ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সাধারণ মানুষের জন্য ৯০০ টন খাবার নিয়ে তুরস্কের একটি বিশাল জাহাজ মিসরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার জাহাজটি দেশটির দক্ষিণ মার্সিন আন্তর্জাতিক বন্দর থেকে মিসরের আল আরিস বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তুরস্কের বিপর্যয় এবং জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) এই ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। তাদের সহায়তা করছে মিসরীয় রেড ক্রিসেন্ট এবং ১৭টি এনজিও। আনাদোলু, সিএনএন, রয়টার্স

এই ৯০০ টন খাবার মিসর হয়ে গাজা-ইসরাইলের কারিম আবু সালেম ক্রসিং দিয়ে গাজায় প্রবেশ করবে। এবারের জাহাজে করে নেওয়া হয়েছে রেডি টু ইট খাবার, কৌটাজাত খাবার এবং শিশুদের ফর্মুলা। বন্দরে জাহাজটিকে বিদায় জানাতে আসেন তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকিয়া। তিনি বলেন, আজ (মঙ্গলবার) আরেকটি জাহাজ গাজার দিকে যাচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও দখলদার ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে দখলদার ইসরাইল। এরপর সেখানে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তারা। এতে করে মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েন। তা সত্ত্বেও গাজার মানুষের জন্য খাবার পাঠানো অব্যাহত রেখেছিল তুরস্ক। দেশটি এখন পর্যন্ত ১৭টি জাহাজ এবং ১৪টি বিমানে করে গাজার জন্য খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছে।

এদিকে গাজায় ইসরাইলী হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুই লাখের বেশি মানুষ।

গাজায় ফের অভিযান চালাতে পারে ইসরাইল: ট্রাম্প

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মানতে ব্যর্থ হয়, তবে ইসরাইলকে নতুন করে গাজায় অভিযান চালাতে দেওয়া হবে। এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, আমি বললেই ইসরাইল রাস্তায় নেমে পড়বে। তার মতে, যদি হামাস তার যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তগুলো বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়, তবে তিনি ইসরাইলকে গাজায় আবার সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি দিতে পারেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও বলেন, হামাস নিয়ে যা ঘটছে, তা খুব দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। যদি হামাস নিরস্ত্র হতে অস্বীকার করে তাহলে কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি বললেই ইসরাইল আবার রাস্তায় ফিরে যাবে। ইসরাইল যদি চায়, তারা ওদের একেবারে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমি-ই ওদের (ইসরায়েলকে) এখন পর্যন্ত থামিয়ে রেখেছি।

ট্রাম্প জানান, জীবিত ২০ জন ইসরাইলী বন্দির মুক্তিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে হামাসকে অবশ্যই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিহত অন্যদের মরদেহ ফেরত দিতে হবে এবং অস্ত্র জমা দিতে হবে। এদিকে হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডস এক বিবৃতিতে জানায়, আমরা চুক্তি অনুযায়ী সব জীবিত বন্দিকে হস্তান্তর করেছি, পাশাপাশি যেসব মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, সেগুলোও দিয়েছি। হামাস জানায়, বাকি মরদেহগুলো উদ্ধার করতে বিশেষ সরঞ্জাম ও দীর্ঘ প্রচেষ্টা প্রয়োজন এবং তারা এই কাজ সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

এর আগে গত সপ্তাহে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর তার প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরাইল ও হামাস একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এই পরিকল্পনায় গাজায় যুদ্ধবিরতি, সব ইসরাইলী বন্দির মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময় এবং ধীরে ধীরে ইসরাইলী বাহিনীর প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।

এরপর গত শুক্রবার থেকে ওই চুক্তির প্রথম ধাপ কার্যকর হয়। এতে হামাস ২০ জন জীবিত ইসরাইলী বন্দি ও ৮ জনের মরদেহ হস্তান্তর করে, বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনী বন্দি মুক্তি পায়।

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে গাজায় হামাসবিহীন একটি নতুন প্রশাসনিক কাঠামো গঠন, আন্তর্জাতিক যৌথ বাহিনী মোতায়েন এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলী হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৭ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। দীর্ঘ এই হামলায় একসময়ের প্রাণবন্ত এই উপত্যকা এখন প্রায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

আরও দুই ইসরাইলী জিম্মির মরদেহ ফেরত দিল হামাস

আরও দুই ইসরাইলী জিম্মির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ওই দুই মরদেহ ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলে ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।

ইসরাইলী সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত বুধবার আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রস গাজা উপত্যকা থেকে হামাসের ফেরত দেওয়া আরও দুই জিম্মির মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। ইসরাইলী জিম্মি হিসেবে চিহ্নিত করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ওই মরদেহগুলো হস্তান্তর করেছে।

গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী পাঠানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখ-ে আন্তর্জাতিক বাহিনী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। উপত্যকাটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে ইতোমধ্যেই এই বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন দেশটির দুই জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা।

মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্যোগে সহায়তা দেবে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই দুই জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা গত বুধবার এক ব্রিফিংয়ে জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা গাজা পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে একটি স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী গঠন। এই বাহিনীকে সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ ২০০ সেনা মোতায়েনের সম্মতি দিয়েছে, তবে তারা সরাসরি গাজায় প্রবেশ করবে না।