ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলী বর্বরতা চলছেই। সেখানে বিগত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭০ জন ফিলিস্তিনী হত্যা করেছে ইসরাইলী সেনারা। এ সময় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৩৮৫ জন। এর মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলা ইসরাইলী আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬১ হাজার ৮৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে আটটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৩৮৫ জন আহত হয়েছে, যার ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের গণহত্যামূলক অভিযানে মোট আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাাজার ৬৬০ জনে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনাহার ও অপুষ্টিতে ১১ জন নতুন মৃত্যুর খবর দিয়েছে, যার মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। এর ফলে দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ২৫১ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১০৮ জন শিশু। আনাদোলু এজেন্সি, দৈনিক হারেৎজ, এক্সে,এএফপি রয়টার্স,টিআরটি ওয়ার্ল্ডএ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক ভুক্তভোগী এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে বা রাস্তায় আটকে আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরাইলী বাহিনী মানবিক সাহায্য নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ২৬ জন নিহত এবং ১৭৫ জন আহত হয়েছে। গত ২৭ মে থেকে ইসরাইলী বাহিনী ১ হাজার ৯২৪ জন ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে এবং ১৪ হাজার ২৮৮ জন আহত হয়েছে।
একজন ইসরাইলীর বদলে ৫০ ফিলিস্তিনীকে মরতে হবে’ : হামাসের ৭ অক্টোবরের এ হামলার জন্য যে কজন ইসরাইলী মারা গিয়েছিলেন, তাদের একজনের বদলে ৫০ ফিলিস্তিনীকে মরতে হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন দখলদার ইসরায়েলের সাবেক সামরিক গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল (অবঃ) আহারোন হালিভা। গণহারে ফিলিস্তিনীদের হত্যার ভয়াবহ কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস করেছে ইসরাইলী সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১২। ওই অডিওতে এই ইসরাইলী সেনা কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, “৭ অক্টোবরের ঘটনায় যত মানুষ মারা গেছে, তাদের প্রত্যেকের বদলে ৫০ ফিলিস্তিনীকে অবশ্যই মরতে হবে।” এই গণহত্যা ‘ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য’ প্রয়োজনীয় বলেও উল্লেখ করেন এ দখলদার। এছাড়া তিনি ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনীদের বাস্তুচ্যুত করার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। ‘ফিলিস্তিনীদের এখন আরেকটি গণ বাস্ত্যচুতি প্রয়োজন এবং ইসরাইলীদের হত্যার মূল্য বোঝা উচিত’ বলে মন্তব্য করেন মেজর জেনারেল আহারোন হালিভা। হামাসের ২০২৩ সালের ‘অপরাশেন আল-আকসা ফ্লাড’ প্রতিহত করতে না পারায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে ২০২৪ সালের এপ্রিলে সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন আহারোন।
গাজার বাসিন্দাদের জন্য সব ধরনের ভ্রমণ ভিসা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক চরম দক্ষিণপন্থী ইনফ্লুয়েন্সারের একের পর এক পোস্টের পর গাজাবাসীদের জন্য সব ধরনের ভ্রমণ ভিসা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত শনিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সীমিতসংখ্যক অস্থায়ী চিকিৎসা-মানবিক ভিসা দেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া ও নীতিমালা ব্যবহার করা হয়েছে, আমরা তার পূর্ণ ও বিস্তারিত পর্যালোচনা করছি। এ সময় গাজার বাসিন্দাদের জন্য সব ভ্রমণ ভিসা বন্ধ থাকবে।’
ইসরাইলজুড়ে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ : ইসরাইলজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। গত শনিবার দেশটির বিভিন্ন শহরে তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা গাজায় আটক ইসরাইলী বন্দিদের মুক্তির জন্য চুক্তি এবং চলমান যুদ্ধের অবসান দাবি করেন। ইসরাইলী জানিয়েছে, জেরুজালেমের প্যারিস স্কয়ার, হাইফার হোরেভ সেন্টার, দক্ষিণের বিয়ারশেবা ও উত্তরের নাহারিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন। এদিন সবচেয়ে বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় তেল আবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে ও রথসচাইল্ড স্ট্রিটের হাবিমা স্কয়ারে। এসব স্থানে গাজার বন্দিদের স্বজনরা বক্তব্য দেন। তারা সরকারকে হামাসের সঙ্গে দ্রুত বন্দি বিনিময় চুক্তি করার আহ্বান জানান। বন্দিদের পরিবার ও ইসরাইলী বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাজনৈতিক কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে আলোচনায় বাধা দিচ্ছেন। তাদের মতে, তিনি বন্দি মুক্তির বদলে নিজের জোট সরকার টিকিয়ে রাখাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে গাজায় প্রায় ৫০ জন ইসরাইলী বন্দি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ইসরাইলী কারাগারে বন্দি আছেন ১০ হাজার ৮০০-এর বেশি ফিলিস্তিনী। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব কারাগারে ব্যাপকভাবে নির্যাতন, খাবার সংকট ও চিকিৎসা অবহেলার কারণে অসংখ্য বন্দি মারা গেছেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ চালিয়ে আসছে ইসরাইলী সেনাবাহিনী। সেখানে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফিলিস্তিনী নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬১ হাজার ৯০০। এরই মধ্যে গত নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। একইসঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও মামলা চলছে।