আনাদোলু, এজেন্সি হারেৎজ : গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসনে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। এটি এ উপত্যকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশের সমান। হারেৎজের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজার স্বাস্থ্য বলছে, গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরাইলী হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলী হামলায় সরাসরি নিহত হওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষ পরোক্ষ কারণেও প্রাণ হারিয়েছেন, যেমন অনাহার, ঠান্ডা ও রোগে ভুগে। যুদ্ধের কারণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের হোলোওয়ে কলেজের অর্থনীতিবিদ ও সহিংস সংঘাতে মৃত্যুর বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষক অধ্যাপক মাইকেল স্পাগাটের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ইসরাইলী মুখপাত্র, সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালীরা সাধারণত তাচ্ছিল্য প্রকাশ বা এগুলো অতিরঞ্জিত বলে দাবি করেন। তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ক্রমবর্ধমান একটি অংশ বলছেন, এ তালিকাটি শুধু নির্ভরযোগ্যই নয়; বরং বাস্তবতার তুলনায় হয়তো অনেকটাই রক্ষণশীলও। গবেষণাটিতে গাজার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে ২ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালানো হয়। এর ভিত্তিতে জানা গেছে, চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৭৫ হাজার ২০০ মানুষের সহিংস মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই ইসরাইলী হামলায় নিহত হন। জরিপ অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু।

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা সহায়তা

কার্যক্রম মানুষ হত্যা করছে

---- গুতেরেস

গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সহায়তা কার্যক্রমকে প্রকৃতিগতভাবেই অনিরাপদ বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে সোজাসাপ্টা মূল্যায়নে গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটি মানুষ হত্যা করছে।’ ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র চায়, জাতিসংঘ যেন নতুন বিতর্কিত এই সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে কাজ করে। কিন্তু জাতিসংঘ এতে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং এই বিতরণ পদ্ধতিকে সহায়তার সামরিকীকরণ এবং বাস্তুচ্যুতি জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। সাংবাদিকদের গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘ-নেতৃত্বাধীন মানবিক প্রচেষ্টা বর্তমানে ‘শ্বাসরুদ্ধ’ অবস্থায় রয়েছে। সহায়তা কর্মীরাও অনাহারে ভুগছেন এবং দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের সহায়তা প্রবেশ ও বিতরণে সম্মতি ও সহযোগিতা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ কেবল নিজেদের ও পরিবারের জন্য খাবারের খোঁজ করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে। খাদ্য খোঁজার চেষ্টা কখনোই মৃত্যুদ- হতে পারে না।’ এখনই সময় গাজায় একটি রাজনৈতিক সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পথ খুঁজে বের করার।’

ইসরায়েল গত ১৯ মে ১১ সপ্তাহের সহায়তা অবরোধ তুলে নেয় এবং সীমিত জাতিসংঘ সহায়তা আবার চালু হয়। জাতিসংঘ বলছে, এরপর থেকে মার্কিন সমর্থিত সহায়তা কার্যক্রম এবং জাতিসংঘের ত্রাণ নিতে গিয়ে চারশোর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এদের বেশিরভাগই মার্কিন সমর্থিত কার্যত্রমের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে পৌঁছাতে গিয়ে মারা গেছেন। গত শুক্রবার গুতেরেসের বক্তব্যের জবাবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কখনও বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করে না, এবং জাতিসংঘকে সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। এই সহায়তা কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি নিরাপত্তা ও লজিস্টিক কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সংস্থাটি ২৬ মে গাজায় কার্যক্রম শুরু করে। এখন পর্যন্ত তারা ৪৮ মিলিয়নের বেশি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে বলে দাবি করেছে।