সংগ্রাম ডেস্ক : যুদ্ধবিধ্বস্ত অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জুলাই মাসে শুধুমাত্র অনাহারেই মারা গেছেন অন্তত ৪৮ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত না খেতে পেয়ে মোট ৫৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। বর্বর ইসরাইলী বাহিনীর অব্যাহত হামলা, সীমিত ত্রাণ সরবরাহ এবং কৃষি জমির বড় অংশকে ‘মিলিটারি জোন’ ঘোষণা করার ফলে গাজাবাসী এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। ওসিএইচএ, মেহের নিউজ, বিবিসি, রয়র্টাস।

খাদ্যের তীব্র সংকট ও দৈনন্দিন সংগ্রাম : গাজার অধিবাসীরা জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম খাবারটুকুও পাচ্ছে না। রাইদ আল-আথামনা, যিনি একসময় বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য গাড়ি চালাতেন, ডয়চে ভেলেকে ফোনে জানিয়েছেন তার প্রতিদিনের সংগ্রাম। ইসরাইল বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশ করতে না দেওয়ায় তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

তিনি জানান, সারাদিন একটি কথা ভাবতে ভাবতেই কেটে যায়, আজ কী খাবো, কী খাওয়াবো পরিবারকে? আথামনা বলেন, গাজায় রুটির অভাব, সামান্য আটাটুকুও ভয়ংকর দামে কিনতে হচ্ছে। গতকাল স্ত্রী ও বাচ্চাদের জন্য কিছুটা ডাল কিনতে পারলেও, আগামীকাল কী খাবেন তা তিনি জানেন না। আথামনা জানিয়েছেন, সারাদিন ধরে কোথাও না কোথাও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। হয় শেলিং হচ্ছে, অথবা বিমান থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে। মানুষ এক জায়গায় নিশ্চিন্তে আশ্রয় নিতে পারছেন না। সারাক্ষণ প্রাণের ভয়। তার ওপর খাবার নেই। বহু মানুষ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে এমন বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। আথামনার কথায়, আমি নিজে দেখেছি, কীভাবে মানুষ রাস্তার ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছে।

গত মে মাসে শেষবার আথামনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের। সে সময় তিন মাসের ব্লকেড শেষ করে ইসরাইল গাজায় ত্রাণের ট্রাক ঢুকতে দিয়েছিল। গাজার ২০ লাখ মানুষ এর ফলে বেঁচে যাবেন বলে সে সময় মনে হয়েছিল আথামনার। কিন্তু দুই মাস পর সেই অভিমত বদলে গেছে তার। তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সত্যিই শোচনীয়। এক টুকরো রুটির জন্যও লড়াই করতে হচ্ছে। আমি আমার নাতিনাতনিদের নিয়ে থাকছি। তারা সারাক্ষণ কাঁদছে খিদের জ্বালায়। কীভাবে ওদের মুখে একটু খাবার তুলে দেবো, সেই চিন্তাতেই প্রতিটি দিন কাটছে

আন্তর্জাতিক সংস্থার সতর্কবার্তা : আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য এবং ত্রাণ বিষয়ক সংস্থাগুলো নিয়মিত গাজা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করছে। তারা জানিয়েছে, গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের। সেখানে খাবার, ওষুধ পৌঁছাচ্ছে না। গাজার ৮৮ শতাংশ অঞ্চল এখন মিলিটারি জোন বা সেনার জায়গা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর অধিকাংশই কৃষিজমি। সাধারণ মানুষ ঘর বাড়ি ছেড়ে অত্যন্ত কম জায়গার মধ্যে ত্রাণ শিবিরে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতেও শান্তি নেই, ত্রাণ শিবির থেকেও তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও-র প্রধান জানিয়েছেন, গাজায় মানুষের তৈরি দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মানুষ খেতে পাচ্ছে না। এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে।' ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের কর্মকর্তা রস স্মিথ জানিয়েছেন, গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ একাধিক দিন না খেয়ে থাকছেন। এমনই রিপোর্ট তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে নারী এবং শিশুও আছে। এরই মধ্যে হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, জুলাই মাসে না খেতে পেয়ে অন্তত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৫ সালের গোড়া থেকে ধরলে সংখ্যাটি ৫৯-এ পৌঁছেছে। যত দিন যাচ্ছে, সংখ্যাটি তত বাড়ছে।

