ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলী বর্বরতা চলছেই। মাত্র ১ দিনে দখলদার বহিনীর হামলায় আরও ৯১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিফা হাসপাতালের পরিচালক ড. আবু সালমিয়ার পরিবারের ৫ সদস্যও রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, শনিবার ১ দিনেই ইসরাইলী বাহিনীর হামলায় অন্তত ৯১ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। আল জাজিরা।
ইসরাইলী সেনারা গাজা সিটি দখল করতে এবং সেখানকার মানুষের দক্ষিণের তথাকথিত ‘কনসেন্ট্রেশন জোনে’ ঠেলে দিতে আকাশ ও স্থল হামলা চালাচ্ছে। শনিবারের হামলায় বসতবাড়ি, স্কুলে তৈরি আশ্রয়কেন্দ্র, বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু এবং পালিয়ে আসা লোকজন বহনকারী ট্রাককে নিশানা করা হয়। শুধু এসব হামলাতেই নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৬ জন। এদিনই গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফার পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু সালমিয়ার পারিবারিক বাড়ি বোমায় ধ্বংস হয়েছে। এতে তার ভাই, ভাবি ও তাদের সন্তানসহ অন্তত পাঁচজন মারা যান। আবু সালমিয়া বলেন, ‘আমি জরুরি বিভাগে ডিউটি করছিলাম। হঠাৎ আমার ভাই ও তার স্ত্রীর মরদেহ সামনে আসে। এখন আর কিছুই অবিশ্বাস্য নয় প্রিয়জনেরা হয়তো শহীদ হয়ে যাচ্ছে, নয়তো আহত হয়ে আসছে।’ হামাস এ হামলাকে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি চিকিৎসকদের গাজা ছাড়তে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে চালানো এক ‘রক্তাক্ত সন্ত্রাসী বার্তা’। তাদের দাবি, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলী বাহিনী ১ হাজার ৭০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যা করেছে এবং ৪০০ জনকে আটক করেছে। এদিকে শহরের নাসর এলাকায় আরেকটি হামলায় একটি ট্রাকের ওপর ইসরাইলী ড্রোন আঘাত হানে, এতে অন্তত চারজন নিহত হন। তাদের রক্তাক্ত মরদেহ রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ছিল। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, গত আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজার প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এর আগে সেখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করত। ইসরাইলী সেনারা শুধু গত দুই সপ্তাহেই অন্তত ২০টি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে।
যেভাবে বন্ধ হতে পারে গাজার গণহত্যা
জানালেন জেসিন্ডা আরডার্ন
দ্য গার্ডিয়ান : নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন চলমান গণহত্যা থামানোর একটি পথ এখনো আছে। আরডার্ন লিখেছেন, ফিলিস্তিনকে আরও বেশি দেশ স্বীকৃতি দিলে সেই পথ সুগম হবে। পাশাপাশি যেকোনো সামরিক অভিযানে সহযোগিতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, গাজায় অবরুদ্ধ ও অনাহারগ্রস্ত মানুষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে হবে। একই সঙ্গে আহত, অপুষ্টিতে ভোগা মানুষ এবং অন্তঃসত্ত্বা ও সদ্য মা হওয়া নারীদের জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা জরুরি।
আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আরডার্ন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে জলবায়ু সংকটজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগÑ সব মানবিক বিপর্যয়ে শক্তিধর দেশগুলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে আমাদের শুরুটা গাজা থেকেই করা উচিত। তিনি আরও বলেন, আমরা মানবিক সংকটে ভরা এক বিশ্বে বাস করছি। কিন্তু কেবল সংখ্যার দোহাই দিয়ে মানুষকে অমানবিক করে তোলা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।
জেসিন্ডা আরডার্ন চার বছরের বেশি সময় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় তার নেতৃত্ব বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়। তিনি ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে এ পর্যন্ত ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। হামলার কারণে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তীব্র খাদ্য সংকটে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪৭ জন শিশু।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার
মামলায় যোগ দিল ব্রাজিল
আল জাজিরা : নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়েছে ব্রাজিল। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, ইসরাইল ফিলিস্তিনের গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে গণহত্যামূলক কর্মকা- চালাচ্ছে। জাতিসংঘের যে কোনো সদস্য রাষ্ট্র চুক্তির ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে হস্তক্ষেপ করতে পারে, যদি তারা ওই চুক্তির পক্ষভুক্ত হয়। এ অধিকার ব্যবহার করে ব্রাজিল আইসিজের ৬৩ নম্বর অনুচ্ছেদের মাধ্যমে মামলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জুলাই মাসে জানিয়েছিল, তারা মামলায় যুক্ত হবে কারণ গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলের আগ্রাসনের পেছনে বিচারহীনতা আন্তর্জাতিক আইনের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
এখন ব্রাজিল স্পেন, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো, তুরস্কসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, যারা দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কর্মকা-ের অভিযোগে মামলায় হস্তক্ষেপ করেছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় এই যুদ্ধে ৬৫,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।