আল-জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি : গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান জোরদার এবং পূর্ণমাত্রার স্থল অভিযান শুরু করায় হতাশা প্রকাশ করেছে রাশিয়া। গত মঙ্গলবার মস্কোয় এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এ মন্তব্য করেন। তিনি জানান, গাজায় রকেট ও বোমা হামলার মাত্রা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে বেসামরিক প্রাণহানিও বেড়েছে।
জাখারোভা বলেন, গত তিন দিনে গাজার বিভিন্ন অংশে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জন্য নির্ধারিত স্থান ও সামাজিক অবকাঠামোতে চালানো হামলায় প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছেন। ইসরাইলী কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ, যা অনিবার্যভাবে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ও নতুন ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গাজা পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান কেবল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পথে সম্ভব।
তিনি বলেন, এর জন্য পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে এবং গাজা উপত্যকার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা পুনরায় চালু করতে হবে। পাশাপাশি, ফিলিস্তিন সমস্যার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইনি ভিত্তিতে একটি ন্যায্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরুর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। জাখারোভা জানান, এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে রাশিয়া তার অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশেষ করে জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এদিকে, ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৩,৫৭৩ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরাইল আবার গাজায় হামলা শুরু করে, এরপর থেকে নতুন করে ৩,৪২৭ জন নিহত এবং ৯,৬৪৭ জন আহত হয়েছেন। গত নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলাও চলছে।
ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরাইলী বিক্ষোভকারীরা : গাজায় ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ ঠেকাতে ইসরাইলের কারেম আবু সালেম সীমান্ত ক্রসিংয়ে জড়ো হয়েছেন একদল ইসরাইলী বিক্ষোভকারী। দেশটির গণমাধ্যম ‘আরুতস শেভা’ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোর পথ আটকে দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের একজন রেউত বেন হাইম বলেন, ‘গাজায় ত্রাণ পাঠানো এক অকল্পনীয় অবিচার। হামাস এখনো আমাদের পণবন্দিদের আটকে রেখেছে। আমরা চুপচাপ বসে থাকতে পারি না।’ এরপর তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
আরেকজন বিক্ষোভকারী আসরিয়েল ম্যাকলেভ বলেন, ‘গাজায় কোনো রকম সাহায্য পাঠানো জাতীয় আত্মহত্যার সমান।’ তিনি ঘোষণা করেন, এ উন্মাদনা ঠেকাতে প্রতি সপ্তাহে আমরা শত শত রিজার্ভ সেনা নিয়ে এখানে আসব। প্রতিটি ট্রাক এ যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে। যতক্ষণ না সব পণবন্দি মুক্ত হয়, ততক্ষণ কোনো সাহায্য নয়। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো খাদ্যসহায়তা প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরাইল। মঙ্গলবার কেবল হাতে গোনা কিছু ট্রাকই সেখানে পৌঁছেছে। এবার সেসব ট্রাকও আটকে দিচ্ছে উগ্রপন্থি ইসরাইলী বিক্ষোভকারীরা।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করছে, ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে ইসরাইল অনাহারকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে, ফলে প্রায় ৫ লাখ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। এদিকে গাজায় আজ বুধবার ভোর থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ৪২ জন ফিলিস্তিনীকে হামলা করে হত্যা করেছে ইসরাইল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, এ পর্যন্ত উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৫৭৩ জন। আর আহত হয়েছেন এক লাখ ২১ হাজার ৬৮৮ ফিলিস্তিনী। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।