটিতে কোনো কারাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়নি। পিসিএটিআই বন্দী নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত করা একটি ইসরাইলী মানবাধিকার সংগঠন।

ইসরাইলের কারাগারগুলোয় বন্দীদের ঠিকমতো খাবার ও চিকিৎসা দেওয়া হয় না এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হন।

ইসরাইলের ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিষ্ঠাতা রুচামা মার্টন বলেন, তিনি দশকের পর দশক ধরে ইসরাইলে নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে আসছেন। কিন্তু নির্যাতন বন্ধে ব্যর্থ হয়েছেন।

ইসরাইলের দৈনিক পত্রিকা হারেৎজকে রুচামা বলেন, ‘হয়তো মানুষ আর এটি অস্বীকার করতে পারেন না। কিন্তু বাস্তবে এটি (তাদের কাছে) স্বাভাবিক হয়ে গেছে।’ ইসরাইলের উগ্র দক্ষিণপন্থী জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ফিলিস্তিনী বন্দীদের প্রতি কঠোর আচরণের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি দেশটির কারাগার পরিচালনা ব্যবস্থার তদারকি করেন। এখনো প্রায় ৯ হাজার ফিলিস্তিনী ইসরাইলী কারাগারে রয়েছেন। তাদের অনেকেরই বিচার হয়নি বা কোনো নিয়মিত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। ইসরাইল পদ্ধতিগতভাবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তারা এসব অভিযোগ খ-ন করার মতো কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ইসরাইলী সেনাবাহিনী ও কারা কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

গাজায় ইসরাইলী হামলার পরও যুদ্ধবিরতি কার্যকর আছে ॥ দাবি ট্রাম্পের

এএফপি : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরাইলী বাহিনীর গাজায় প্রাণঘাতী হামলা চালানোর পরও ইসরাইল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর রয়েছে।

গতকাল রোববার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ট্রাম্প। হামাসের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে ফিলিস্তিনী স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটির ‘অবস্থানে’ ইসরাইলী বাহিনী প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।

গতকাল রোববার এয়ারফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর আছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আছে।’ ইসরাইল বলেছে, তারা গতকাল হামাসের অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। এরপর আবার গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে শুরু করেছে। ইসরাইলের অভিযোগ, ইসরাইলী সেনাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে হামাস। এ কারণেই তারা হামাসের অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের সঙ্গে হামাসের নেতৃত্ব জড়িত নয়; বরং ‘কিছু বিদ্রোহী’ দায়ী। ইসরাইল বলেছে, তারা গতকাল হামাসের অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। এরপর আবার গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে শুরু করেছে।

ইসরাইলের অভিযোগ, ইসরাইলী সেনাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে হামাস। এ কারণেই তারা হামাসের অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন উদ্ধারকারী সংস্থা সিভিল ডিফেন্স বলেছে, ইসরাইলী হামলায় অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। ইসরাইলী সেনাবাহিনী বলেছে, হতাহতের খবরগুলো তারা যাচাই করছে। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, তার মধ্যস্থতায় হওয়া এই যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে হামাসের সঙ্গে এটা (যুদ্ধবিরতি) শান্তিপূর্ণভাবে চলবে।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, তারা বেশ বেপরোয়া আচরণ করছে। তারা কিছু গুলিও চালিয়েছে। আর আমরা মনে করি, এতে হয়তো (হামাসের) নেতৃত্ব জড়িত নয়।’ ট্রাম্পের বক্তব্যের আগে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গাজা প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি গাজায় নতুন করে সহিংসতাকে খুব বড় কিছু মনে করছেন না। ভ্যান্স সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধবিরতিতে ‘উত্থান-পতন’ থাকবে।

ভ্যান্স আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটা টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ সুযোগ তৈরি করেছে। তবে এরপরও উত্থান-পতন থাকবে। আর আমাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’

গাজায় দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের অবসানে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছিল হামাস। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচারে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরাইল। দুই বছরের এই যুদ্ধে ইসরাইলী বাহিনীর হাতে ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। গাজার বেশির ভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

ট্রাম্পের বক্তব্যের আগে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গাজা প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি গাজায় নতুন করে সহিংসতাকে খুব বড় কিছু মনে করছেন না। ভ্যান্স সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধবিরতিতে ‘উত্থান-পতন’ থাকবে।

ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বন্দী ও জিম্মি বিনিময়ের রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী রূপরেখাও প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।

