আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স : গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখ-টিতে গত রোববার মানবিক সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে ৯৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এদিকে গাজা যুদ্ধের বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পোপ লিও চতুর্দশ। একই সঙ্গে তিনি শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানায়, গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছানোর পর ৮০ জন নিহত হন। আর দক্ষিণে রাফার কাছে একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর এক দিন আগে এই এলাকায় বহু মানুষ নিহত হন।
সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বার্তা সংস্থাকে বলেন, উপত্যকার দক্ষিণের খান ইউনিসের আরেকটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে আরও ৪ জন নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, তাদের খাদ্য বহনকারী ২৫টি ট্রাকের একটি বহর গাজা সিটির কাছে পৌঁছালে বিপুলসংখ্যক ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় লেগে যায়। এই ভিড়ের মধ্যে গুলি চালানো হয়।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী নিহতের সংখ্যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তারা বলেছে, গাজা সিটির কাছে হাজারো মানুষ জড়ো হলে সেনারা ‘তাৎক্ষণিক হুমকি প্রতিহত করতে’ সতর্কতামূলক গুলি চালান।
গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র সংকটের কারণে মানুষ ত্রাণকেন্দ্রগুলোয় ভিড় করছেন। আর সেখানেই ইসরাইলি গুলিতে প্রাণহানি ঘটছে।
জাতিসংঘের হিসাবে, গত মে মাসের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জন ত্রাণপ্রত্যাশী নিহত হয়েছেন।
এদিকে গাজায় বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ও অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর মরিচের গুঁড়া ছুড়েছেন ইসরাইলি সেনারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
আল-জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা সানাদ ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে। এতে দেখা গেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফা শহরের শাকুশ এলাকায় ইসরাইলি সেনারা মরিচের গুঁড়ার স্প্রে ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করছেন।
মুঠোফোনে ভিডিওটি ১০ জুলাই ধারণ করা হয়। শনিবার রাতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, তিনজন সশস্ত্র ইসরাইলি সেনা ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের ওপর মরিচের গুঁড়া ছুড়ছেন।
ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা সানাদ ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে। এতে দেখা গেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফা শহরের শাকুশ এলাকায় ইসরাইলি সেনারা মরিচের গুঁড়ার স্প্রে ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করছেন।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, পুরুষ, নারী ও শিশুরা চারদিকে ছুটে পালিয়ে যাচ্ছেন। কারও মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা। কেউ আবার পিঠে ময়দার বস্তা তুলে নিয়ে আতঙ্কে ছুটে যাচ্ছেন।
গাজার বাসিন্দা মাহমুদ মোকাইমার বলেন, তিনিও অন্য মানুষদের সঙ্গে জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন। ইসরাইলি সেনারা প্রথমে সতর্কতামূলক গুলি ছোড়েন। এরপর সরাসরি গুলি চালান।
মা-বাবারা জানেন, জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রে গেলে গুলিতে মারা পড়তে পারেন, তবুও যান। কারণ, না গেলে তাঁদের শিশুদের না খেয়ে থাকতে হয়। বাজারে কিছুই কেনার মতো অবস্থা নেই, সবকিছুর দাম খুব বেশি। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে মোকাইমার বলেন, ‘দখলদার বাহিনী আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।’মোকাইমার বলেন, তিনি অন্তত তিনজনের নিথর দেহ মাটিতে পড়ে থাকতে ও আহত বহু মানুষকে দৌড়ে পালাতে দেখেছেন।
গাজার দেইর আল-বালাহ শহর থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খোদারি বলেন, ইসরাইল যদি গাজায় আর কোনো খাবার ঢুকতে না দেয়, তাহলে ফিলিস্তিনিদের সামনে খাবারের জন্য জীবন ঝুঁকিতে ফেলা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।
হিন্দ খোদারি আরও বলেন, মা–বাবারা জানেন, জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রে গেলে গুলিতে মারা পড়তে পারেন, তবুও যান। কারণ, না গেলে তাঁদের শিশুদের না খেয়ে থাকতে হয়। বাজারে কিছুই কেনার মতো অবস্থা নেই, সবকিছুর দাম খুব বেশি।
গত রোববার গাজা নগরীর আল-আকসা মারটায়ার হাসপাতালের একটি সূত্র আল-জাজিরাকে বলেছেন, রাজান আবু জাহের নামের চার বছর বয়সী এক শিশু অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে মারা গেছে।
গাজার অনেক জায়গায় শিশু, এমনকি নবজাতকেরাও না খেয়ে মারা যাচ্ছে।
রোববার গাজা নগরীর আল-আকসা মারটায়ার হাসপাতালের একটি সূত্র আল–জাজিরাকে বলেছেন, রাজান আবু জাহের নামের চার বছর বয়সী এক শিশু অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে মারা গেছে।
শনিবার আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক বলেছেন, সেখানে দুজন ফিলিস্তিনি অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৩৫ দিন বয়সী এক
শিশুও আছে।