ফ্রান্স ও সৌদি আরব গতকাল সোমবার ফিলিস্তিনে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে সমর্থন জোগাড়ের লক্ষ্যে এক বহুজাতিক সম্মেলনের আয়োজন করছেন। অন্তত কয়েক ডজন দেশের নেতারা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। আশা করা হচ্ছে, এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবেন। তবে এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, রোববার যুক্তরাজ্য, কানাডা, পর্তুগাল ও অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আরও ছয়টি দেশ সোমবার একই কাজ করবে বলে ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বনেতাদের ভাষণের আগেই এসব ঘোষণা আসতে পারে।
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া ১৫০টি জাতিসংঘ সদস্য দেশের তালিকায় এবার যুক্ত হচ্ছে ৬ দেশ। বেলজিয়াম, ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা এবং সম্ভবত নিউজিল্যান্ড ও লিচেনস্টাইন। এই দেশগুলো গতকাল সোমবার জাতিসংঘের বিশেষ এক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ঘোষণা দেয়ার কথা।
ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের কারণে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের ম্লান হয়ে যাওয়া প্রচেষ্টাকে পুনরুজ্জীবিত করতেই এই সম্মেলনের আয়োজন। এর মধ্যে কিছু দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ইহুদিদের নতুন বছরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আগেভাগেই তাদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই সম্মেলনে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করছে ফ্রান্স ও সৌদি আরব। তবে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান এতে যোগ দিচ্ছেন না। বিপরীতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র এ সম্মেলন বর্জন করছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। তিনি এ আয়োজনকে ‘সার্কাস’ আখ্যা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করি না এটি কোনোভাবে সহায়ক। বরং আমরা মনে করি এটি সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করছে।
অপরদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এসব স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জাতিসংঘ থেকে দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই ইসরাইল সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পশ্চিম তীরের একটি অংশ দখল (সংযুক্ত) করার দাবি তুলেছেন।
সৌদি আরব সতর্ক করেছে যে, পশ্চিম তীর দখল করা হলে এর ‘গুরুতর প্রভাব’ পড়বে। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতও বলেছে, দখলকরণ হবে একটি ‘বিপৎসীমা।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র স্বীকৃতিগুলোকে ‘লোক দেখানো’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এএফপিকে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের মনোযোগ সিরিয়াস কূটনীতির ওপর, কেবল দেখানোর জন্য গৃহীত পদক্ষেপে নয়। আমাদের অগ্রাধিকার স্পষ্ট—জিম্মিদের মুক্তি, ইসরাইলের নিরাপত্তা এবং গোটা অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধি, যা কেবল হামাসমুক্ত অবস্থাতেই সম্ভব।
মার্কিন প্রশাসন আরও সতর্ক করেছে, যারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে ফ্রান্সও রয়েছে, যার প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নিউইয়র্কে আয়োজিত সম্মেলনের আয়োজক। ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তেল আবিব প্যারিসের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কিছু পাল্টা ব্যবস্থা বিবেচনা করছে।
ফিলিস্তিনকে প্রভাবশালী ৪ দেশের স্বীকৃতি স্বাগত বাংলাদেশের
স্টাফ রিপোর্টার : প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলে, এই স্বীকৃতি চূড়ান্ত স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে একটি পদক্ষেপ। তবে ফিলিস্তিনের জনগণকে আরও পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
গত রোববার যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা যেহেতু সবসময় ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলাম, তাদের জনগণকে সমর্থন করে এসেছি, কাজেই চার দেশের স্বীকৃতিকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি এটা একটা সুখবর। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে দেড়শোর বেশি দেশের প্রত্যক্ষ সমর্থন পেল স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিরা।
উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের আরেক প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশ ফ্রান্স শিগগিরই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছে। এটি হলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে চারটিরই স্বীকৃতি পাবে ফিলিস্তিন। কানাডা-যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ১৫১ দেশের প্রত্যক্ষ সমর্থন পেলেন স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিরা।