মিডল ইস্ট মনিটর, আল-জাজিরা : তিন বছর বয়সী আহমেদ হুমাম আদওয়ান বেইত হানুন থেকে পালিয়ে পরিবারের সঙ্গে আল-রিমাল এলাকার ‘কায়রো স্কুলে’ আশ্রয় নিয়েছিল। গত ২০ আগস্ট গাজার সেই স্কুলে ইসরাইলী হামলায় সে তার বাঁ হাত হারিয়েছে মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট গাজায় ইসরাইল যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে এ উপত্যকা বিশ্বে এককভাবে জনসংখ্যাপ্রতি সবচেয়ে বেশি অঙ্গচ্ছেদ হওয়া শিশুর ঠিকানা হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধানের বরাতে গত বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আনাদোলু। ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি বলেন, অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় মোট ৪,০০০টির মতো অঙ্গচ্ছেদের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। লাজারিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘শিশুদের ওপর (যুদ্ধের) প্রভাব শুধু শারীরিক আঘাত বা ক্ষুধায় সীমাবদ্ধ নয়। তাদের ক্ষত গভীর ও অদৃশ্য। এর মধ্যে আছে উদ্বেগ, দুঃস্বপ্ন, আক্রমণাত্মক আচরণ, ভয়। অনেক শিশুকে ভিক্ষা, চুরি বা শিশুশ্রমে বাধ্য করা হচ্ছে। এটি এক হারানো শৈশব।’

ইউএনআরডব্লিউএ কমিশনার আরও বলেন, এ অবস্থা যত দীর্ঘ সময় ধরে চলবে, শিশুরা তাদের চলমান ও গভীর ট্রমার ছায়ায় প্রজন্ম ধরে ভুগবে। অন্তত শিশুদের স্বার্থে হলেও গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি। শিশুদের ওপর (যুদ্ধের) প্রভাব শুধু শারীরিক আঘাত বা ক্ষুধায় সীমাবদ্ধ নয়। তাদের ক্ষত গভীর ও অদৃশ্য। এর মধ্যে আছে উদ্বেগ, দুঃস্বপ্ন, আক্রমণাত্মক আচরণ, ভয়। অনেক শিশুকে ভিক্ষা, চুরি বা শিশুশ্রমে বাধ্য করা হচ্ছে। এটি এক হারানো শৈশ জাতিসংঘের তদন্তকারীরা গাজায় ইসরাইল জাতিগত হত্যা চালাচ্ছে বলে সম্প্রতি নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। উপত্যকাটিতে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৪০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নারী ও শিশু।

আমার হাতে যা ছিল তা নিয়েই পালিয়েছি: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় আবারও ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। গতকাল বুধবার ইসরাইলী হামলায় কমপক্ষে ৮৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ। গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরের আল-আহলি স্টেডিয়ামে এক বিমান হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাতজন নারী ও দুটি শিশু। স্টেডিয়ামটি বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। গাজা সিটি থেকে পালিয়ে আসা এক নারী নাজওয়া আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আমার হাতে যা ছিল, তা নিয়েই পালিয়েছি। আমাদের ভয় লাগছে। পরিবহনের খরচ অনেক বেশি, আমাদের পক্ষে বাড়ি থেকে জিনিসপত্র আনা সম্ভব নয়।’

রাতভর তীব্র হামলার পর জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইলী সেনারা গাজা নগরীর সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন’ এবং লাখো মানুষকে দক্ষিণে পালাতে বাধ্য করছেন। তবে ইসরাইলী সেনাপ্রধান আইয়াল জামির দাবি করেন, গাজা সিটির বেশির ভাগ মানুষ নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণে চলে গেছেন এবং সেনারা ‘পদ্ধতিগত ও সুসংগঠিত অগ্রযাত্রা’ অব্যাহত রাখবেন। জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন এ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৬৫ হাজার ৪১৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হামাসের নেতৃত্বে ইসরাইলে হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হওয়ার পর ইসরাইল গাজায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।