হামাসকে নিরস্ত্র করতে ভ্যান্স পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে একটি ‘নিরাপত্তা কাঠামো’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। শান্তিচুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো হামাসকে নিরস্ত্র করা।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘হামাসকে নিরস্ত্র করার জন্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলো এবং আমাদের মিত্ররা এখনো নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি করেনি।’ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইসরাইল সফর করবেন বলে জানিয়েছেন ভ্যান্স। কিন্তু কোন কর্মকর্তা এই সফরে যাবেন, তা তিনি নিশ্চিত করেননি। তবে ভ্যান্স বলেন, ‘আমিও হতে পারি।’

গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় ৯৭ ফিলিস্তিনী নিহত

যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলীদের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ৯৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২৩০ জন। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।

গাজার গণমাধ্যম দপ্তর আরও বলেছে, ইসরাইলীরা এখন পর্যন্ত ৮০ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরাইলের দাবি, এতে ১ হাজার ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় আড়াই শ মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়।

জবাবে ওই দিনই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরাইলী বাহিনী। দুই বছরের হামলায় গাজায় নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা ৬৮ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরাইল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা মেনে যুদ্ধবিরতি কার্যকরও হয়েছে। যুদ্ধবিরতির আওতায় ইসরাইলী বাহিনীর গাজায় অভিযান বন্ধ করার কথা। বিনিময়ে গাজায় জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের (জীবিত ও মৃত) ছেড়ে দেবে হামাস। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের আওতায় জটিল এ প্রক্রিয়া চলছে।

৪৫ জনকে হত্যা করে গাজায় যুদ্ধবিরতি পুনঃকার্যকরের ঘোষণা ইসরাইলের ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণের পর যুদ্ধবিরতি পুনঃকার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে দখলদার ইসরাইল। এর আগে রোববার (১৯ অক্টোবর) দিনভর গাজার বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায় ইসরাইলী সেনারা। এতে অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর টাইমস অব ইসরাইলের।

ইসরাইল জানিয়েছে, হামাসের হামলায় রোববার সকালে রাফাতে তাদের দুই সেনা নিহত ও তিনজন গুরুতর আহত হয়।

যদিও হামাস জানিয়েছে, রাফার সংঘর্ষ সম্পর্কে তারা অবগত নয়। তা সত্ত্বেও দখলদাররা গাজার বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায়।

দিনের শেষদিকে আবারও যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ঘোষণা দিয়ে ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, ‘রাজনৈতিক পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং গাজায় সিরিজ হামলার পর, প্রতিরক্ষা বাহিনী আবারও যুদ্ধবিরতি কার্যকর শুরু করেছে। যা হামাস ভঙ্গ করেছিল।’

গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও দখদলদার বাহিনীর হামলায় অন্তত ৯৭ ফিলিস্তিনী নিহত এবং ২৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার গণমাধ্যম দপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরাইল ৮০ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলী হামলায় কমপক্ষে ৬৮ হাজার ১৫৯ জন ফিলিস্তিনী নিহত এবং এক লাখ ৭০ হাজার ২০৩ জন আহত হয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির মধ্যে এবার গাজায় ইসরাইলের দুই সেনা নিহত

ইসরাইলী সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজায় লড়াই চলাকালে তাদের দুই সেনা নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন-মেজর ইয়ানিভ কুলা (২৬) ও স্টাফ সার্জেন্ট ইতাই ইয়াভেটজ (২১)। রবিবার একাধিক হামলার পর হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তোলে ইসরাইলী সেনাবাহিনী। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। খবরে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এটাই প্রথম ইসরাইলী সেনা হতাহতের ঘটনা।

টাইমস অব ইসরাইল জানায়, ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে গাজায় যুদ্ধবিমান, অন্যান্য আকাশযান ও আর্টিলারি হামলা চালানো হয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল অস্ত্রভা-ার ও ফিলিস্তিনী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ব্যবহৃত সামরিক অবকাঠামো। দেশটির সেনাবাহিনী দাবি করেছে, হামাসের ব্যবহৃত একটি সুড়ঙ্গকেও ১২০টি রকেট দিয়ে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

অন্যদিকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলছে এবং রাফাহ অঞ্চলে কোনো সংঘর্ষের খবর তাদের জানা নেই। বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ‘রাফাহ এলাকায় কোনো সংঘর্ষ বা অভিযানের খবর আমাদের জানা নেই। ওই অঞ্চল বর্তমানে দখলদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ‘রেড জোন’, এবং সেখানে থাকা আমাদের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকেই বিচ্ছিন্ন।’ ইসরাইলী বাহিনী রাফাহে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে হামাস তাদের সেনাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে।