ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সম্মতি জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

গত সোমবার গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত ২০ দফা প্রস্তাব প্রকাশ করেন ট্রাম্প। এরপর এতে সম্মতি জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। আনাদুলো, বিবিসি, আল-জাজিরা।

প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আজ আমরা গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রগতির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও পড়বে।

ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি আপনার গাজায় যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনাকে সমর্থন করি, যা আমাদের যুদ্ধের লক্ষ্যগুলো অর্জন করে। এটি আমাদের সব বন্দিকে ইসরাইলে ফেরত আনবে, হামাসের সামরিক সক্ষমতা এবং তার রাজনৈতিক শাসনকে অচল করে দেবে এবং নিশ্চিত করবে যে গাজা আর কখনো ইসরাইলের জন্য হুমকি হবে না।

এখন সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করা হবে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাস এতে সম্মতি জানালে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মি মুক্তি পাবেন।

অপরদিকে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবে। সেখানে আমেরিকান, ইউরোপ ও আরব দেশগুলো নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করা হবে, যেটির মূল দায়িত্বে থাকবেন ট্রাম্প।

এ ছাড়া গাজার মানুষ গাজাতেই থাকবেন। তাদের অন্য কোনো দেশে জোরপূর্বক পাঠানোর চেষ্টা করা হবে না।

হামাসের ইসরাইলী জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুরু হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজা ও হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রকরণ করা হবে। আর এ কাজে সহায়তা করবে আরব দেশগুলো। তারা হামাসকে নিরস্ত্রকরণে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি। এ ছাড়া সুড়ঙ্গসহ হামাসের সব অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে।

গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ৮ মুসলিম দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। ওই সময় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, আরব দেশগুলো যদি হামাস ও গাজাকে নিরস্ত্র করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ইসরাইল এ কাজ করবে। যেটিতে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ সমর্থন দেবে।

হামাসকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, তারা যদি আজকের প্রস্তাব গ্রহণ না করে এবং গ্রহণ করেও যদি আবার এ থেকে সরে যায় অর্থাৎ নিজেদের পুনর্গঠনের চেষ্টা করে তাহলে ইসরাইল তাদের নির্মূলের কাজ শেষ করবে।

ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরাইল হামাসকে নির্মূল করবে। এটি সহজ উপায়ে করা যাবে। আবার কঠিন উপায়ে করা যাবে। তবে এটি করতে হবে। আমরা সহজ উপায়কে প্রাধান্য দেব।’

প্রতিরোধ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ ১১ ইসরাইলী সেনা হতাহত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় উপত্যকাটির প্রতিরোধ বাহিনীর যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২ ইসরাইলী সেনা নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৯ সেনা। গত সোমবার ইসরাইলী গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।

ইসরাইলী গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, উত্তর গাজায় ইসরাইলী সেনাদের লক্ষ্য করে একটি অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। এতে দুই সেনা নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন।

হিব্রু ভাষার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলী বাহিনীর ওপর সমন্বিত হামলা চালানো হয়। এতে কয়েকজন নিহত ও আহত হন।

এ হামলায় একটি ট্যাংক ধ্বংস করা হয় এবং একটি বুলডোজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথম হামলার স্থানে ইসরাইলী উদ্ধারকারী বাহিনী পৌঁছালে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

এর আগে হিব্রু ভাষার গণমাধ্যম গাজা উপত্যকায় একটি গুরুতর ঘটনার খবর জানিয়েছিল।

হিব্রু ভাষার ‘হাদাশোট বাজমান’ চ্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় গাজা সিটির আল-জালা সড়কে একটি গুরুতর ঘটনা ঘটে।

গণমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, আহত সৈন্যদের বহনকারী সামরিক হেলিকপ্টার ইয়াকভ হাসপাতালে অবতরণ করে। কিছু গণমাধ্যমের তথ্যমতে, আহতদের হেলিকপ্টারে সরোকা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

একদিনে আরো ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় অব্যাহত ইসরাইলী হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।এর মধ্য দিয়ে ভূখ-টিতে প্রায় দু’বছর ধরে চলা ইসরাইলী আগ্রাসনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৬৬ হাজার ৫৫ জনে পৌঁছেছে। গত সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলের গণহত্যামূলক অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৬ হাজার ৫৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে আরও ৫০ জনের মরদেহ আনা হয়েছে। এ সময়ে আহত হয়েছেন ১৮৪ জন। এ নিয়ে ইসরাইলী আগ্রাসনে মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪৬ জনে।

মন্ত্রণালয় বলছে, অনেক ভুক্তভোগী এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে আছেন, কিন্তু উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

গত ২৪ ঘণ্টায় মানবিক সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা করার সময় ইসরাইলী সেনাদের গুলীতে আরও পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৮ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে গত ২৭ মে থেকে শুধু ত্রাণ সংগ্রহের সময় প্রাণ হারানো ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৭১ জনে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৮ হাজার ৮১৭ জন।

মন্ত্রণালয় জানায়, গত ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ১৮৭ জন নিহত এবং ৫৬ হাজার ৩০৫ জন আহত হয়েছেন।

এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনা পাইনি : হামাস

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা নিয়ে শান্তি পরিকল্পনা এখনো পায়নি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত সোমবার বার্তা সংস্থাকে এ কথা বলেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনো ট্রাম্পের প্রস্তাব পাইনি। প্রস্তাবটি হাতে পেলে আমরা তা পর্যালোচনা করব এবং তারপরই জবাব জানাব।’

এর আগে গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত ২০ দফা প্রস্তাব প্রকাশ করেন ট্রাম্প। এতে সম্মতি জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রগতির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও পড়বে।

ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি আপনার গাজায় যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনাকে সমর্থন করি, যা আমাদের যুদ্ধের লক্ষ্যগুলো অর্জন করে। এটি আমাদের সব বন্দিকে ইসরাইলে ফেরত আনবে, হামাসের সামরিক সক্ষমতা এবং তার রাজনৈতিক শাসনকে অচল করে দেবে এবং নিশ্চিত করবে যে গাজা আর কখনো ইসরাইলের জন্য হুমকি হবে না।

প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাস এতে সম্মতি জানালে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মি মুক্তি পাবেন।

অপরদিকে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবে। সেখানে আমেরিকান, ইউরোপ ও আরব দেশগুলো নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করা হবে, যেটির মূল দায়িত্বে থাকবেন ট্রাম্প।

এছাড়া গাজার মানুষ গাজাতেই থাকবেন। তাদের অন্য কোনো দেশে জোরপূর্বক পাঠানোর চেষ্টা করা হবে না।

হামাসের ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুরু হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজা ও হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রকরণ করা হবে। আর এ কাজে সহায়তা করবে আরব দেশগুলো। তারা হামাসকে নিরস্ত্রকরণে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গাজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হবেন ট্রাম্প

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফা প্রস্তাব প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে সমর্থন জানিয়েছেন ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে রাজি হয়েছে ইহুদিবাদীরা।

তবে গাজাভিত্তিক স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এখনো প্রস্তাবের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি শুনতে পাচ্ছেন হামাসও এতে রাজি হবে।

আর হামাস এই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইলী জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে।

আর এরপরই হামাসকে গাজার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। এরপর গাজায় গঠিত হবে একটি সরকার বা প্রশাসন। আর এ প্রশাসনের প্রধান হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউজে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে তৈরি এ অন্তর্বর্তী সরকারের নাম হবে ‘দ্য বোর্ড অব পিস’ বা শান্তি প্রশাসন। যেটির প্রধানের দায়িত্বে থাকবেন তিনি৷ ট্রাম্প জানান, আরব ও ইসরাইলীদের অনুরোধেই তিনি এ দায়িত্ব নিচ্ছেন।

ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফার ৯ দফাতেও অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান হিসেবে ট্রাম্প থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গাজা একটি প্রযুক্তিনির্ভর, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী শাসনের অধীনে পরিচালিত হবে। গাজার জনগণের দৈনন্দিন জনসেবা ও পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে তারা। এই কমিটিতে যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এর তদারকি ও নজরদারি করবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক অস্থায়ী প্রতিষ্ঠান ‘পিস বোর্ড’, যার নেতৃত্ব ও সভাপতিত্ব করবেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন এ অন্তর্বর্তী সরকারে অন্য বৈশ্বিক নেতারাও থাকবেন। যার মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নাম রয়েছে। ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ব্রিটিশ সেনাদের ইরাকে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন টনি ব্লেয়ার। এ কারণে তাকে ইরাকের কসাই হিসেবেও অনেকে অভিহিত করে থাকেন।