না খেতে পেয়ে গাজায় অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে মানুষ: জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম খাবারটুকুও পাচ্ছেন না ফিলিস্তিনের গাজাবাসী। খুব কম পরিমাণে ত্রাণ ঢুকছে সেখানে। যা সকলের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। বোমারু বিমানের হামলা বন্ধ হয়নি। প্রতিদিন গাজাজুড়ে কোথাও না কোথাও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। হামলায় এখনো আহত হচ্ছেন, নিহত হচ্ছেন বহু মানুষ। তারই মধ্যে মিলছে না খাবার। কারণ, খুব কম পরিমাণে ত্রাণের ট্রাক ঢুকতে দিচ্ছে ইসরাইল। যেটুকু খাবার ঢুকছে, তা গাজাবাসীর জন্য যথেষ্ট নয়।

রাইদ আল-আথামনা নামে গাজার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, “সারাদিন একটি কথা ভাবতে ভাবতেই কেটে যায়, আজ কী খাবো, কী খাওয়াবো পরিবারকে?” এক সময় বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য গাজায় গাড়ি চালাতেন তিনি। ইসরাইল বিদেশি সাংবাদিকদের আর গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না, ফলে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কাজ নেই আথামনার।

ফোনে তিনি জানিয়েছেন, “আমাদের এখানে কোনো খাবার নেই। রুটি নেই, সামান্য আটাটুকুও কিনতে পারছি না। যদি বা আটা পাওয়া যায়, তার ভয়ংকর দাম। আজ স্ত্রী এবং বাচ্চাদের জন্য একটু ডাল কিনতে পেরেছি। কিন্তু কাল ওরা কী খাবে, জানি না।” আথামনা জানিয়েছেন, সারা দিন ধরে কোথাও না কোথাও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। হয় শেলিং হচ্ছে, অথবা বিমান থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে। মানুষ এক জায়গায় নিশ্চিন্তে আশ্রয় নিতে পারছেন না। সারাক্ষণ প্রাণের ভয়। তার ওপর খাবার নেই। বহু মানুষ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। সামাজিকমাধ্যমে এমন বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

আথামনার কথায়, “আমি নিজে দেখেছি, কীভাবে মানুষ রাস্তার ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছে।” গত মে মাসে শেষবার আথামনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল ডিডাব্লিউয়ের। সে সময় তিন মাসের ব্লকেড শেষ করে ইসরাইল গাজায় ত্রাণের ট্রাক ঢুকতে দিয়েছিল। গাজার ২০ লাখ মানুষ এর ফলে বেঁচে যাবেন বলে সে সময় মনে হয়েছিল আথামনার। কিন্তু মাসদুয়েক পর সেই অভিমত বদলে গেছে তার। তিনি জানিয়েছেন, “পরিস্থিতি সত্যিই শোচনীয়। এক টুকরো রুটির জন্যও লড়াই করতে হচ্ছে। আমি আমার নাতি-নাতনিদের নিয়ে থাকছি। তারা সারাক্ষণ কাঁদছে খিদের জ্বালায়। কীভাবে ওদের মুখে একটু খাবার তুলে দেবো, সেই চিন্তাতেই প্রতিটি দিন কাটছে।” আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য এবং ত্রাণবিষয়ক সংস্থাগুলো নিয়মিত গাজা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করছে। তারা জানিয়েছে, গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত চিন্তার। সেখানে খাবার, ওষুধ পৌছাচ্ছে না।

