আনাদোলু: ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেছেন, দখলদার ইসরাইলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরসহ তেল আবিবের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছেন- মজলুম ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন, গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের চলমান গণহত্যার প্রতিবাদ, আল-আকসা মসজিদে হাজার হাজার ইহুদিবাদীর আক্রমণ ও অবমাননার প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করেছে। প্রথম অভিযানটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফিলিস্তিন-২’ দিয়ে ‘বেন গুরিয়ন’ বিমানবন্দরে চালানো হয়েছে। দ্বিতীয় অভিযান চালানো হয়েছে তেল আবিবের পূর্ব অংশে। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘জুলফিকার’ দিয়ে তেল আবিবের পূর্ব অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের ইসলামী জিহাদ আন্দোলনের সামরিক শাখা ‘আল-কুদস ব্রিগেডস’ ঘোষণা করেছে, তারা পূর্ব গাজা শহরের শুজাইয়া এলাকায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের একটি গোপন সামরিক আস্তানা উড়িয়ে দিয়েছে। আল-কুদস ব্রিগেডস আরও জানিয়েছে, এই বিস্ফোরণের ফলে সেখানে থাকা সব ইসরাইলি সেনা হতাহত হয়েছেন।

গাজা শহরের আস-সাফতাভি এলাকায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ওসামা আল-আরাবিদের বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। এর ফলে আটজন শহীদ এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এই সূত্রটি বলছে- এই হামলায় সাংবাদিকের পরিবারের সকল সদস্য শহীদ হয়েছেন। এছাড়া, গাজা উপত্যকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত দেইর আল-বালাহ শহরে বিমান হামলায় বেশ কয়েকজন শহীদ বা আহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিস শহরের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত মা’আন শহরটিও দখলদার বাহিনীর বোমা হামলা থেকে রেহাই পায়নি।

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন শত শত ইসরাইলী সেনা কর্মকর্তা: গাজায় ইহুদিবাদীদের গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর শত শত অফিসার গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ইহুদিবাদী সরকার এবং তাদের প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছেন। তারা এই যুদ্ধকে একটি রাজনৈতিক সংঘাত হিসাবে বর্ণনা করে বলেছেন, এই যুদ্ধ ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করবে না। রিজার্ভ বাহিনী এবং বিভিন্ন সামরিক ইউনিটের সক্রিয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রায় ১,২০০ স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই চিঠিতে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং সমস্ত বন্দীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইসবাইলের সামনে ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন, হুথির হুঁশিয়ারি : যুদ্ধের আগুন যখন ইয়েমেনের আকাশে দাউ দাউ করে জ্বলছে, তখন হুথি বিদ্রোহীরা ইসবাইলকে এক ‘হট সামারের’ দুঃস্বপ্নের হুমকি দিয়ে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়িয়েছে। গত বুধবার সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসরাইলী বিমান হামলায় তীব্র ক্ষোভ আর প্রতিশোধের আগুন নিয়ে হুথির শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা মাহদি আল-মাশাত ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর হুঙ্কার দেন, আমরা পিছু হটব না, আত্মসমর্পণও করব না। গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি আমাদের সমর্থন অটুট থাকবে।

ইসবাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মাহদি আল-মাশাত হুঁশিয়ারি দেন, ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র ইসবাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে সক্ষম। আশ্রয়কেন্দ্রেও কেউ নিরাপদ থাকবে না। এমনকি বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের ফ্লাইটও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইয়েমেনে ইসবাইলের এটি ছিল দশম হামলা। এর আগে সিমেন্ট কারখানা, জ্বালানি অবকাঠামো ও বন্দর এলাকাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে ইসরাইলী বাহিনী। এই হামলাগুলো ইয়েমেনের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার এক সুদূরপ্রসারী কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ইসবাইলের এই হামলাগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে খোদ ইসবাইলের অভ্যন্তরীণ মহলে সমালোচনা বাড়ছে। দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এই হামলাগুলো হুথিকে দমাতে পারেনি বরং তাদের প্রতিশোধের আগুনকে আরও উসকে দিয়েছে।

এরই মধ্যে হুথি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য জানানো হয়েছে। তারা দাবি করেছে, মে মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ইসবাইলের বিরুদ্ধে ২২টি হামলা করেছে। তাদের মতে, এটি ছিল ইসবাইলের জন্য সবচেয়ে বেদনাদায়ক মাস। এই উত্তেজনার মধ্যে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। ইয়েমেনের এই সংঘাত শুধু ইসবাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং ইরান-সৌদি আরব এবং আঞ্চলিক ক্ষমতা প্রদর্শনের এক বৃহত্তর খেলার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।