রয়টার্স : ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। গত রোববার রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নেওয়ার এক ফাঁকে বৈঠক করেন তারা। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সহায়তার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে মস্কো। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা এ খবর জানিয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত মাসে ইরানের ওপর ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তত্ত্বাবধানে থাকা পরমাণু শক্তি স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ল্যাভরভ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ল্যাভরভ জোর দিয়ে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো বিষয় কেবল কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান করতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মস্কো পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্টের পূর্বে উত্থাপিত সংশ্লিষ্ট উদ্যোগগুলোও রয়েছে।

গত মাসে ১২ দিনের সংঘাত চলাকালে আরাঘচি মস্কো সফর করেছিলেন এবং এ বিষয়ে তখন বিস্তারিত আলোচনা হয়।

ইরান বরাবরই অস্বীকার করে আসছে যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো অভিপ্রায় রাখে। রাশিয়া ইরানের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় রাখে। যদিও পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নেই, তারপরও তারা বলছে, তেহরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তি কর্মসূচির অধিকার রয়েছে।

রাশিয়া বলেছে, তারা ইরান, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান সংকটে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে ইরানি ইউরেনিয়াম মজুদ করে রাখার প্রস্তাবও দিয়েছে।

শত্রুর যেকোনো পরিকল্পনা মোকাবিলায় প্রস্তুত ইরানের সশস্ত্র বাহিনী

ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম সাফাভি বলেছেন, শত্রুর যেকোনো পরিকল্পনার জবাব দিতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

মহররম উপলক্ষে আয়োজিত এক শোকানুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সাফাভি বলেন, ‘ইহুদিবাদীরা জানে আমাদের নৌবাহিনী ও কুদস ফোর্সের মতো কিছু বাহিনী তাদের সঙ্গে এখনো সরাসরি যুদ্ধে অংশই নেয়নি। এমনকি সেনাবাহিনীর মূল ইউনিটগুলোও এখনো ময়দানে নামেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে কয়েক হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তৈরি করেছি এবং সেগুলোর সংরক্ষণস্থল পুরোপুরি নিরাপদ।’

সাফাভি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির একজন সামরিক উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৩ জুন ইরানে সামরিক, পারমাণবিক ও আবাসিক এলাকায় টানা ১২ দিন ধরে আগ্রাসন চালায় বর্বর ইসরাইলী বাহিনী। ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র এই আগ্রাসনে সরাসরি যুক্ত হয়ে ইরানের নাতাঞ্জ, ফোরদো ও ইসফাহানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

এই হামলার পাল্টা জবাবে ইরানি সামরিক বাহিনী দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অ্যারোস্পেস ফোর্স ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি-এর অংশ হিসেবে ইসরাইলের দখলকৃত ভূখ-জুড়ে ২২ দফা পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় ইসরাইলী শহরগুলো।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী কাতারের আল-উদেইদ মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এটি পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি। ২৪ জুন থেকে কার্যকর হওয়া একটি যুদ্ধবিরতির ফলে বর্তমানে লড়াই বন্ধ রয়েছে।