জাতিসংঘের সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজার ৮৮ শতাংশ অঞ্চল এখন মিলিটারি জোন বা সেনার জায়গা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর অধিকাংশই কৃষিজমি। সাধারণ মানুষ ঘর বাড়ি ছেড়ে অত্যন্ত কম জায়গার মধ্যে ত্রাণ শিবিরে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতেও শান্তি নেই, ত্রাণ শিবির থেকেও তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও’র প্রধান জানিয়েছেন, “গাজায় মানুষের তৈরি দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মানুষ খেতে পাচ্ছে না। এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে।”

ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের কর্মকর্তা রস স্মিথ জানিয়েছেন, গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ একাধিক দিন না খেয়ে থাকছেন। এমনই রিপোর্ট তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে নারী এবং শিশুও আছেন। এরই মধ্যে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জুলাই মাসে না খেতে পেয়ে অন্তত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৫ সালের গোড়া থেকে ধরলে সংখ্যাটি ৫৯ জনে পৌঁছেছে। যত দিন যাচ্ছে, সংখ্যাটি তত বাড়ছে।

পশ্চিমা সম্মতিতে গাজাবাসীকে অনাহারে রাখে ইসরাইল: ইরান গাজায় ইসরাইলের অবরোধ ও পশ্চিমা অস্ত্রের মাধ্যমে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসমাইল বাঘাই লেখেন, ‘ইসরাইল পশ্চিমা অস্ত্র দিয়ে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে, পশ্চিমা সম্মতিতে অনাহারে রাখে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো এবং পশ্চিমা মদদে জবাবদিহিতা এড়িয়ে যায়। ’তিনি লেখেন, ‘ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর কোনো ফাঁকা কথা নয়। আর কোনো দ্বিমুখী মানদ- নয়। গাজার নিরীহ মানুষকে অনাহার এবং গণহত্যা থেকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব।’

তিনি আরও লেখেন, ‘পাশাবিক ইসরাইলী অপরাধীদের লাগাম টেনে ধরতে হবে এবং তাদের নৃশংস ও জঘন্য অপরাধের বিচার করতে হবে।’ সবশেষ বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলী হামলায় একদিনে আরও ৮৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৪৫৩ মানুষ, এর ফলে ভূখ-টিতে ইসরাইলের গণহত্যামূলক অভিযানে নিহতের সংখ্যা ৫৯ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়েই এক হাজার ৮৩ জন নিহত এবং ৭ হাজার ২৭৫ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে ইসরাইলী সেনাবাহিনী। এতে করে জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি ভেঙে যায়। এরপর থেকে আরও ৮ হাজার ৪৪৭ জন নিহত এবং ৩১ হাজার ৪৫৭ জন আহত হয়েছেন।

পশ্চিম তীরের সংযুক্তিতে ইসরাইলে প্রস্তাব পাস॥ নিন্দা ইরানের: পশ্চিম তীর দখল এবং দখলকৃত ভূখ-ে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের আহ্বান জানিয়ে নেসেটে ইসরাইলী সরকারের প্রস্তাব পাসের নিন্দা জানিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গাজায় চলমান গণহত্যা এবং পশ্চিম তীরে নিয়মতান্ত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে মিলে যাওয়া এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনকে একটি ভূমি, জাতি এবং স্বাধীন পরিচয় হিসেবে মুছে ফেলার জন্য সরকারের নিরলস প্রচেষ্টাকে প্রকাশ করে। ইহুদিবাদী সরকার তার নৃশংস এজেন্ডায় কোনো সীমানা স্বীকার করে না, জাতিসংঘের প্রস্তাব এবং আন্তর্জাতিক আইনকে স্পষ্টভাবে উপেক্ষা করে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সব জাতি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করার এবং দখলদারিত্ব ও বর্ণবাদ থেকে তাদের মুক্ত করার জন্য তাদের আইনি, নৈতিক এবং রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।’ ইরান আরও সতর্ক করে বলছে যে, গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষ্ক্রিয়তা কেবল শাসকগোষ্ঠীর নৃশংসতাকে আরও উৎসাহিত করবে এবং সমগ্র অঞ্চলে এর আইনহীন আগ্রাসনকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।