ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামলা জোরদার করেছে দখলদার ইসরাইলী বাহিনী। গত রোববার ভোরে গাজা সিটির সাবরা এলাকায় ইসরাইলী বিমান হামলায় একই পরিবারের ২৫ সদস্য নিহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এখনও প্রায় ৫০ জন মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকতে পারেন।
আল জাজিরা বলছে, উদ্ধারকারী এবং সাধারণ মানুষ খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে বেঁচে থাকা মানুষদের বের করার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
আটকা পড়াদের পরিবারগুলো জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে এখনও শোনা যাচ্ছে আত্মীয়স্বজনের আর্তনাদ।
এক স্বজন আকুতি জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা বারবার তাদের চিৎকার শুনছি, কিন্তু পৌঁছাতে পারছি না। আমরা ও উদ্ধারকারী যতবারই চেষ্টা করি ততবারই আমাদের লক্ষ্য করে ইসরাইলী ড্রোন গুলি ছোড়ে। পাঁচজন এগোলে চারজন নিহত হন, একজন কোনো রকমে বেঁচে যান।’
গাজা সিটির পশ্চিমে শাতি শরণার্থী শিবির, দক্ষিণ-পশ্চিমে তাল আল-হাওয়া এলাকা এবং নাসর জেলায় ল্যাভাল টাওয়ারের পাশের একটি বাড়িতেও ভয়াবহ হামলার খবর পাওয়া গেছে। মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে আরও একটি হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হন, যাদের মধ্যে চার শিশু রয়েছে।
ফিলিস্তিনী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলী হামলায় অন্তত ৬৫ হাজার ২৮৩ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ। এছাড়া অনাহার ও দুর্ভিক্ষে এখন পর্যন্ত ৪৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৪৭ শিশু।
ইসরাইলকে সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান হামাসের
যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার স্বাধীন ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। একইসঙ্গে ইসরাইলকে সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং দেশটির সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রতিরোধ গোষ্ঠীটি।
গত রোববার এক বিবৃতিতে হামাস পশ্চিমাবিশ্বের এ স্বীকৃতিকে ফিলিস্তিনী জনগণের ভূমি ও পবিত্র স্থানের প্রতি অধিকার এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষার পথে একটি বড় মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছে, যার রাজধানী হবে আল-কুদস (জেরুজালেম)।
সংগঠনটি এই স্বীকৃতিকে ‘জনগণের সংগ্রাম, অটলতা ও আত্মত্যাগের প্রাপ্য ফল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
হামাস জোর দিয়ে বলেছে, এই স্বীকৃতি অবশ্যই বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিপূর্ণ হতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে গাজা উপত্যকায় চলমান নৃশংস গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করা এবং পশ্চিম তীর ও আল-কুদসের দখল ও ইহুদিকরণ পরিকল্পনার মোকাবিলা করা।
বিবৃতিতে হামাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের প্রতি ইসরাইলকে বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে দখলদার রাষ্ট্রকে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বাড়ানোরও আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়া ইসরাইলী নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের জবাবদিহির দাবি জানিয়েছে হামাস।
বিবৃতিতে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতিমালা অমান্য করার তীব্র সমালোচনা এবং ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে ‘ভয়াবহ অপরাধের’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সংগঠনটি আবারও বলেছে, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত একটি স্বাভাবিক অধিকার। তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনী জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং আল-কুদসকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সমর্থন দিতে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পর্তুগাল। ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশ সামনের কয়েকদিনের মধ্যে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।