গাজা উপত্যকায় ইসরাইলী আগ্রাসন অব্যাহত থাকায় আরও একটি রক্তক্ষয়ী দিন দেখলো সেখানকার মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলী হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪২২ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলী হামলার পর থেকে এই আগ্রাসন চলছেই। আনাদুলো।

উদ্ধারকারী দলগুলো সতর্ক করেছে যে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, ভারী বোমা হামলা এবং বেসামরিক অবকাঠামো ভেঙে পড়ার কারণে অনেক হতাহত এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে বা দুর্গম এলাকায় আটকা পড়ে আছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬,৫০০ জনে, এবং আহত হয়েছেন ১,৩৩,৪১৯ জন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ বছরের ১৮ মার্চ থেকে গাজায় তাদের আগ্রাসন পুনরায় শুরু করে, তখন থেকে ৬,১৭৫ জন নিহত এবং ২১,৩৭৮ জন আহত হয়েছেন।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে মানবিক সহায়তা চাইতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনিরাও রয়েছেন।

নতুন করে উত্তেজনা বাড়িয়ে ইসরাইলী দখলদার বাহিনী উত্তর গাজার ১৭টি এলাকায় উচ্ছেদের হুমকি দিয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসিতে চলে যেতে বলা হয়েছে, যা ইতোমধ্যেই জনাকীর্ণ এবং অবরুদ্ধ একটি এলাকা। লক্ষ্যবস্তু হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে আল-সাবরা, যা মধ্য গাজা শহরের একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।

এই এলাকাটিকে এর আগে তেল আল-হাওয়া জেলার কাছে একটি অস্থায়ী নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন এটিও বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে, যা বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য অবশিষ্ট সামান্য জায়গাকেও আরও সংকুচিত করছে।

আল মায়াদিনের একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন যে এই উচ্ছেদের নির্দেশ কার্যকরভাবে “নিরাপদ অঞ্চল” এর ধারণা কেড়ে নিচ্ছে এবং গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোথাও নিরাপত্তা খুঁজে পাওয়া যে ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠছে, তা আরও স্পষ্ট করে তুলছে।

গাজা যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইলের ওপর চাপ দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের জন্য ইসরাইলের কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমারকে চাপে ফেলতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলী গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে। ডারমার বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন।

এদিকে টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রধান জটিলতা হলো হামাসের স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি এবং ইসরাইলের এমন এক চুক্তি করার চেষ্টা, যেখানে যুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হলেও পরে পুনরায় শুরু করার সুযোগ থাকবে।

হারেৎজ পত্রিকা হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রন ডারমারকে গাজায় হামলা বন্ধ করা এবং বন্দি ইসরাইলীদের ফেরানোর বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতে চাপ দেবেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানাবেন, ইসরাইলের ‘হামাস নির্মূলের’ পরিকল্পনাটি ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে।

ইসরাইলের পত্রিকা ইয়েদিয়োথ আহরোনোথ জানিয়েছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন, গাজায় ইসরাইলি জিম্মিদের উদ্ধারের বিষয়টিই এখন প্রধান লক্ষ্য, যা আগের ‘হামাস ধ্বংসের’ বক্তব্য থেকে অগ্রাধিকারের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এ পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গাজা যুদ্ধ বন্ধে এবং বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে একটি সমঝোতার দিকে যেতে তাগিদ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যাতে অব্যাহত যুদ্ধের কারণে সংকট আরও ঘনীভূত না হয়।