যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে অন্তত ৯১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৫ জন শিশু রয়েছে। গাজা সিভিল ডিফেন্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলার বেশিরভাগ লক্ষ্যবস্তু ছিল ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের ঘরবাড়ি ও তাঁবু। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ এই হামলাগুলোতে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে, যা চলমান সংঘাতের গভীর মানবিক বিপর্যয়কে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। রয়টার্স, আল জাজিরা।
গাজার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মহল থেকে ফিলিস্তিনী নাগরিকদের সুরক্ষায় ইসরাইলের ওপর হস্তক্ষেপের আহ্বান ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এক সৈন্য নিহত হওয়ার পর ইসরাইল ‘প্রতিশোধ নিয়েছে’। তবে তিনি দাবি করেন যে, এতে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি কোনোভাবেই বিপন্ন হবে না’। একই সঙ্গে, হামাসকে ‘ভদ্র আচরণ করতে হবে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গাজায় সর্বশেষ এই হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নির্দেশে। সম্প্রতি রাফাহ এলাকায় গুলিবিনিময়ের পর তিনি ‘শক্তিশালী’ হামলার নির্দেশ দেন।
ইসরাইলী সামরিক বাহিনী পরে জানায়, ওই ঘটনায় তাদের এক সৈন্য নিহত হয়েছে। এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া আগ্রাসনে ইসরাইল এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে এবং ১,৭০,৩৯৫ জনকে আহত করেছে। এদিকে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডস ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। এতইসঙ্গে নিখোঁজ এক বন্দির লাশ হস্তান্তরও স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে হামাস। একইসঙ্গে তারা সতর্ক করেছে, ইসরাইলের পক্ষ থেকে বড়সড় কোনও উস্কানি দেওয়া হলে গাজায় মৃতদেহ উদ্ধারের কার্যক্রম ব্যাহত হবে এবং বাকী ১৩ জন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার বিলম্বিত হবে।
অবশ্য ইসরাইলী এই হামলা সত্ত্বেও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স দাবি করেছেন, যুদ্ধবিরতি এখনও টিকে আছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ছোটখাটো সংঘর্ষ হতে পারে। আমরা জানি গাজায় কেউ একজন (ইসরাইলী) সৈন্যকে আঘাত করেছে। আমরা আশা করি ইসরাইল জবাব দেবে, তবুও আমি মনে করি শান্তি স্থিতিশীল থাকবে।” এদিকে রাফাহতে সংঘটিত ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে হামাস। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ইসরাইল এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৪ জন ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে এবং মানুষকে জরুরি ত্রাণ পৌঁছানোও কঠোরভাবে সীমিত রাখা হচ্ছে। হামাস এক বিবৃতিতে ইসরাইলের সর্বশেষ এই হামলাকে যুদ্ধবিরতির “স্পষ্ট লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করে আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানিয়েছে এবং বলেছে, তারা চুক্তি মেনে চলছে। হামাস নেতা সুহাইল আল-হিন্দি আল জাজিরাকে বলেছেন, লাশ উদ্ধারে তাদের কিছু অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে এবং বাকি মরদেহ উদ্ধারে যে বিলম্ব হচ্ছে সেটির দায়ও ইসরাইলের ওপরই বর্তায়।
এদিকে গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত একশ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে গাজার চিকিৎসা সূত্র। নিহতের মধ্যে ৩৫ জনই শিশু। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরাইলী বাহিনীর গাজায় হামলা চালানোর পরও ইসরাইল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকদের ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সমর্থিত যে যুদ্ধবিরতি রয়েছে তা ঝুঁকির মধ্যে নেই। যদিও, একই সময়ে, ইসরাইলের বিমান হামলা গাজাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ইসরাইল ও হামাস উভয় পক্ষ একে অপরকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ করছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরাইলের আঘাতে কমপক্ষে ১০০ জন নিহত হয়েছে। কেন্দ্রীয় গাজা অঞ্চলের বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়ি লক্ষ্য করে চালানো হামলায় পাঁচজন নিহত হয়। গাজা শহরের সাবরা এলাকায় একটি ভবনে চারজন নিহত এবং খান ইউনিসে একটি গাড়িতে হামলায় পাঁচজন মারা গেছে। সাংবাদিকদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘যেমনটা আমি বুঝছি, তারা এক ইসরাইলী সৈন্যকে হত্যা করেছে। সুতরাং ইসরাইলীরা পাল্টা আঘাত করেছে এবং তাদের পাল্টা আঘাত করা উচিত। যখন এমন কিছু ঘটে, তারা পাল্টা আঘাত করবেই।’
ট্রাম্প বলেছেন, ‘কিছুই যুদ্ধবিরতিকে বিপন্ন করবে না। আপনাদের বুঝতে হবে, হামাস মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির এক ক্ষুদ্র অংশ, তাদের ভদ্র আচরণ করতে হবে।’ ইসরাইলী সামরিক বাহিনী বুধবার ওই সৈন্যের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। তবে হামলার বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গেই কোনও মন্তব্য করেনি তারা। এর আগে নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল যে, তিনি তাৎক্ষণিক ‘শক্তিশালী হামলার’ নির্দেশ দিয়েছেন।
এক ইসরাইলী সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে। কারণ তারা সেই এলাকায় অবস্থানরত ইসরাইলী সেনাকে আক্রমণ করেছে, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হলুদ রেখা বা নির্ধারিত সীমারেখার লঙ্ঘন। তবে রাফাহ শহরে ইসরাইলী সেনা হত্যার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে যে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।