মিডল ইস্ট আই, এএফপি,রয়টার্স, ইউএন ওয়েবসাইট: গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি অভিযান সম্প্রসারণের সম্ভাবনাকে গভীর উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। গত মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এ কথা বলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকা।

ইসরায়েলি পরিকল্পনার তথ্য সত্য হলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে আশঙ্কা প্রকাশ করে জেনকা বলেন, গাজায় আটক থাকা বাকি পণবন্দীদের জীবন আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। অভিযান সম্প্রসারণের আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে খুবই স্পষ্ট আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে।

গাজাকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গাজায় প্রায় দু বছর ধরে চলমান যুদ্ধ নিয়ে নয়া কৌশল প্রণয়নের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বৈঠকে পুরো গাজা দখলের পক্ষে নেতানিয়াহু অবস্থান নিয়েছেন বলে একাধিক সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়। সম্ভাব্য পরিকল্পনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের চীনের উপ স্থায়ী প্রতিনিধি গেং শুয়াং। তিনি বলেন, সম্ভাব্য বিপজ্জনক সব পদক্ষেপ স্থগিত রাখতে আমরা ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানাই। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে প্রভাবশালী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার জন্যও আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে, জাতিসংঘ বৈঠকের আগে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার বলেছেন, ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যারা কথিত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে (ভার্চুয়াল প্যালেস্টিনিয়ান স্টেট) স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে, তারাই মূলত যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করা এবং জিম্মিমুক্তির চুক্তি নস্যাতের জন্য দায়ী। শিল্পোন্নত সাত দেশের সংগঠন গ্রুপ সেভেনের (জি-৭) ফ্রান্স, কানাডা এবং ব্রিটেন আগামী সেপ্টেম্বরে সাধারণ পরিষদ বৈঠকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ভেঙে পড়েছে বলে মনে করেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিউ রাইট পার্টির এই নেতা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গতকাল তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও কট্টর ডানপন্থী লিকুদ পার্টির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, তাঁরা ইসরায়েলকে ‘বর্জনীয়’ রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন।

বেনেটের মতে, নেতানিয়াহুর সরকারের কার্যক্রমের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষ আরও বাড়ছে। নেতানিয়াহু সরকার ইসরায়েলের পক্ষে প্রচার চালানোর কাজটিও ঠিকভাবে করছে না বলে মনে করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসিসহ কয়েকটি শহরে ১০ দিন কাটানোর পর এসব মন্তব্য করেন বেনেট। সাবেক এ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নানা সমস্যা, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকটের জন্য এখন ইহুদিদের দোষারোপ করা হচ্ছে। দুই পক্ষের রাজনীতিবিদেরাই এ দোষারোপ করছেন। বেনেটের দাবি, তিনি তাঁর জীবনে কখনো এমন ভয়াবহ মাত্রার ইহুদিবিদ্বেষের ঢেউ দেখেননি। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দুই দলেরই সমর্থন হারাচ্ছে ইসরায়েল। বেনেটের দাবি ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ আন্দোলনের অনেক সদস্য ইসরায়েল থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। এ ছাড়া গাজায় ফিলিস্তিনিদের চলমান অনাহারের কারণে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর পক্ষেও ইসরায়েলকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য উপাত্তও বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি নিয়ে বেনেটের মূল্যায়ন সঠিক।

গ্যালাপের একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ মার্কিন নাগরিক গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে সমর্থন জানাচ্ছেন। যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১০ শতাংশ কম। ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত করা ওই জরিপের তথ্য বলছে, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ৬০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক। ৫২ শতাংশ মার্কিন নাগরিক নেতানিয়াহুকে নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, যা দেড় বছর আগের তুলনায় অনেক বড় পরিবর্তন। গ্যালাপ বলছে, এর আগে ১৯৯০-এর দশক থেকে চালানো বিভিন্ন জনমত জরিপে নেতানিয়াহুর প্রতি এতটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়নি। তারা বলেছে, ক্রমাগত ভাবমূর্তির অবনতি হচ্ছে।

বেনেট মনে করেন, ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণ গাজার যুদ্ধ নয়; বরং দেশের প্রচারণার কাজ ঠিকমতো না হওয়া।

বেনেট বলেন, ‘আমার মনে হয় সরকার এখনো বিপর্যয়ের মাত্রাটা বুঝতে পারেনি। আর সে কারণে দুই বছর হয়ে গেলেও আমরা কোনো তথ্যকেন্দ্র করতে পারিনি, আমাদের কাছে উত্তর নেই, কিছুই নেই। আমাদের বন্ধুরা তথ্য চাইছেন, সত্য জানতে চাইছেন, জবাব চাইছেন; কিন্তু আমরা কিছু বলতে পারছি না। তাঁরা তো জানেন না কাকে ফোন করবেন।’

নেতানিয়াহুর দপ্তরের কর্মকর্তাদেরও আক্রমণ করেছেন বেনেট। তাঁর অভিযোগ, নেতানিয়াহুর দপ্তরে তথ্যসংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা কাতার থেকে অর্থ নিচ্ছেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নেতানিয়াহুর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে উঠে আসে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে কাতারের কর্মকর্তাদের যোগাযোগ রয়েছে। ওই দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ, মানি লন্ডারিং, ঘুষ গ্রহণ, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়।