গাজার নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বব্যাংকের সাথে কাজ করবে। এ ছাড়া তারা ফিলিস্তিনিদের মধ্য থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের বাঁছাই করে পরবর্তীতে গাজায় ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্বাধীন একটি সরকার গঠন করবেন। সঙ্গে গাজায় একটি সুশঙ্খল পুলিশ বাহিনী গঠন করে তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই সরকারের দায়িত্ব থাকবে গাজা ও হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণ করা।

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা এরদোগানের

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।

এক বিবৃতিতে এরদোগান বলেছেন, ‘গাজায় রক্তপাত বন্ধ করে যুদ্ধবিরতি অর্জনের লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টা এবং নেতৃত্বের আমি প্রশংসা করি।’

তিনি বলেন, তুরস্ক কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

তিনি আরও বলেন, আঙ্কারা ‘সকল পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ওয়াশিংটনে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প তার গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো তুলে ধরার পর এ কথা বললেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

এর আগে গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত ২০ দফা প্রস্তাব প্রকাশ করেন ট্রাম্প। এতে সম্মতি জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আজ আমরা গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রগতির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও পড়বে।

ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি আপনার গাজায় যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনাকে সমর্থন করি, যা আমাদের যুদ্ধের লক্ষ্যগুলো অর্জন করে। এটি আমাদের সব বন্দিকে ইসরাইলে ফেরত আনবে, হামাসের সামরিক সক্ষমতা এবং তার রাজনৈতিক শাসনকে অচল করে দেবে এবং নিশ্চিত করবে যে গাজা আর কখনো ইসরাইলের জন্য হুমকি হবে না।

প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাস এতে সম্মতি জানালে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মি মুক্তি পাবেন।

অপরদিকে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবে। সেখানে আমেরিকান, ইউরোপ ও আরব দেশগুলো নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করা হবে, যেটির মূল দায়িত্বে থাকবেন ট্রাম্প।

এছাড়া গাজার মানুষ গাজাতেই থাকবেন। তাদের অন্য কোনো দেশে জোরপূর্বক পাঠানোর চেষ্টা করা হবে না।

হামাসের ইসরাইলী জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুরু হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজা ও হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রকরণ করা হবে। আর এ কাজে সহায়তা করবে আরব দেশগুলো। তারা হামাসকে নিরস্ত্রকরণে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কাতারের কাছে ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু

দোহায় হামাস নেতাদের ওপর চালানো ইসরাইলী হামলায় এক কাতারি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠক চলাকালে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জাসিম আল থানিকে দেওয়া এক ফোন কলে এই ক্ষমা প্রার্থনা করেন ইহুদিবাদী নেতানিয়াহু।তখন কাতারের প্রধানমন্ত্রীও এই ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করেন।

হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়—‘প্রথম ধাপে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গভীর অনুশোচনা প্রকাশ করেন যে, কাতারে হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে এক কাতারি সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। তিনি আরও দুঃখ প্রকাশ করেন যে, জিম্মি মুক্তি আলোচনার সময় হামাস নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু করার মাধ্যমে ইসরাইল কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা আর চালানো হবে না।’

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ ফোনালাপের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি কাতারের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তি রোধে নিশ্চয়তা দিয়েছেন এবং কাতারের সঙ্গে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ‘ফোন কলে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী হামলার জন্য এবং কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন ভবিষ্যতে আর কখনও কাতারের ভূখ-কে লক্ষ্যবস্তু করা হবে না।’

নেতানিয়াহুর অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টেও একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে তিনি কাতারি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি চাই আপনি জানুন যে আমাদের হামলায় আপনার এক নাগরিক নিহত হওয়ায় ইসরাইল অনুতপ্ত। আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে চাই যে, ইসরাইল কাতারিদের নয় বরং হামাসকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। আমি আরও আশ্বস্ত করতে চাই যে, ভবিষ্যতে আপনার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের কোনো পরিকল্পনা নেই ইসরাইলের। আমি প্রেসিডেন্টকে (ডোনাল্ড ট্রাম্প) সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’

৯ সেপ্টেম্বর ইসরাইলের ওই হামলায় অন্তত পাঁচজন নি¤œপদস্থ হামাস সদস্য এবং এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। হামলাটি মূলত সিনিয়র হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল, যারা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। তবে শীর্ষ নেতারা এ হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস দোহায় এই হামলাকে কাতারের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখ-তার ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে নিন্দা জানান। হামলার কয়েক দিন পর দোহায় প্রায় ৬০টি মুসলিম দেশ একত্র হয়ে কাতারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।