আলজাজিরা, রয়টার্স , এপি : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ‘জয়’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই যুদ্ধের মাধ্যমে আমেরিকার মুখে কঠিন থাপ্পড় মেরেছে ইরান। গত বৃহস্পতিবার ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পর এই প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন ৮৬ বছর বয়সী খামেনি।

ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে খামেনি বলেন, আমেরিকা কেবল এই কারণে হস্তক্ষেপ করেছিল যে তারা বুঝতে পেরেছিল, যদি হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে জায়নিস্ট শাসনব্যবস্থা (ইসরায়েল) সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে তার দাবি, এই যুদ্ধে আমেরিকা কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র বিজয়ী হয়েছে এবং প্রতিশোধ হিসেবে আমেরিকাকে চপেটাঘাত করেছে ইরান। তার এই মন্তব্য, সম্ভবত সোমবার কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দিকে ইঙ্গিত করে। উল্লেখ্য, খামেনির সর্বশেষ প্রকাশ্য উপস্থিতি ছিল গত ১৯ জুন। এরপর প্রায় এক সপ্তাহ তিনি প্রকাশ্যে আসেননি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর এই প্রথম তিনি প্রকাশ্যে এসেই ভিডিও বার্তা নিজের প্রতিক্রিয়া জানালেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এই ঘোষণা দেন। খামেনি লিখেছেন, মিথ্যাবাদী জায়নবাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য আমি অভিনন্দন জানাই। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুদিন পর খামেনি এই মন্তব্য করলেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। সর্বশেষ তিনি ১৮ জুন অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিভিশনে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। খামেনির এই বার্তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। সেখানে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন হামলার প্রভাব নিয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ আপডেট’ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, সংবাদ সম্মেলনটি হবে অখ- প্রমাণে ভরপুর। হেগসেথের সঙ্গে পেন্টাগনের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন।

এর আগে, ন্যাটো সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে হেগসেথ দাবি করেছিলেন, মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব হামলা কেবল কয়েক মাসের জন্য ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। মূল যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি এখনও অক্ষত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ না করলে ইসরাইল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেত : ইরান-ইসরাইল সংঘাতে ইসরাইলকে ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘প্রায় খাদের কিনারায়’ নিয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ না করলে ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলত। গত বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে খামেনি বলেন, “ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েলকে খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়েছিল। যদি আরও কিছুদিন এই সংঘাত চলত তাহলে ইসরায়েল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতো।” এ ব্যাপারটি বুঝতে পেরেই যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে প্রবেশ করে; কিন্তু এই সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্র কিছুই অর্জন করতে পারেনি। উপরন্তু ইসলামিক রিপাবলিক গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুখে শক্ত চপোটাঘাত করেছে।” “সেই সঙ্গে এত সব হৈচৈ-হট্টগোলের মধ্যে জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠী ইসলামি প্রজানন্ত্র ইরানের আঘাতে একই সঙ্গে উৎখাত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে।”

ইরান পরমাণু বোমা তৈরির দোরগোড়ায় অভিযোগ তুলে গত ১৩ জুন রাজধানী তেহরান ও অন্যান্য এলাকায় বিমান অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। এই অভিযানের জবাবে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা শুরু করে ইরানও। ইরান-ইসরায়েলের এ সংঘাত শুরুর ১০ দিন পর ২২ জুন মধ্যরাতে ইসরায়েলের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় মার্কিন বিমান বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ড এ অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘দ্য মিডনাইট হ্যামার’।‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ পরিচালনার একদিন পর ইরান-ইসরায়েলে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টা পর তা মেনে নিয়ে বিবৃতি দেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। তিনি বলেন, ইরান যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে এবং ইসরায়েল পুনরায় হামলা না করলে তেহরান আর সংঘাতে যাবে না।