ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস বুধবার গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলাকে ‘বিপজ্জনক উসকানি’ বলে অভিহিত করে এর নিন্দা জানিয়েছে। গোষ্ঠীটি সতর্ক করেছে যে এই হামলা ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিটিকে বিপন্ন করেছে। হামাস এক বিবৃতিতে লিখেছে আমরা এটিকে একটি বিপজ্জনক উসকানি বলে মনে করি, যার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী (ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী) বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা পুনরায় শুরু করতে চাইছেন। ইসরায়েল বলেছে, হামাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। তবে, এই অভিযোগ গোষ্ঠীটি অস্বীকার করেছে।
গাজায় ৪০ হাজার শিশুকে টিকা দিবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজায় সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির সুযোগে তারা ৪০ হাজারেরও বেশি শিশুকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এর সহযোগীরা ইতোমধ্যে ৯ নভেম্বর শুরু হওয়া প্রথম ধাপের আট দিনে তিন বছরের কম বয়সী ১০ হাজার শিশুকে টিকা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস জানিয়েছেন, প্রথম ধাপের কর্মসূচি শনিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে হাম, মাম্পস, রুবেলা, ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, হুপিং কাশি, হেপাটাইটিস বি, যক্ষ্মা, পোলিও, রোটাভাইরাস ও নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া হবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ পরিচালিত হবে। এ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে ইউনিসেফ, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এবং হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। টেড্রোস বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকায় আমরা উৎসাহিত। এতে গাজায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পুনঃসংস্থান এবং বিধ্বস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমেই গত ১০ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের রক্তক্ষয়ী হামলার জেরে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে ফিলিস্তিনি এই ভূখ- বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। তবে বর্তমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেও সেখানে বেশ কয়েকবার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
সরকারি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই হামলায় ১ হাজার ২২১ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল। নিহতদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ইসরায়েলি সেনাদের পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৫০০’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ এ সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে। মন্ত্রণালয় জানায়, নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু ও নারী। এদিকে গাজা উপত্যকার হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া নড়বড়ে যুদ্ধবিরতির মধ্যেই এ হামলা চালানো হলো। চিকিৎসকরা জানান, গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলীয় শেজাইয়া এলাকায় দু’জন এবং পাশের জেইতুন এলাকায় চারজন নিহত হয়েছেন। আরও এক হামলায় দক্ষিণের খান ইউনুসের পশ্চিমে মাওয়াসি এলাকায় চারজন নিহত হন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, প্রায় ছয় সপ্তাহের এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামাস যোদ্ধারা তাদের সেনাদের ওপর গুলি চালানোর পর গাজাজুড়ে হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর কেউ আহত হয়নি। বারবার গুলিবর্ষণ যুদ্ধবিরতির দুর্বলতা সামনে আনছে। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এই যুদ্ধবিরতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজায় যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনার প্রথম ধাপ। চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য পক্ষ দু’টি একে অপরকে দায়ী করছে।
চিকিৎসক, প্রত্যক্ষদর্শী ও ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, তিনটি হামলাই ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি নিয়ন্ত্রণ এলাকার মধ্যকার সমঝোতাপূর্ণ কথিত ‘হলুদ রেখা’র অনেক বাইরে হয়েছে। জেইতুনে হামলা চালানো হয় মুসলিম ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন ভবনে, আর খান ইউনুসের হামলা হয় জাতিসংঘ পরিচালিত এক ক্লাবে, উভয় স্থানেই বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছিল। গত ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর যুদ্ধবিরতি দুই বছরের গাজা যুদ্ধকে অনেকটা থিতিয়ে দিয়েছে। এতে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি গাজার ধ্বংসস্তূপে ফিরে আসার সুযোগ পেয়েছেন। ইসরায়েল শহুরে অবস্থান থেকে সেনা সরিয়েছে এবং ত্রাণ প্রবাহ বেড়েছে। তবুও সহিংসতা পুরোপুরি থামেনি। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৯০ জন নিহত হয়েছেন। এর প্রায় অর্ধেকই নিহত হয়েছেন গত সপ্তাহে।